আইন কমিশনের প্রস্তাব

আইন কমিশন ফৌদারি মামলায় আপস-মীমাংসা কিংবা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে সরকারের কাছে ২০১১ সালের ১১ আগস্টে সুপারিশ পেশ করেছে। আইন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রচলিত ফৌদারি মামলার বিচারব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক বা নির্দেশমূলক এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি গ্রহণের তেমন কোনো সুযোগ নেই।


আপস করার ক্ষেত্রে আদালত সরাসরি পদক্ষেপ নিতে পারেন না বা আদালতের ন্য তা বাধ্যতামূলক নয়। ৩৪৫ ধারায় কে কার সঙ্গে আপস করতে পারবে, কোন কোন ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে তা নির্দিষ্ট করা আছে। তাই দেখা যায়, আপসের ক্ষেত্রে এই ধারায় ব্যাপক সুযোগ প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া ফৌদারি মামলার অধিকাংশই হলো আির (নোরেল রেস্ট্রাির) মামলা। আির মামলার বাদী হয় রাষ্ট্র। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে কেউ বা সাধারণ নগণ মামলার এাহারকারী হতে পারে। আদালতে দায়ের করা মামলা যা সিআর (কমপ্ল্যাইন রেস্ট্রাির) মামলা হিসেবে পরিচিত, এসব মামলার ফরিয়াদি বা বাদী হন দরখাস্ত দাখিলকারী নি।ে
ফৌদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা অনুসারে বাদী/ফরিয়াদি সংশ্লিষ্ট মামলাটি যেকোনো সময় প্রত্যাহার করে নিতে পারে। কিন্তু ফৌদারি আদালতের বেশির ভাগ মামলা হলো আির মামলা, যা সরাসরি থানায় দায়ের হয়। কিছু ক্ষেত্রে আদালতে দায়ের করা নালিশি দরখাস্তও আির মামলায় রূপান্তরিত হয়; এসব মামলায় রাষ্ট্রই বাদী হিসেবে গণ্য হন। ফলে এাহারকারী মামলা প্রত্যাহার করতে আইনানুগভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত বা অধিকারী নন। তাঁরা মূলত মামলায় অন্যতম সাক্ষী হয়। আির মামলায় ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট-এর ১৩৮ ধারায় দায়ের করা মামলা সিআর মামলা হিসেবে ম্যাস্ট্রেট আদালতে দায়ের হলে তা দায়রা আদালতে বিচার্য হওয়ায় মামলাগুলো সেশন মামলায় রূপান্তরিত হয়, তখন ২৪৮ ধারা প্রয্যো না হওয়ায় পক্ষগণ ইচ্ছা করলে মামলা আর আইনানুগভাবে প্রত্যাহার করতে পারে না। ফলে, যে মামলাগুলোর পক্ষগণ আদালতের বাইরে আপস করে সেগুলো আপসের ভিত্তিতে প্রদত্ত সাক্ষ্য হয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণ, ফৌদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা পরীক্ষা, যুক্তিতর্ক অনুসরণ করে রায় দিতে হয় এবং তাতে সময় লাগে। ফলে আদালতে অহেতুক মামলার ট সৃষ্টি হয়।
আইন কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে আপসযোগ্য মামলাগুলোতে বিচারিক আদালত কর্তৃক মামলার নথি পাওয়ার পর বা ম্যাস্ট্রেট কর্তৃক মামলা আমলে নেওয়ার পর অভিযোগ গঠনের তারিখ না দিয়ে এডিআরের পদক্ষেপ গ্রহণের ন্য দিন ধার্য করতে হবে, যা হবে বাধ্যতামূলক। এর ন্য প্রয়োন হবে ফৌদারি কার্যবিধি সংশোধন। এ ছাড়া বলা হয়েছে, আপসযোগ্য মামলায় বিচারের সময় যেকোনো পর্যায়ে মামলার বাদী/এাহারকারী বা ভিকটিম আদালতে আপসের দরখাস্ত দাখিল করলে আদালত বাধ্যতামূলকভাবে দরখাস্ত গ্রহণ করে সংক্ষিপ্ত আকারে শুনানির ন্য দিন ধার্য করে আপসের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন—এই রূপ বিধান করা যেতে পারে।
এ ছাড়া কমিশনের মতে, মামলায় আগে বর্ণিত এডিআরের পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে মামলায় যখন পক্ষগণ আপস করবে তখন উভয়ের মধ্যে একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হতে হবে। ওই চুক্তিনামায় পক্ষগণ যা স্বীকার বা অস্বীকার করবে তা পরবর্তী সময়ে বিচারকালে স্বীকৃত/অস্বীকৃত রূপে সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।
এ ছাড়া তদন্তাধীন মামলায় এডিআরের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে থানায় দায়ের করা যেসব মামলায় টাকা-পয়সা লেনদেনের কারণে স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে চুক্তি ভঙ্গের কারণে, প্রতারণার কারণে প্রভৃতি বিষয়ে মামলা হয়ে থাকে, এ রূপ ক্ষেত্রে আসামিকে যখন গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হবে অথবা স্বেচ্ছায় যখন সে আদালতে হারি হবে তখন আদালত পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এডিআর গ্রহণের ন্য সংক্ষিপ্ত একটি তারিখ নির্ধারণ এবং আদালত এাহারকারী, ভিকটিম ও আসামির বক্তব্য শ্রবণান্তে এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন—এ বিধান করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলে এ ক্ষেত্রেও একটি চুক্তিনামা হবে, ওই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হলে ওই চুক্তিনামায় পক্ষগণ যা স্বীকার বা অস্বীকার করবে তা পরবর্তী সময়ে বিচারকালে স্বীকৃত/অস্বীকৃত রূপে সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে এবং পক্ষদ্বয় ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় বর্ণিত স্টপেল নীতি দ্বারা বারিত হবে মর্মে বিধান করা যায়, যা এডিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.