শিশু মূল প্রতিবেদন- বাল্যবিবাহ হচ্ছেই by মানসুরা হোসাইন
টগবগ টগবগ ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার এল—রূপকথার এই রাজকুমারকে স্বপ্ন দেখার আগেই বাংলাদেশের কিশোরী রাজকন্যারা নিজেদের আবিষ্কার করে শ্বশুরবাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে। শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতির আগেই ঘটে স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলনের অভিজ্ঞতা। তারপর শুরু হয় নানা জটিলতা।
দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন মেয়ে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।
দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন আছে। সরকার এবং এনজিওগুলো নানা কর্মসূচিও চালাচ্ছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ হচ্ছেই। বেশির ভাগ বিয়ে আইনের ফাঁক গলে এবং গোপনে হচ্ছে বলে এর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহায়তায়ই বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এই অপরাধে অভিভাবক বা অন্যদের আইনের আওতায় শাস্তি পাওয়ার ঘটনা খুবই কম। আর শাস্তি দেওয়া হলেও তা এতই সামান্য যে কেউ আর এতে ভীত নয়।
একাধিক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি-২০১১ অনুযায়ী, চীন ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। তবে বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে দুজনের বাল্যবিবাহ হয়। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী যাঁরা, তাঁদের ১৫, ১৮ বা ২০ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে হয়েছে বা প্রথম সহবাস করেছেন—এমন নারীর শতকরা হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ ধরনের অবস্থার শিকার দেশের ৭৯ শতাংশ নারী। আফ্রিকার দরিদ্র রাষ্ট্র নাইজার, চাদ ও মালির পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘বিশ্বে মায়েদের অবস্থা-২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে চিত্র, তা এখনো ভয়াবহ!
ইউনিসেফের গত বছরে প্রকাশিত ‘প্রোগ্রেস ফর চিলড্রেন এচিভিং দ্য এমডিজিস উইথ ইকুইটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে।
আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, স্ব-উন্নয়ন, সোয়ালোজ ও রাজশাহী সচেতন নাগরিক কমিটি নামের তিনটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬১২টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।
কেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে: বেসরকারি সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, সামাজিক চাপ, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ও নিরাপত্তার অভাবকে বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদি কুফল ভোগ করতে হচ্ছে নারীদের।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দরিদ্র পরিবারে মেয়েসন্তানকে বাড়তি বোঝা হিসেবে মনে করা হয়। তারা মনে করে, মেয়েকে বিয়ে দিলে অন্ততপক্ষে একজনের খাবার কম লাগবে। রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি বা বখাটেদের উৎপাতের কারণেও অভিভাবকেরা কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান।
বাল্যবিবাহের আরেকটি কারণ হচ্ছে সামাজিক চাপ। বয়ঃসন্ধিক্ষণের সময় পার হলেই প্রতিবেশী ও গ্রামের মাতবরেরা মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিয়ে না দিলে সেই পরিবারকে একঘরে করার হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে তড়িঘড়ি করে অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। মেয়ে বেশি পড়াশোনা করলে পড়াশোনা জানা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে যৌতুকের পরিমাণও বেড়ে যায়। পরে যদি ভালো ছেলে পাওয়া না যায়, সে ভয়েও অভিভাবকেরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন।
এসব কারণ ছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, কিশোরী মেয়েরা পরিবারের অমতে ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করছে। এভাবে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই অনেকে বিয়ে করছে এবং মা হচ্ছে দ্রুত।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, আদমদীঘি উপজেলায় গত ছয় মাসে কয়েকটি গ্রামে শতাধিক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। ব্র্যাক, আশাসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাল্যবিবাহের প্রবণতা রোধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজি ও মসজিদের ইমামদের নিয়ে একাধিকবার সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হলেও কতিপয় কাজি ও ইমাম আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাল্যবিবাহে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে। তবে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, নারী ও উন্নয়ন সংগঠনের চেষ্টায় এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। জেলা মহিলা পরিষদ সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে তারা বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। তবে সব খবর তাদের কাছে আসে না।
প্রথম আলোর কুষ্টিয়া অফিস জানায়, নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা কুষ্টিয়ার মুক্তি নারী ও শিশু এবং ফেয়ারসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, গত দুই বছরে জেলায় প্রায় ৫০টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের বিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। তবে প্রতিরোধের কয়েক মাস পর তাদের আবার বিয়ে হয়েছে কি না, তার কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।
এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুরসহ বেশির ভাগ জেলায় বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিয়ে সাংসদ ও আইনজীবী তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯২৯ সালের আইন বর্তমান সময়ের জন্য হাস্যকর। তাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ একটি আইন তৈরি করা জরুরি। সমাজে মেয়ে বা কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলেও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। কেননা, মেয়ে বখাটেদের উৎপাতে পড়াশোনা করতে ও বাইরে যেতে না পারায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়েই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে একটু বয়স হলেই মেয়ের কেন বিয়ে হচ্ছে না, তা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিও পাল্টাতে হবে। সম্প্রতি অনেক জায়গায় যাকে বিয়ে দেওয়া হবে, সেই মেয়েই প্রতিবাদ করে বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে। তাই মেয়েদের শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও কোনো বিকল্প নেই’।
দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন আছে। সরকার এবং এনজিওগুলো নানা কর্মসূচিও চালাচ্ছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ হচ্ছেই। বেশির ভাগ বিয়ে আইনের ফাঁক গলে এবং গোপনে হচ্ছে বলে এর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহায়তায়ই বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এই অপরাধে অভিভাবক বা অন্যদের আইনের আওতায় শাস্তি পাওয়ার ঘটনা খুবই কম। আর শাস্তি দেওয়া হলেও তা এতই সামান্য যে কেউ আর এতে ভীত নয়।
একাধিক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি-২০১১ অনুযায়ী, চীন ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। তবে বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে দুজনের বাল্যবিবাহ হয়। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী যাঁরা, তাঁদের ১৫, ১৮ বা ২০ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে হয়েছে বা প্রথম সহবাস করেছেন—এমন নারীর শতকরা হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ ধরনের অবস্থার শিকার দেশের ৭৯ শতাংশ নারী। আফ্রিকার দরিদ্র রাষ্ট্র নাইজার, চাদ ও মালির পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘বিশ্বে মায়েদের অবস্থা-২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে চিত্র, তা এখনো ভয়াবহ!
