‘এতো শীত হামরা দেখি নাই বাহে’- তিস্তাপারের মানুষের চরম দুর্ভোগ ॥ সারাদেশে আরও ১৩ জনের মৃত্যু
তীব্র শীতে নীলফামারীর ডিমলার তিস্তাপারের নদী ভাঙ্গনের শিকার মানুষগুলোর অসহায় আর্তনাদ, ‘বাহে দিনের বেলাটা কোনমতে পার করিলেও রাইতটা পার করা কঠিন হয়া গেইছে। হামরলার রাইতের ঘুম কাড়ি নিছে শীত। ভাঙ্গাচাটি বেড়ার ঘরত হুহু করি ঠা-া বাতাস ঢুকি পড়ছে।
সারারাইত বসি থাকি খড়কুটা জ্বালাইয়া আগুন তাপি পার করছি। এর আগত এত শীত হামরা দেখিনাই বাহে। পৌষ যদি এমন হয় মাঘ মাস আসিলে কি হইবে।’ এবার পৌষের শুরু থেকেই শীত জেকে বসলেও গত দুদিনের শীতের তীব্রতা অন্যভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অন্য যে কোনদিনের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে এ শীত। শীতের পাশাপাশি শুক্রবার রাত থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় রাজধানী। প্রায় সারাদিনই ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। সন্ধ্যার পর কুয়াশা যেন কু-লী পাকিয়ে নামছিল। ফলে রাস্তার সোডিয়াম লাইটগুলোও যেন আলো ছড়াতে পারছিল না। যানবাহনগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে হয়েছে। কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাস মিলেমিশে একাকার হয়ে শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে শীত পরিস্থিতি সহজেই উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ঢাকায় শীত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দেশের অন্যান্য স্থানে একই অবস্থা থাকবে। বর্তমানে দেশে বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রীর নিচে অবস্থান করছে। ঢাকায় যেখানে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে থাকার কথা সেখানে গত কয়েকদিন ধরে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশপাশে অবস্থান করছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় এ তাপমাত্রা আরও কমে যাচ্ছে। এদিকে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে। তারা জানিয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা একটু বেড়ে আবার কমে যাবে। এরপরেই শুরু হবে শৈত্যপ্রবাহ। গোটা জানুয়ারিতে দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। সব মিলিয়ে গোটা জানুয়ারি মাসটা এবার শীতের আবরণে ঢাকা থাকবে।
এদিকে অব্যাহত শীতের ধকল যেন সইতে পারছে না দেশবাসী। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কাহিল হয়ে পড়ছে। শীতজনিত রোগ যেমন বাড়ছে। শীতে মৃত্যুর হারও বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রচ- শীতের প্রভাব পড়ছে ফসলের ওপর। বিশেষ করে শীতের সবজি উৎপাদনের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় ক্ষতি হচ্ছে আলু, সবজি ক্ষেত ও বোরো বীজতলার। শীতের কারণে নৌ চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শুক্রবার রাত ২টায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচলা বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার সকাল ৮টায় কুয়াশার তীব্রতা কমে এলে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে তাপমাত্রার গড় ব্যবধান ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ব্যবধান ছিল মাত্র ৯ ডিগ্রী। তবে শুক্রবারের চেয়ে শনিবারের গড় ব্যবধান একটু বেশি হলেও শনিবারের ঘন কুয়াশা ছিল অধিকমাত্রায়। ফলে সারাদিন সূর্য কিরণ থাকলেও সূর্যতাপ খুব বেশি বাড়েনি। ফলে শীতের তীব্রতাও কমেনি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রী কম রয়েছে। শনিবার যেখানে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে সেখানে তাপমাত্রা বিরাজ করেছে ১০.৫ ডিগ্রীর মধ্যে। শুক্রবারে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ব্যবধান ছিল মাত্র ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শনিবারে এর ব্যবধান কিছুটা বেড়ে যায়।
তবে তিনি জানান, দু’একদিনের মধ্যে ঢাকায় তাপমাত্রার একটু উন্নতি হলেও দেশের অন্যান্য এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসকে আবহাওয়া অধিদফতর সবচেয়ে শীতল মাস হিসেবে মনে করে। ফলে এ মাসে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি শীত পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপরিচালক শাহ আলম জানান, ঘন কুয়াশার কারণে দিনে তাপমাত্রা বেশি পরিমাণ নেমে যাচ্ছে। শনিবারের তাপমাত্রা শুক্রবারের চেয়ে একটু বাড়লেও স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে অবস্থান করা এবং ঘন কুয়াশা থাকার কারণে শীত কমেনি। তিনি বলেন, সারাদেশেই এখন শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। আগামী দুই বা তারও বেশি সময়য়ের মধ্যে শীত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে বৃষ্টিúাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে কুয়াশা কেটে সারাদেশে তাপমাত্রা একটু বেড়ে আবার কমে যাবে। তাপমাত্রা কমে গেলে আবার শীতের শুরু হবে। জানুয়ারি মাসে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে শৈত্যপ্রবাহের ধরন কী হবে তা ২ জানুয়ারি পর্যবেক্ষণের পরে জানা সম্ভব হবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন বর্তমানে সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেঘলা আকাশ আর ঘনকুয়াশা। ভারতীয় উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী লঘুচাপটি অবস্থান করার ফলে আকাশ মেঘলা রয়েছে এবং ঘন কুয়াশা পড়ছে।
