চট্টগ্রাম বন্দর-সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হোক
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুবিধা ব্যবহার করেই প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য পণ্য ওঠানামা করানো সম্ভব_ বন্দরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কমোডর এমএন ইসলামের এমন অভিমত বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখায়।
এ প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে জাতীয় আয় অনেক বেড়ে যেতে পারে_ এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত কম। এজন্য বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, এমন তথ্য চেয়ারম্যান দিয়েছেন। বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে দরপত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জেটি ও বহির্নোঙরে নিরাপত্তা জোরদারের সংকল্প তিনি ব্যক্ত করেছেন। এ কাজে সফলতা আসুক, এটাই কাম্য। আমরা চাইব প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তিতে যেন মিল থাকে। বন্দরের সেবার মান হ্রাস, ঘুষ-দুর্নীতি ও শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত জেটি এলাকা থেকে আমদানি ও রফতানি পণ্য উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পুরনো। শ্রমিক অসন্তোষ তো এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছিল যে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। বন্দর ব্যবহারকারীরা এটাও বলছেন যে, জরুরি আইন বলবৎ থাকাকালে বন্দরের কর্মসংস্কৃতি ছিল অনেকটা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। মহাজোট সরকারের প্রথম বছরটিতে তার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে; কিন্তু অনেকটা আকস্মিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল অরাজক অবস্থা। শ্রমিকদের আন্দোলনে যৌক্তিকতা ছিল না। ঘুষ-দুর্নীতি-বকশিশ বেড়ে যায়। কনটেইনার থেকে মাল উধাও হয়ে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতারা বাংলাদেশি পার্টিকে চড়া হারে জরিমানা করতে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে_ এটাই স্বাভাবিক। দেশের ব্যবসায়ীরা বন্দরের কার্যক্রমে হতাশা ব্যক্ত করলে আশপাশের দেশগুলোর জন্য সেটা শুভ বার্তা হবে না। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এবং নেপাল, ভুটান ছাড়াও বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে চলা চীন চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা ব্যবহারে আগ্রহী। আমাদের এ সম্ভাবনার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের সুবিধা বাড়ানোর জন্যও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ কারিগরি উন্নয়নের পাশাপাশি বিরাজমান অন্যান্য সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হবে, এটাই প্রত্যাশিত। সরকারের তরফেও দরকার পূর্ণ সহায়তা। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া থাকবেই এবং তাদের কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে এটা বছরের পর বছর ঘটছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা আশা করব, উপযুক্ত পর্যায়ে দ্রুত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানের সময় এখন প্রায় সাড়ে তিন দিন। এটা ৪৮ ঘণ্টায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ৬ মাস আগে। কিন্তু সে কাজে লক্ষণীয় অগ্রগতি নেই। দেশবাসী একটি কর্মচঞ্চল বন্দর দেখতে চায়। এটা আপনা আপনি ঘটবে না। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং তাদের সব পর্যায়ের কর্মীদল, আমদানি ও রফতানিকারক এবং রাজনৈতিক মহলসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকা চাই। বাংলাদেশ একটি সবল অর্থনীতির ভিত সৃষ্টির প্রত্যাশায়। আর এ লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য নির্ধারিত হয়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
No comments