ইউনিসেফের গত বছরে প্রকাশিত ‘প্রোগ্রেস ফর চিলড্রেন এচিভিং দ্য এমডিজিস উইথ ইকুইটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে।
আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, স্ব-উন্নয়ন, সোয়ালোজ ও রাজশাহী সচেতন নাগরিক কমিটি নামের তিনটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬১২টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।
কেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে: বেসরকারি সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, সামাজিক চাপ, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ও নিরাপত্তার অভাবকে বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদি কুফল ভোগ করতে হচ্ছে নারীদের।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দরিদ্র পরিবারে মেয়েসন্তানকে বাড়তি বোঝা হিসেবে মনে করা হয়। তারা মনে করে, মেয়েকে বিয়ে দিলে অন্ততপক্ষে একজনের খাবার কম লাগবে। রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি বা বখাটেদের উৎপাতের কারণেও অভিভাবকেরা কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান।
বাল্যবিবাহের আরেকটি কারণ হচ্ছে সামাজিক চাপ। বয়ঃসন্ধিক্ষণের সময় পার হলেই প্রতিবেশী ও গ্রামের মাতবরেরা মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিয়ে না দিলে সেই পরিবারকে একঘরে করার হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে তড়িঘড়ি করে অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। মেয়ে বেশি পড়াশোনা করলে পড়াশোনা জানা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে যৌতুকের পরিমাণও বেড়ে যায়। পরে যদি ভালো ছেলে পাওয়া না যায়, সে ভয়েও অভিভাবকেরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন।
এসব কারণ ছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, কিশোরী মেয়েরা পরিবারের অমতে ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করছে। এভাবে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই অনেকে বিয়ে করছে এবং মা হচ্ছে দ্রুত।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, আদমদীঘি উপজেলায় গত ছয় মাসে কয়েকটি গ্রামে শতাধিক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। ব্র্যাক, আশাসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাল্যবিবাহের প্রবণতা রোধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজি ও মসজিদের ইমামদের নিয়ে একাধিকবার সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হলেও কতিপয় কাজি ও ইমাম আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাল্যবিবাহে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে। তবে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, নারী ও উন্নয়ন সংগঠনের চেষ্টায় এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। জেলা মহিলা পরিষদ সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে তারা বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। তবে সব খবর তাদের কাছে আসে না।
প্রথম আলোর কুষ্টিয়া অফিস জানায়, নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা কুষ্টিয়ার মুক্তি নারী ও শিশু এবং ফেয়ারসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, গত দুই বছরে জেলায় প্রায় ৫০টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের বিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। তবে প্রতিরোধের কয়েক মাস পর তাদের আবার বিয়ে হয়েছে কি না, তার কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।
এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুরসহ বেশির ভাগ জেলায় বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিয়ে সাংসদ ও আইনজীবী তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯২৯ সালের আইন বর্তমান সময়ের জন্য হাস্যকর। তাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ একটি আইন তৈরি করা জরুরি। সমাজে মেয়ে বা কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলেও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। কেননা, মেয়ে বখাটেদের উৎপাতে পড়াশোনা করতে ও বাইরে যেতে না পারায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়েই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে একটু বয়স হলেই মেয়ের কেন বিয়ে হচ্ছে না, তা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিও পাল্টাতে হবে। সম্প্রতি অনেক জায়গায় যাকে বিয়ে দেওয়া হবে, সেই মেয়েই প্রতিবাদ করে বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে। তাই মেয়েদের শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও কোনো বিকল্প নেই’।
No comments