স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, শৈত্যপ্রবাহ ও প্রচ- শীতে খুলনার দুটি উপজেলার পল্লীতে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার নাছিরপুর গ্রামের হারান চন্দ্র সাধু (৬৫), কপিল উদ্দীন গাজী (৮০) ও পার্শ্ববর্তী সলুয়া গ্রামের মুন্সী হাবিবুর রহমান (৯০) শুক্রবার রাতে মারা গেছেন। এ ছাড়া শুক্রবার দুপুরে মারা যান দাকোপ উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত জহুর আলী সানার স্ত্রী সবুরুনেছা (৭৫)। মৃতদের স্বজনরা জানান, বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহের ধকল সামলাতে না পেরে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, ১২ দিন ধরে টানা শৈত্যপ্রবাহে এ অঞ্চলে ১০ লাখ লোক কাহিল হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তাপ খুব কম। বৃদ্ধ ও শিশুরা তীব্র এই শীতে কষ্ট পাচ্ছে বেশি। দিনের বেলা দরিদ্র শীতার্ত মানুষরা খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের তীব্রতায় লোকজন কাজে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। তাই কর্মহীন হয়ে পড়েছে চরদ্বীপচরের নিম্নআয়ের মানুষ। তারা শীতবস্ত্র ও খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তীব্র শীতে প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। প্রতিদিন গড়ে ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর থেকে জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে জেলায় এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশু-পাখিও তীব্র শীতের কবলে পড়েছে। কনকনে ঠা-া বাতাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরা। ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন তারা। জেলার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠা-াজনিত কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তীব্র শীতের কারণে খেটেখাওয়া দিনমজুরদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে। জেলার নদ-নদীতে নৌযান চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। খড়কুটা জ্বালিয়ে ছিন্নমূল মানুষ শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, নীলফামারী থেকে জানান, দুদিন ধরে এ অঞ্চলে দিনের বেলা ঝলমলে রোদের অভাব দেখা দেয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাটা বেড়েছে। তবে বিকেলের পর পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যাচ্ছে। সারারাত ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর উত্তরী হিমেল হাওয়া। অনেককে মন্তব্য করতেও শোনা গেছে, ‘বাহে এমন ঠা-া এইবার সিনেমার ভিলেন হয়া আইছে। হামাকলার কাঁপি কাঁপি তুলেছে।’ শনিবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। নীলফামারী জেলা শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, অব্যাহত হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা আর রাতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে খেটেখাওয়া মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। শীতজনিত রোগে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও জ্বরের রোগী। রোগীর ভিড়ের কারণে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। শীতজনিত অসুস্থতার কারণে গত দুই সপ্তাহে ৪ শিশু মারা গেছে। এদিকে শীতের তীব্রতায় ক্ষতি হচ্ছে আলু, সবজি ক্ষেত ও বোরো বীজতলারও।
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী থেকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শনিবার সকালে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় এ নৌরুটে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রীসাধারণকে তীব্র শীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার রাতে নদীপথে কুয়াশার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরি চলাচলের দিকনির্দেশক মার্কিং বাতি দেখা না যাওয়ায় এবং ফেরি চলাচলে দুর্ঘটনা এড়াতে রাত ২টায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার সকাল সোয়া ৮টায় কুয়াশার তীব্রতা কিছুটা কমে এলে পুনরায় এনৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। কুয়াশার কারণে যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের পন্টুনে ৩টি, মাঝ নদীতে ৫টি এবং পাটুরিয়া ঘাটে ২টি নোঙর করে থাকে। ৬ ঘণ্টা ফেরিতে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে পারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে প্রায় সহস্রাধিক বিভিন্ন প্রকার যানবাহন। কনকনে শীতে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। সকালে ফেরিতে যানবাহন পারাপার শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে এ অচলাবস্থা কাটতে শুরু করে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, বর্তমানে ৮টি বড় এবং ২টি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ফেরি চালাতে পারলে উভয়ই ঘাটের যানজট কমে আসবে।
