নাটকে শেকড় সন্ধান, নিজস্ব শিল্পরীতি ॥ উয়ারী বটেশ্বরের নিদর্শন- শিল্পকলায় সপ্তাহব্যাপী সেলিম আল দীন নাট্য উৎসব by মোরসালিন মিজান
জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীর গদবাঁধা আয়োজন নয়। শোক আর স্মরণ নয় শুধু। এর একটু বেশি চেয়েছিলেন আয়োজকরা। সে চিন্তা থেকেই সেলিম আল দীন উৎসবের পরিকল্পনা। কিছু দিন মাথায় ছিল। আর বাস্তবায়ন হলো শনিবার। এদিন শিল্পকলা একাডেমীর সহায়তায় ব্যতিক্রমী এ উৎসবের আয়োজন করে সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন।
এর সঙ্গে যথারীতি সম্পৃক্ত আছে ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।
দেশের ১২টি ও কলকাতার ২টিসহ মোট ১৪টি মঞ্চনাটক মঞ্চস্থ হবে উৎসবে। তবে উৎসবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে উয়ারী-বটেশ^রে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। অমূল্য এসব নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বাঙালীর অতীত কত সমৃদ্ধ। শেকড় কত গভীরে প্রথিত। মূলত এ কারণেই অন্যেরটা ধার করার চেয়ে নিজের শেকড়ের সন্ধান করাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন সেলিম আল দীন। বাঙালীর নিজস্ব নাট্যরীতিকে আশ্রয় করেছিলেন তিনি। শেকড় খোঁজার নেশা তাঁর নাটকে স্পষ্ট। এমন নাটক আর উয়ারী-বটেশ্বরের অমূল্য স্মারকগুলো যেন একই আহ্বান জানিয়ে যায়। আর তা হচ্ছে শেকড়ের সন্ধান কর। উৎসবের আয়োজকরাও তাই ঘোষণা দিয়ে বলছেন শেকড়ের সন্ধানে আমাদের যাত্রা। এ যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্পে শুরু হয়েছে উৎসব।
শিল্পকলা একাডেমীর বহিরাঙ্গনে শনিবার সন্ধ্যায় সপ্তাহব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। পর্ষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব বাবুল বিশ^াস। উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সালাউদ্দীন জাকী, অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ ও সেলিম আল দীনের পতœী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা।
উৎসবের উদ্বোধন করে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সেলিম আল দীনের যখন জন্ম তখন দক্ষিণ স্বাধীন হয়ে গেছে। এক ধরনের স্বাধীন। তবে তাঁর যখন তরুণ বয়স তখন এ দেশ এক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছিল। ঔপনিবেশিক ও নব্য ঔপনিবেশিক অবস্থার সঙ্গে নিজের মতো করে মোকাবেলা করতে চেয়েছিলেন সেলিম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যখন মৃত্যু হয় তখন এই নাট্যকারের ষাট বছর হয়নি। চিন্তা করে দেখলাম, রবি ঠাকুর যদি এ বয়সে মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে আমরা কত না বঞ্চিত হতাম! সেলিম আল দীনের মৃত্যুতেও বঞ্চিত হয়েছি আমরা। তিনি হয়ত অনুমান করতে পেরেছিলেন, বেশি দিন বাঁচবেন না। আর তাই প্রচুর কাজ করে গেছেন। সেলিম আল দীনের সফল কর্মময় জীবনের উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নাট্যকোষ রচয়িতা। মধ্যযুগের নাট্যতত্ত্ব সম্পর্কে অনুপুঙ্খ আলোচনা করে গেছেন তিনি। অতীত থেকে যা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েছেন। তাঁর অনুশীলনে আমাদের অতীত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। আমরা উজ্জীবিত হয়েছি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও শিমুল ইউসুফের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যে মশাল সেলিম আল দীন জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তা তাঁর প্রাণসখা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও প্রাণসখার স্ত্রী শিমুল ইউসুফ সদর্পে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উৎসবের সঙ্গে ওয়ারী-বটেশ্বরের সংযোগ স্থাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অতীতের অনুসন্ধানে আছি। অস্তিত্বের অনুসন্ধানে আছি। এটি আমাদের অহঙ্কার। তবে কোন ব্যাপারেই আমরা অতিরঞ্জন করব না।
আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, সেলিম আল দীন শেকড়ের সন্ধান করতেন। সে একই কাজ করছেন প্রতœতাত্ত্বিকরা। সে কাজের কিছু নিদর্শন বটেশ্বর থেকে এ উৎসবে আনা হয়েছে। এটি চমৎকার উদ্যোগ। এর পর তিনি প্রশ্নের সুরে বলেন, আসলে আমরা কেন অতীতে ফিরে যাই? কেন আমরা শেকড়ের সন্ধান করি? উত্তরে বলেন, কারণ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি। তার নিরিখে বর্তমানকে নির্মাণ করতে পারি। একইভাবে ভবিষ্যতের পথটি খুঁজে নেয়া সহজ হয়। সেলিম আল দীন শেকড়ের সন্ধান করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁকে নানাভাবে আবিষ্কার করতে হবে। তবে এ জন্য সেলিম আল দীন পাঠের ওপর জোর দেন তিনি। সেলিম আল দীন দ্বারা উৎসাহিত অনেক তরুণ নির্দেশকদের নাটক এ উৎসবে রাখায় নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান