মেধার স্বীকৃতি পেলেন তিন তরুণ by নিজাম সিদ্দিকী

হূষীকেশ দাশগুপ্ত, প্রিয়ম দাশ ও আসিফ ইমরান। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন তাঁরা। বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন চট্টগ্রামের তিনটি আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ তিন শিক্ষার্থী। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ে তাঁরা সুযোগটি লাভ করেছেন।


এ জন্য প্রথমত তাঁদের পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি নেটের মাধ্যমে মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হয় তাঁদের।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে যন্ত্রকৌশল বিভাগে স্নাতক হূষীকেশ কানাডার ‘ম্যাক মাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্স বিভাগে পড়াশোনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে তাঁর কাজ করার কথা রয়েছে। দুই বছর মেয়াদের এ উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমে তাঁকে কোনো টিউশন ফি দিতে হবে না। বিনা খরচায় পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।
হূষীকেশের ইচ্ছে, ‘সুযোগ পেলে আমি সেখানে পিএইচডি করব। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’
গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেন হূষীকেশ। ডিসেম্বরে তাঁর ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি ই-মেইলে জানানো হয় তাঁকে। নেটে আবেদনের সময় অনেক সংশয় ছিল মনে। ‘এমনি একটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রাম থেকে আবেদন করছি, সাড়া দেবে তো কর্তৃপক্ষ।’ শেষ পর্যন্ত সাড়া পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় হূষীর। তাঁর মতে, ‘আমরা অহেতুক ভয় পাই। ঠিকমতো খোঁজখবর নিয়ে উপযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে সাড়া পাওয়া যাবে এবং সফলও হওয়া যাবে।’
প্রয়াত প্রণব কুমার দাশগুপ্তের ছেলে হূষীকেশের মা মমতা দাশগুপ্তা সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুলের শিক্ষক। হূষী এ মাসেই কানাডা যাচ্ছেন ।
প্রিয়ম দাশ মালয়েশিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অব মালয়ে’ তিন বছর মেয়াদে ইকনোমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ থেকে ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল শেষ করেছেন।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রিয়ম ভর্তির জন্য আবেদন করেন। নির্বাচিত হওয়ার খবর আসে এপ্রিলে। জানা গেছে, এ বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সারা দেশ থেকে আটজন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এঁদের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রিয়ম ও তাঁর অপর একজন বন্ধুই শেষ পর্যন্ত টিকেছেন।
প্রিয়মের মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ নিজের। কিন্তু তিন বছর পড়ার খরচ জোগাবে ইউনিভার্সিটি অব মালয় কর্তৃপক্ষ। সুযোগ হলে এমবিএ ডিগ্রিও সেরে নেওয়ার ইচ্ছে আছে এখান থেকে। প্রিয়মের বাবা সাংবাদিক নির্মল দাশ। মা তপতী দাশ। ২৮ আগস্ট মালয়েশিয়া পাড়ি দেবেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেক বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী আসিফ ইমরান। তিনি জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি অব বনে’ লাইফ সায়েন্স ইনফোরমেটিক্সে এম এস পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য তিনি এ বছরের মার্চে আবেদন করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ২১ মে ফলাফল জানানো হয় তাঁকে ই-মেইলে। আসিফ বন বিশ্ববিদালয়ে দুই বছর পড়াশোনা করবেন। কোনো টিউশন ফি দিতে হবে না এ সময়ে। বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ড্রাগ ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ রয়েছে আসিফের। তাঁর মতে, আগামী ২০১৭ সাল থেকে আর মেধাস্বত্ব আইন প্রযোজ্য হবে না। ফলে নিজেদের উদ্ভাবিত কোনো ওষুধ না থাকলে স্বভাবতই ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। আর এ চিন্তা থেকেই আসিফ ড্রাগ ডিজাইনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
আসিফের বাবা রফিক আহমেদ ব্যবসায়ী। মা জান্নাতুল ফেরদৌস গৃহিণী। তিনি এ বছরের অক্টোবর মাসে জার্মানি যাবেন।

No comments

Powered by Blogger.