চট্টগ্রামে স্থবিরতা ॥ চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে নৌ এবং বিমান চলাচল। সড়কপথেও নৈশকোচ এবং দূরপাল্লার পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর চলাচল মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, তীব্র ঘন কুয়াশা এবং শৈত্যপ্রবাহ আরও অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে এভিয়েশন সতর্কতায় চট্টগ্রামে রাতে নামতে পারেনি আরএকের ফ্লাইট। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল-কায়মা থেকে আসা ফ্লাইটটি ভারতের নাগপুরে ফেরত যায়। এটি বাতিল করায় চট্টগ্রাম থেকেও কোন যাত্রী আরব আমিরাতে যেতে পারেনি। অন্যদিকে একই কারণে জেদ্দাগামী বিমানের ফ্লাইট বিজি-০৩৭ যাত্রা বাতিল করেছে।
অন্যদিকে, কুয়াশার প্রাদুর্ভাবে সড়কপথেও যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বিশেষ করে নৈশকোচ এবং দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। গন্তব্যে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগছে পরিবহনগুলোর। এর ফলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
কনকনে ঠা-া ॥ শৈত্যপ্রবাহের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও তীব্র শীতে কাতর অবস্থা। সকাল ১০টা পর্যন্ত নগরীতে থাকছে নিস্তব্ধতা। আবার সন্ধ্যা নামতেই রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। বিপণি কেন্দ্রগুলোতে তেমন বেচাকেনা নেই।
খুরশিদ আসছেন ফেব্রুয়ারিতে,
তিস্তা চুক্তি হবে
কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি হলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ঢাকা সফরে আসছেন। সে সময়েই স্বাক্ষর হতে পারে বহুল আলোচিত এই চুক্তি। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও মমতার বাগড়ায় তা ভেস্তে যায়।
জানা গেছে, দুদিনের সফরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। ঢাকা আসার আগেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন সালমান খুরশিদ। মমতাকে চুক্তির বিষয়ে যুক্তি-তর্ক দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করা হবে। তিনি সম্মতি দিলেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ই চুক্তিটি আলোর মুখ দেখবে।
এদিকে সালমান খুরশিদের সফর ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে দেশের একটি অনলাইন নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সালমান খুরশিদ সাংবাদিকদের জানান, মমতার সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভাল এবং তিনি তাঁকে চুক্তিতে রাজি করাতে পারবেন বলে আশাবাদী।
তবে এই বিষয়ে মমতার অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি এর আগে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের প্রতিবেদনের জন্য রাজ্য সরকার অপেক্ষা করছে। পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিষয়ক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার একটি সংবাদপত্রকে জানান, জানুয়ারির মধ্যেই তিস্তা বিষয়ে কল্যাণ রুদ্রের প্রতিবেদন পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সহজ হয়ে যাবে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশকিছু বিষয়ে মতান্তরের ফলে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মন্দায় অর্থনৈতিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে মমতাকে তিস্তা চুক্তিতে রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। যত শীঘ্রই সম্ভব তিস্তা পানিচুক্তি করতে চান মনমোহন। আর এ কারণে তিনি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে সহায়তায় ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিতেও প্রস্তুত আছেন।
কলকাতার সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অর্থনীতির উন্নতি না হলে খুব শীঘ্রই মমতা সরকারের জন্য কর্মচারীদের বেতন দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ চুক্তিতে তার মত পরিবর্তনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও তাঁকে চাপ দিচ্ছে। যাতে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য সংসদে উত্থাপন করা যায়। তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি চুক্তির বিরোধিতা করছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, তিস্তার মতো ইস্যুগুলোতে মমতাকে এড়িয়ে না গিয়ে অর্থনৈতিক সহায়তা বা প্রভাবিত করে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে দিল্লী।
No comments