প্রোফাইল- ইয়ে শিউয়েন
ডাক নাম: ইয়ে, লিটল গোস্ট
জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৯৬
জন্মস্থান: হ্যাংঝু, চীন
জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৯৬
জন্মস্থান: হ্যাংঝু, চীন
উচ্চতা: ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
বাবা: ইয়ে কিংসং
মা: নিং ইয়িকিং
প্রিয় এবং অন্যান্য
অভিনেতা: লি মিনহো
বই: শার্লক হোমস সিরিজ
শখ: গোয়েন্দা কাহিনি, রহস্যোপন্যাস পড়া
অবসর কাটে: বই পড়ে ও টিভি দেখে
জন্মের পর সন্তানের প্রথম কান্না শুনে মুহূর্তে প্রসব-যন্ত্রণা ভুলে যান মা, গর্বে বুকটা ভরে ওঠে বাবার। ইয়ে কিংসং আনন্দের পাশাপাশি একটু বিভ্রান্তও হন। নবজাতকের প্রথম কান্না শুনে ভেবেছিলেন ছেলে হয়েছে। ‘তার প্রথম কান্না শুনে আমি ভেবেছিলাম আমার সন্তানটি অবশ্যই ছেলে। তবে মেয়ে হওয়াতেই আমি বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম’—গর্বের সঙ্গে ১৬ বছর আগের ঘটনার স্মৃতিচারণা করছিলেন কিংসং।
কিংসংয়ের এখন গর্ব করে বেড়ানোরই সময়। যার প্রথম কান্না শুনে ছেলে ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁর সেই মেয়েটিই এবারের অলিম্পিকে সাঁতারের চীনা বিস্ময় ইয়ে শিউয়েন।
লন্ডন অলিম্পিকের সাঁতারে চীনের পাঁচ সোনার দুটিই শিউয়েনের। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে সোনা জিতেছেন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। ২০০ মিটার মিডলেতে জিতেছেন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে। ৪০০ মিটারের শেষ ৫০ মিটার শিউয়েন সাঁতরান অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। পুরুষদের ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে রায়ান লোকটি যেখানে শেষ ৫০ মিটার সাঁতরেছেন ২৯.১০ সেকেন্ডে, সেখানে শিউয়েন শেষ ৫০ মিটারে সময় নিয়েছেন ২৮.৯৩ সেকেন্ড!
শিউয়েনের লন্ডন কীর্তিতে বিস্মিত পুরো বিশ্ব। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে নির্মম এক কাহিনি। সাঁতারু হতে গিয়ে কত কষ্ট, কত ত্যাগই না স্বীকার করেছেন ছোট্ট ইয়ে!
যৌবনে বাবা ইয়ে কিংসং ছিলেন দৌড়বিদ, স্কুলজীবনে মা নিং ইয়িকিং লং জাম্পার। খেলাখুলার নেশাটা তাই মিশে আছে শিউয়েনের রক্তেই। দুঃখ, খুব বেশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগ পাননি! তাঁর বয়স যখন নয় মাস, মা ইয়িকিং যোগ দেন নিজের কর্মস্থলে। তিনি মাসিক ৬৫০ পাউন্ড বেতনে কাজ করতেন এক ওয়াশিং মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে। বাবা কিংসংও টুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করতেন দীর্ঘ সময় ধরে।
ফল, দুধের শিশু শিউয়েনের আশ্রয় হয় নানি জ্যাং জেঙ্গির কাছে। নানির কাছেই বেড়ে ওঠা। গ্রামের খোলামেলা জায়গা পেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি দৌড়ঝাপ-খেলাধুলাতেই কাটছিল সময়। মাত্র তিন বছর বয়সেই শিখে ফেলেন সাঁতার! অন্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় ইয়ের হাত-পা ছিল লম্বা, কাঁধ চওড়া। যা সাঁতারের জন্য খুবই কার্যকরী। কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষকের পরামর্শে ছয় বছর বয়সে শিউয়েন যোগ দেন ভবিষ্যতের তারকা তৈরির প্রতিষ্ঠান চেন জিংলান ক্রীড়া স্কুলে। কঠোর শাসন আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তাঁর সাঁতারু হওয়ার সাধনা।
