যুবলীগ নেতা তুষার ইসলাম নিখোঁজ ও গুম- র্যাবের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ by রোজিনা ইসলাম
যুবলীগের নেতা ও কাপড় ব্যবসায়ী তুষার ইসলাম নিখোঁজ ও গুম হওয়ার ঘটনায় র্যাব-৩-এর সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ তুষার ইসলামের বোন নাজমা পারভীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে গত ১১ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত চিঠি পুলিশ ও র্যাব সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। চিঠিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ নিজ নিজ বাহিনীর শৃঙ্খলা আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে নির্দেশ দিয়েছে, তা আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদেরও কিছু বলার আছে। বিষয়টি নিয়ে অফিশিয়াল করেসপন্ডেন্স (দাপ্তরিক চিঠি চালাচালি) চলছে।’
এর আগে মিরপুরে এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে স্থানীয় দোকানদার নূর আলম ওরফে বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব-৩-এরই ১৩ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ওই নির্দেশ এখনো কার্যকর হয়নি বলে জানা গেছে।
যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ: তুষার গ্রেপ্তার ও নিখোঁজ হওয়ার জন্য র্যাবকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। চার বছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে তুষারকে ঢাকার র্যাব-৩-এর সদস্যরা আটক করার নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি র্যাব-৩-এর তৎকালীন ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম, উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. হানিফ, করপোরাল আমিন উল্লাহ, সহকারী উপপরিদর্শক ফিরোজ আহম্মেদ ও হুমায়ুন ফরিদকে ঘটনার জন্য দায়ী করেছে।
হত্যার ঘটনা: নিখোঁজ তুষার যুবলীগের ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে, থাকতেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তুষারের পরিবারের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁকে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে। সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশিত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তির বোনের আবেদনের পর এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।
যেভাবে নিখোঁজ হন: তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০০৮ সালের ২২ জুলাই তুষার তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা ধুকুরিয়া বেড়া বাজারে যান। সেখানকার মকবুল স্টোর থেকে তাঁকে র্যাব-৩-এর সাদা পোশাকে থাকা সদস্যরা আটক করেন। তারপর র্যাব সদস্যরা আবদুল মান্নানের নছিমন ভ্যানে করে তুষারকে মুকুন্দগাতী বাজারে নিয়ে যান। সেখান থেকে দুজন স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে একটিতে তুষারকে বসিয়ে নিয়ে যায় র্যাব। এর পর থেকে তুষারের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ করলে তুষারকে আটক করার কথা অস্বীকার করে তারা। পরিবারের সদস্যরা খিলগাঁও থানা ও বেলকুচি থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত র্যাবের পাঁচ কর্মকর্তা ও সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, র্যাব-৩-এর একটি দল তুষারকে ওই দিন আটক করেছিল। ধুকুরিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী হাসমত আলী তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, তিনি দেখেছেন, তুষারকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় র্যাবের চারজন সদস্য ভটভটিতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর ‘আল্লাহর দেওয়া ভান্ডার’ নামের দোকানের মালিক দেখেছেন, নছিমনের ভেতরে পিস্তলসহ ‘সিভিল পোশাকে’ পাঁচজন র্যাব সদস্য, মাঝখানে তুষার বসা। সেখানে তাঁরা ২০ থেকে ২৫ মিনিট অবস্থান করে দুটি মোটরসাইকেলে করে তুষারকে নিয়ে চলে যেতে দেখেছেন।
বাজারের দুই ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ফারুক ও আশরাফ আলী জানিয়েছেন, তুষারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য র্যাবের সাদা পোশাক পরা সদস্যরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা এ বিষয়ে বেলকুচি থানায় জিডিও করেন। পরদিন বেলকুচি থানা থেকে তাঁদের মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়া হয়।
ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা র্যাব কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাবের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমি আশা করছি।’
