প্রতিরোধের অন্তরায়
বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ জেনেও তা হচ্ছে। এটি প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইউনিসেফ ২০০৬ সাল থেকে কিশোরী অভিযান নামের একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বর্তমানে দেশের ৫৯টি জেলায় এ কর্মসূচি চলছে।
এতে কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক ও এলাকার লোকজন বাল্যবিবাহের কুফলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। তার পরও এটি ঠেকানো যাচ্ছে না।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে প্রচারণা অনেক বেড়েছে। তার পরও অভিভাবকেরা মেয়ের বয়স বা বাল্যবিবাহের ক্ষতির বিষয়টি ভেবে দেখেন না। তাঁরা মেয়ের বিয়ে দেওয়াকেই প্রধান দায়িত্ব মনে করে তা শেষ করতে চান। এ ছাড়া ভাবেন, ‘আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিচ্ছি, তাতে কার কী!’ এ কারণে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না।
মন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আলাদা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সূত্রে বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে কয়েকটি বিয়ে ঠেকাতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বেসরকারি সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট ১৯টি জেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। ২০০২ সালে সংস্থাটি জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে প্রথম প্রচার শুরু করে। ২০০৬ সালে জন্মনিবন্ধন আইনকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া ১৯টি এলাকার কাজিরা বিয়ে পড়াবেন না বলে চুক্তিপত্রে সই করেছেন। বর্তমানে সংস্থাটি আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্মে জন্মনিবন্ধনের নম্বরটি দেওয়ার জন্য একটি কলাম রাখার বিষয়ে কাজ করছে। তবে এত কিছুর পরও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, কর্ম এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা এখনো আছে। কাগজে-কলমে বাল্যবিবাহ হতে পারছে না, কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদ পরিবর্তন করে ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুল তথ্যের জন্মসনদ দিয়ে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, তা আমরাও জানি। অনেক সময় জন্মনিবন্ধনকারীরা ভুল বয়স লিখে জন্মসনদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় হাতে লেখা সঠিক জন্মসনদে বয়সটা পাল্টে ফেলা হচ্ছে।’
সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জন্মসনদ যাতে কোনোভাবেই পরিবর্তন করতে না পারে, এ জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে সব নিবন্ধন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। এরপর আর হাতে লেখা জন্মসনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া ভুল তথ্য দিলে শাস্তির বিধান রেখে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন (সংশোধন) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শাস্তি হচ্ছে, ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনধিক ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। আইন মন্ত্রণালয় অনলাইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়েও কাজ করছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজিদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু এই কাজিদের সহায়তায় বাল্যবিবাহ হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ক্ষুদি ছয়ঘটি গ্রামের কাজি মাসুদ রানা বলেন, ‘মেয়ের বয়স কম মনে হলে আমরা প্রথমত বিয়ে নিবন্ধন করতে আপত্তি করি। তখন মেয়ের মা-বাবা এসে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ১৮ বছর পর্যন্ত মেয়ে ঘরে রাখত পারব না। পথেঘাটে ছেলেরা বিরক্ত করে। স্কুলে ভর্তি করার সময় মেয়ের বয়স কম দেখিয়েছিলাম।...”
মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘যখন মা-বাবা ১৮ বছর বয়সের জন্মসনদ নিয়ে আসেন, তখন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বয়স কম মনে হলেও আমাদের কিছু করার থাকে না। তা ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও এলাকার মাতবরেরা এসে চাপ দেন। তখন বাধ্য হয়ে বিয়ে নিবন্ধন করাতে হয়।’
তবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি মো. ওয়াহেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় ভোটার আইডি কার্ড ও জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশ অমান্য করায় অনেক কাজির শাস্তিও হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে কাজির দায়িত্ব পালন করা এই কাজির মতে, অনেক সময় বর ও কনেপক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ পড়ানোর জন্য চাপ আসে। এ ক্ষেত্রে কাজি যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেন, তাহলেই বিয়েটি বন্ধ করা সম্ভব।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেহের আফরোজও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পরিবারকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবারের পরই আছে সমাজের মন-মানসিকতা। মেয়ে একটু বড় হলেই সেই পরিবারের প্রতি বিভিন্ন চাপ আসতে থাকে মেয়ের বিয়ের জন্য। মেহের আফরোজ তাঁর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, মা-বাবাসহ অন্যদের শাস্তির পাশাপাশি এলাকায় কেউ বাল্যবিবাহের দাওয়াত খেতে গেলেও তাকে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে এলাকায় বাল্যবিবাহ অনেকাংশেই ঠেকানো গেছে। তবে অভিভাবকেরা গোপনে অন্য এলাকায় নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে প্রচারণা অনেক বেড়েছে। তার পরও অভিভাবকেরা মেয়ের বয়স বা বাল্যবিবাহের ক্ষতির বিষয়টি ভেবে দেখেন না। তাঁরা মেয়ের বিয়ে দেওয়াকেই প্রধান দায়িত্ব মনে করে তা শেষ করতে চান। এ ছাড়া ভাবেন, ‘আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিচ্ছি, তাতে কার কী!’ এ কারণে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না।
মন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আলাদা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সূত্রে বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে কয়েকটি বিয়ে ঠেকাতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বেসরকারি সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট ১৯টি জেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। ২০০২ সালে সংস্থাটি জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে প্রথম প্রচার শুরু করে। ২০০৬ সালে জন্মনিবন্ধন আইনকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া ১৯টি এলাকার কাজিরা বিয়ে পড়াবেন না বলে চুক্তিপত্রে সই করেছেন। বর্তমানে সংস্থাটি আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্মে জন্মনিবন্ধনের নম্বরটি দেওয়ার জন্য একটি কলাম রাখার বিষয়ে কাজ করছে। তবে এত কিছুর পরও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, কর্ম এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা এখনো আছে। কাগজে-কলমে বাল্যবিবাহ হতে পারছে না, কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদ পরিবর্তন করে ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুল তথ্যের জন্মসনদ দিয়ে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, তা আমরাও জানি। অনেক সময় জন্মনিবন্ধনকারীরা ভুল বয়স লিখে জন্মসনদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় হাতে লেখা সঠিক জন্মসনদে বয়সটা পাল্টে ফেলা হচ্ছে।’
সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জন্মসনদ যাতে কোনোভাবেই পরিবর্তন করতে না পারে, এ জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে সব নিবন্ধন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। এরপর আর হাতে লেখা জন্মসনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া ভুল তথ্য দিলে শাস্তির বিধান রেখে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন (সংশোধন) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শাস্তি হচ্ছে, ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনধিক ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। আইন মন্ত্রণালয় অনলাইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়েও কাজ করছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজিদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু এই কাজিদের সহায়তায় বাল্যবিবাহ হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ক্ষুদি ছয়ঘটি গ্রামের কাজি মাসুদ রানা বলেন, ‘মেয়ের বয়স কম মনে হলে আমরা প্রথমত বিয়ে নিবন্ধন করতে আপত্তি করি। তখন মেয়ের মা-বাবা এসে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ১৮ বছর পর্যন্ত মেয়ে ঘরে রাখত পারব না। পথেঘাটে ছেলেরা বিরক্ত করে। স্কুলে ভর্তি করার সময় মেয়ের বয়স কম দেখিয়েছিলাম।...”
মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘যখন মা-বাবা ১৮ বছর বয়সের জন্মসনদ নিয়ে আসেন, তখন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বয়স কম মনে হলেও আমাদের কিছু করার থাকে না। তা ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও এলাকার মাতবরেরা এসে চাপ দেন। তখন বাধ্য হয়ে বিয়ে নিবন্ধন করাতে হয়।’
তবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি মো. ওয়াহেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় ভোটার আইডি কার্ড ও জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশ অমান্য করায় অনেক কাজির শাস্তিও হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে কাজির দায়িত্ব পালন করা এই কাজির মতে, অনেক সময় বর ও কনেপক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ পড়ানোর জন্য চাপ আসে। এ ক্ষেত্রে কাজি যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেন, তাহলেই বিয়েটি বন্ধ করা সম্ভব।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেহের আফরোজও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পরিবারকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবারের পরই আছে সমাজের মন-মানসিকতা। মেয়ে একটু বড় হলেই সেই পরিবারের প্রতি বিভিন্ন চাপ আসতে থাকে মেয়ের বিয়ের জন্য। মেহের আফরোজ তাঁর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, মা-বাবাসহ অন্যদের শাস্তির পাশাপাশি এলাকায় কেউ বাল্যবিবাহের দাওয়াত খেতে গেলেও তাকে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে এলাকায় বাল্যবিবাহ অনেকাংশেই ঠেকানো গেছে। তবে অভিভাবকেরা গোপনে অন্য এলাকায় নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।
No comments