১১ বছর বয়সে শুরু আসল পরীক্ষা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নিবিড় অনুশীলন। দেখা দূরে থাক, বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলার অনুমতিও ছিল না। শখের মোবাইল ফোন সেটটাও জমা দিতে হয়। প্রতি রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন একটি ঘণ্টা সময় মিলত বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করা কিংবা কথা বলার জন্য। ফোন করেই কান্নায় ভেঙে পড়তেন শিউয়েন। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠত তাঁর বাবা-মায়েরও। মা ইয়িকিংই যেমন বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হতো আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি ওকে খুবই মিস করতাম। বাড়িটা শূন্য লাগত।’
কান্নার আওয়াজের মতো শিউয়েনের চেহারাও ছেলেদের মতো। ছেলেবেলায় ছিলেনও ডাকাবুকো। খেলতে গিয়ে, সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে গেলেও কখনো কাঁদেননি শিউয়েন। খেলাধুলাও করতেন ছেলেদের মতোই। ফলে বারবারই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। ইয়ে কিংসংয়ের ভাষায়, ‘অনেক সময়ই ওকে মেয়েদের ড্রেসিংরুম থেকে বের করে দেওয়া হতো। কারণ ওকে ছেলে ভেবে ভুল করত।’ টানা অনুশীলন অনেক সময় কুলিয়ে না পারলেও লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল, ‘আমি এটা করতে চাই।’
হ্যাংঝুতে কমিউনিস্ট পার্টির হাউজিং ব্লকেই অপ্রশস্ত একটা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন স্বামী-স্ত্রী। ছোট্ট থাকার রুমটিতে একটি টেবিল, একটি চেয়ার। একসময় এই ঘরে যে শিশু শিউয়েনের বসবাস ছিল, সেসব তারই সাক্ষী। মেয়ে তাঁদের লন্ডনে সাফল্য পাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না শিউয়েনের বাবা-মায়ের। বয়স ১০ না পেরোতেই ৫০টি পদক জয়ী মেয়ে লন্ডনে শিউয়েন চমকে দিয়েছেন বিশ্বকেই। তাঁর বাবা-মা দৃষ্টি ফেলছেন সামনে। আর চীনারা? ষোড়শী শিউয়েনের মধ্যে মহিলা ‘ফেল্পেসর’ ছবিই কি আঁকছে!
খলিলুর রহমান
বাবা: ইয়ে কিংসং
মা: নিং ইয়িকিং
প্রিয় এবং অন্যান্য
অভিনেতা: লি মিনহো
বই: শার্লক হোমস সিরিজ
শখ: গোয়েন্দা কাহিনি, রহস্যোপন্যাস পড়া
অবসর কাটে: বই পড়ে ও টিভি দেখে
জন্মের পর সন্তানের প্রথম কান্না শুনে মুহূর্তে প্রসব-যন্ত্রণা ভুলে যান মা, গর্বে বুকটা ভরে ওঠে বাবার। ইয়ে কিংসং আনন্দের পাশাপাশি একটু বিভ্রান্তও হন। নবজাতকের প্রথম কান্না শুনে ভেবেছিলেন ছেলে হয়েছে। ‘তার প্রথম কান্না শুনে আমি ভেবেছিলাম আমার সন্তানটি অবশ্যই ছেলে। তবে মেয়ে হওয়াতেই আমি বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম’—গর্বের সঙ্গে ১৬ বছর আগের ঘটনার স্মৃতিচারণা করছিলেন কিংসং।
কিংসংয়ের এখন গর্ব করে বেড়ানোরই সময়। যার প্রথম কান্না শুনে ছেলে ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁর সেই মেয়েটিই এবারের অলিম্পিকে সাঁতারের চীনা বিস্ময় ইয়ে শিউয়েন।
লন্ডন অলিম্পিকের সাঁতারে চীনের পাঁচ সোনার দুটিই শিউয়েনের। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে সোনা জিতেছেন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। ২০০ মিটার মিডলেতে জিতেছেন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে। ৪০০ মিটারের শেষ ৫০ মিটার শিউয়েন সাঁতরান অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। পুরুষদের ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে রায়ান লোকটি যেখানে শেষ ৫০ মিটার সাঁতরেছেন ২৯.১০ সেকেন্ডে, সেখানে শিউয়েন শেষ ৫০ মিটারে সময় নিয়েছেন ২৮.৯৩ সেকেন্ড!