তুষারের বোন নাজমা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যদি হত্যা করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের অন্তত লাশটি দিয়ে দেওয়া হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার র্যাবের যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বলেছে, তা যেন শুধু চিঠিপত্রে সীমাবদ্ধ না থাকে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সহায়তা চাই।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে গত ১১ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত চিঠি পুলিশ ও র্যাব সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। চিঠিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ নিজ নিজ বাহিনীর শৃঙ্খলা আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে নির্দেশ দিয়েছে, তা আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদেরও কিছু বলার আছে। বিষয়টি নিয়ে অফিশিয়াল করেসপন্ডেন্স (দাপ্তরিক চিঠি চালাচালি) চলছে।’
এর আগে মিরপুরে এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে স্থানীয় দোকানদার নূর আলম ওরফে বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব-৩-এরই ১৩ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ওই নির্দেশ এখনো কার্যকর হয়নি বলে জানা গেছে।
যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ: তুষার গ্রেপ্তার ও নিখোঁজ হওয়ার জন্য র্যাবকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। চার বছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে তুষারকে ঢাকার র্যাব-৩-এর সদস্যরা আটক করার নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি র্যাব-৩-এর তৎকালীন ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম, উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. হানিফ, করপোরাল আমিন উল্লাহ, সহকারী উপপরিদর্শক ফিরোজ আহম্মেদ ও হুমায়ুন ফরিদকে ঘটনার জন্য দায়ী করেছে।
হত্যার ঘটনা: নিখোঁজ তুষার যুবলীগের ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে, থাকতেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তুষারের পরিবারের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁকে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে। সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশিত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তির বোনের আবেদনের পর এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।
যেভাবে নিখোঁজ হন: তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০০৮ সালের ২২ জুলাই তুষার তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা ধুকুরিয়া বেড়া বাজারে যান। সেখানকার মকবুল স্টোর থেকে তাঁকে র্যাব-৩-এর সাদা পোশাকে থাকা সদস্যরা আটক করেন। তারপর র্যাব সদস্যরা আবদুল মান্নানের নছিমন ভ্যানে করে তুষারকে মুকুন্দগাতী বাজারে নিয়ে যান। সেখান থেকে দুজন স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে একটিতে তুষারকে বসিয়ে নিয়ে যায় র্যাব। এর পর থেকে তুষারের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ করলে তুষারকে আটক করার কথা অস্বীকার করে তারা। পরিবারের সদস্যরা খিলগাঁও থানা ও বেলকুচি থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত র্যাবের পাঁচ কর্মকর্তা ও সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, র্যাব-৩-এর একটি দল তুষারকে ওই দিন আটক করেছিল। ধুকুরিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী হাসমত আলী তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, তিনি দেখেছেন, তুষারকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় র্যাবের চারজন সদস্য ভটভটিতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর ‘আল্লাহর দেওয়া ভান্ডার’ নামের দোকানের মালিক দেখেছেন, নছিমনের ভেতরে পিস্তলসহ ‘সিভিল পোশাকে’ পাঁচজন র্যাব সদস্য, মাঝখানে তুষার বসা। সেখানে তাঁরা ২০ থেকে ২৫ মিনিট অবস্থান করে দুটি মোটরসাইকেলে করে তুষারকে নিয়ে চলে যেতে দেখেছেন।
বাজারের দুই ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ফারুক ও আশরাফ আলী জানিয়েছেন, তুষারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য র্যাবের সাদা পোশাক পরা সদস্যরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা এ বিষয়ে বেলকুচি থানায় জিডিও করেন। পরদিন বেলকুচি থানা থেকে তাঁদের মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়া হয়।
ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা র্যাব কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাবের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমি আশা করছি।’
তুষারের বোন নাজমা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যদি হত্যা করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের অন্তত লাশটি দিয়ে দেওয়া হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার র্যাবের যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বলেছে, তা যেন শুধু চিঠিপত্রে সীমাবদ্ধ না থাকে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সহায়তা চাই।’
No comments