পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ-বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চূড়ান্ত ফয়সালা প্রয়োজন
আর মাত্র ছয় দিন সময় আছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা না হলে এডিবি এবং জাইকাও পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে। তবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, এর মধ্যেই একটা সমঝোতা হয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রীর মতো আমরাও আশাবাদী হতে চাই।
কারণ পদ্মা সেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, দক্ষিণ বঙ্গের তিন কোটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে পানি অনেক ঘোলা হয়েছে। অনেক অপ্রিয় প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু কথায় বলে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শেষটা যাতে ভালো হয়, সরকার সেভাবেই কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রায় ১৪ মাস ঝুলিয়ে রাখার পর গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করেছিল। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে অনেক কথাই বলা হয়েছিল। নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ওদিকে মালয়েশিয়া চূড়ান্ত প্রস্তাব নিয়ে তৈরি আছে। সবই ঠিক আছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখে সরকার যথেষ্ট বিচক্ষণতারও পরিচয় দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্বব্যাংককে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আর উপেক্ষাই বা করা হবে কেন? সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অধিকারের প্রশ্নও তো জড়িত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এটা অনস্বীকার্য, মালয়েশিয়ার বিকল্প প্রস্তাব প্রদানের এক দিন পর বিশ্বব্যাংক যেভাবে সরে দাঁড়াল, তা অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অন্য রকম চাপ কিংবা রহস্যের আভাসও দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেকেই মনে করছেন, সরকার পরবর্তীকালে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেই পদক্ষেপগুলো আগে নিলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। এখন শোনা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের শর্তের মধ্যে রয়েছে, মন্ত্রী আবুল হোসেনের পর প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকেও সরিয়ে দিতে হবে। এটা করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ সরকার সব সময়ই বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলো সম্পর্কে দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখেছে। কাজেই এরপর যদি আরো কাউকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়, সম্ভবত তাতেও আমরা অবাক হব না।
সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বিশ্বব্যাংকের জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন। তাই আমরা মনে করি, তদন্ত ও বিচারকাজ পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই সেতু প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে পারে। এডিবি ও জাইকা ঋণচুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে যথেষ্ট শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করি, দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং দুয়ার বন্ধ করার কোনো নীতি গ্রহণ করবে না। তাই আমরা চাই, সব মতভেদ দূর করে যাদের নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাদের নিয়েই নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি তা করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। আর একান্তই যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে সে ব্যাপারেও দ্রুত একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। কারণ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাখা কোনোমতেই ঠিক নয়। আমরা মনে করি, সরকার পদ্মা সেতুর ব্যাপারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার পরিচয় দেবে এবং কোনোভাবেই দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না। সর্বোপরি এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে অন্ধকারে না রেখে তাদের কাছে সব কিছু খোলাখুলি তুলে ধরতে হবে।
No comments