যন্ত্র ব্যবহারে মিতাচারের বিকল্প নেই- অমূল্য আঁধার

মানুষ প্রকৃতি থেকে নিজেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন করে চলেছে, কিন্তু তার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রণ যে প্রকৃতির হাতেই থেকে যাচ্ছে, এই অনিবার্য সত্য অস্বীকার করার পথ নেই। ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে,


কিন্তু মানবস্বাস্থ্যের ওপর নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ধারণা এখনো অনেক সীমিত। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল থেকে এ ক্ষেত্রে নতুন কিছু ধারণা যুক্ত হলো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের জীবনে আলো যেমন জরুরি, রাতের আঁধার তার চেয়ে কম জরুরি নয়। মানুষের মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মেলাটোনিন নামের যে হরমোন তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘটায়, রাতের আঁধার সেই মেলাটোনিন নিঃসরণের সহায়ক। কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে রাতের আঁধার দূর করে আমরা যে সভ্যতা গড়ে তুলেছি, সেখানে আলোঝলমল রাতে মেলাটোনিন নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত থেকে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় যে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে বেশ ক্ষতিকর ফল বয়ে আনে। বিশেষ করে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস—এ দুটি প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
আলোদূষণের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মানবজীবনের যেসব ব্যবহারিক দিকে লক্ষ রেখেছেন, প্রযুক্তির প্রসারের ফলে তা বাংলাদেশের মতো অনুন্নত ও দরিদ্র দেশের জন্যও অংশত প্রযোজ্য। রাস্তাঘাট, মোটরযান ও গৃহের বৈদ্যুতিক বাতি এবং কম্পিউটার, টেলিভিশন, মুঠোফোন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর আলো থেকে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অবশ্য, যে দেশের অর্ধেকেরও বেশিসংখ্যক মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, সেখানে এ সমস্যা গৌণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু জনগোষ্ঠীর যে অংশটি এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ভোগ করছে, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কোনো গৌণ বিষয় নয়।
সমস্যাটি বৈশ্বিক; বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিকভাবেই এর সমাধান খুঁজছেন। আশু সমাধান হয়তো নেই, তবে ক্ষতির মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে তাঁরা মৃদু আলোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের বাস্তবতায় বিদ্যুৎসাশ্রয়ের অংশ হিসেবেও যদি আমরা বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহারে অপচয় ত্যাগ করি, রাতের বেলা টেলিভিশন, ইউপিএস, মুঠোফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি পুরোপুরি বন্ধ রাখি (পাওয়ার অফ), তাহলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.