শিউয়েনের লন্ডন কীর্তিতে বিস্মিত পুরো বিশ্ব। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে নির্মম এক কাহিনি। সাঁতারু হতে গিয়ে কত কষ্ট, কত ত্যাগই না স্বীকার করেছেন ছোট্ট ইয়ে!
যৌবনে বাবা ইয়ে কিংসং ছিলেন দৌড়বিদ, স্কুলজীবনে মা নিং ইয়িকিং লং জাম্পার। খেলাখুলার নেশাটা তাই মিশে আছে শিউয়েনের রক্তেই। দুঃখ, খুব বেশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগ পাননি! তাঁর বয়স যখন নয় মাস, মা ইয়িকিং যোগ দেন নিজের কর্মস্থলে। তিনি মাসিক ৬৫০ পাউন্ড বেতনে কাজ করতেন এক ওয়াশিং মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে। বাবা কিংসংও টুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করতেন দীর্ঘ সময় ধরে।
ফল, দুধের শিশু শিউয়েনের আশ্রয় হয় নানি জ্যাং জেঙ্গির কাছে। নানির কাছেই বেড়ে ওঠা। গ্রামের খোলামেলা জায়গা পেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি দৌড়ঝাপ-খেলাধুলাতেই কাটছিল সময়। মাত্র তিন বছর বয়সেই শিখে ফেলেন সাঁতার! অন্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় ইয়ের হাত-পা ছিল লম্বা, কাঁধ চওড়া। যা সাঁতারের জন্য খুবই কার্যকরী। কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষকের পরামর্শে ছয় বছর বয়সে শিউয়েন যোগ দেন ভবিষ্যতের তারকা তৈরির প্রতিষ্ঠান চেন জিংলান ক্রীড়া স্কুলে। কঠোর শাসন আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তাঁর সাঁতারু হওয়ার সাধনা।
১১ বছর বয়সে শুরু আসল পরীক্ষা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নিবিড় অনুশীলন। দেখা দূরে থাক, বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলার অনুমতিও ছিল না। শখের মোবাইল ফোন সেটটাও জমা দিতে হয়। প্রতি রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন একটি ঘণ্টা সময় মিলত বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করা কিংবা কথা বলার জন্য। ফোন করেই কান্নায় ভেঙে পড়তেন শিউয়েন। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠত তাঁর বাবা-মায়েরও। মা ইয়িকিংই যেমন বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হতো আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি ওকে খুবই মিস করতাম। বাড়িটা শূন্য লাগত।’
কান্নার আওয়াজের মতো শিউয়েনের চেহারাও ছেলেদের মতো। ছেলেবেলায় ছিলেনও ডাকাবুকো। খেলতে গিয়ে, সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে গেলেও কখনো কাঁদেননি শিউয়েন। খেলাধুলাও করতেন ছেলেদের মতোই। ফলে বারবারই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। ইয়ে কিংসংয়ের ভাষায়, ‘অনেক সময়ই ওকে মেয়েদের ড্রেসিংরুম থেকে বের করে দেওয়া হতো। কারণ ওকে ছেলে ভেবে ভুল করত।’ টানা অনুশীলন অনেক সময় কুলিয়ে না পারলেও লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল, ‘আমি এটা করতে চাই।’
হ্যাংঝুতে কমিউনিস্ট পার্টির হাউজিং ব্লকেই অপ্রশস্ত একটা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন স্বামী-স্ত্রী। ছোট্ট থাকার রুমটিতে একটি টেবিল, একটি চেয়ার। একসময় এই ঘরে যে শিশু শিউয়েনের বসবাস ছিল, সেসব তারই সাক্ষী। মেয়ে তাঁদের লন্ডনে সাফল্য পাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না শিউয়েনের বাবা-মায়ের। বয়স ১০ না পেরোতেই ৫০টি পদক জয়ী মেয়ে লন্ডনে শিউয়েন চমকে দিয়েছেন বিশ্বকেই। তাঁর বাবা-মা দৃষ্টি ফেলছেন সামনে। আর চীনারা? ষোড়শী শিউয়েনের মধ্যে মহিলা ‘ফেল্পেসর’ ছবিই কি আঁকছে!
খলিলুর রহমান
No comments