রামেন্দু মজুমদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের রেশ ধরে অনুষ্ঠানের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সেলিম আল দীন ঔপনিবেশিক শিল্পভাবনা ও শিল্প রীতি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর পরিবর্তে বাঙালীর হাজার বছরের নিজস্ব শিল্পরীতি শিল্পভনাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এভাবে নতুন সৃষ্টির পথে হেঁটেছেন তিনি। আমরা সে পথে হেঁটেই বৃহত্তর অর্জনের স্বপ্ন দেখি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় মূল আয়োজন নাট্য প্রদর্শনী। এদিন একই সময় দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা থিয়েটারের আলোচিত প্রযোজনা ‘দ্য টেম্পেস্ট’। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রচনা থেকে এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। বাংলা নাট্যরীতিতে নির্মিত নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। মাত্র কিছু দিন আগে এটি মঞ্চস্থ হয়েছে লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে। আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়ালেও দেশের অনেকেই এটি দেখতে পারেননি। হয়ত তাই প্রথম দিনের উৎসব এক রকম দখলে নিয়েছিল ‘টেমপেস্ট’। বড় হলের প্রতিটি আসন ছিল পূর্ণ। বহু দর্শক জায়গার অভাবে দেখতে পারেননি।
অবশ্য পরীক্ষণ থিয়েটারেও প্রচুর দর্শক ছিল। একই সময় এখানে মঞ্চস্থ হয় দৃষ্টিপাত প্রযোজনা ‘রাজা হিমাদ্রি।’ সফোক্লিসের ইডিপাস অবলম্বনে ও শম্ভু মিত্রের অনুবাদ থেকে নির্মিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন খন্দকার তাজমি নূর। এটিও নতুন প্রযোজনা। কয়েকবার মাত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। ফলে দর্শকের কৌতূহল ছিল। ভাললাগা নিয়ে নাটকটি উপভোগ করেছেন তারা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ রবিবার জাতীয় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক ‘জ্যোতিসংহিতা’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাটের ‘রাজা এবং অন্যান্য...।’ তৃতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে সেলিম আল দীন রচিত ঢাকা থিয়েটার প্রযোজনা ‘ধাবমান’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করবে ‘নিশিমন-বিসর্জন’। মঙ্গলবার একাডেমীর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। উয়ারী-বটেশ্বর : শেকড়ের সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করবেন সুফী মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে কলকাতার নাট্যদল নয়ে নাটুয়ার দুটি প্রযোজনা বড়দা বড়দা ও কাব্যে গানে। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ইউনিভার্সেল থিয়েটার প্রযোজনা ‘মহাত্মা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে চট্টগ্রামের তির্যক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘রক্তকরবী’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘মহাজনের নাও’ পরিবেশন করবে সুবচন নাট্য সংসদ। এদিন একই সময় স্টুডিও থিয়েটার হলে দ্যাশ বাংলা থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে ‘কঙ্কাল ও সাড়ে তিন হাত।’ উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে কলকাতার নাট্যদল তৃতীয় সূত্র প্রযোজনা ‘বিসর্জন’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে সময় নাট্যদলের ‘শেষ সংলাপ’। স্টুডিও থিয়েটারে থাকবে আবৃত্তি প্রযোজনা। ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন হাসান আরিফ। সমাপনী দিন ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে ঘোষণা করা হবে মীর মকসুদ-উস-সালেহীনÑবজলুল করিম সম্মাননা প্রাপ্তদের নাম। এ ছাড়াও থিয়েটারের অকাল প্রয়াত নাট্যকর্মী ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলীর নামে প্রবর্তিত প্রদক দেয়া হবে দুই তরুণ নাট্যকর্মীকে।
উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে থাকবে নাটক প্রদর্শনী। এ ছাড়া উয়ারী-বটেশ্বরের বিভিন্ন নিদর্শন মূল মিলনায়তনের লবিতে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে প্রদর্শিত হবে।
দেশের ১২টি ও কলকাতার ২টিসহ মোট ১৪টি মঞ্চনাটক মঞ্চস্থ হবে উৎসবে। তবে উৎসবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে উয়ারী-বটেশ^রে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। অমূল্য এসব নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বাঙালীর অতীত কত সমৃদ্ধ। শেকড় কত গভীরে প্রথিত। মূলত এ কারণেই অন্যেরটা ধার করার চেয়ে নিজের শেকড়ের সন্ধান করাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন সেলিম আল দীন। বাঙালীর নিজস্ব নাট্যরীতিকে আশ্রয় করেছিলেন তিনি। শেকড় খোঁজার নেশা তাঁর নাটকে স্পষ্ট। এমন নাটক আর উয়ারী-বটেশ্বরের অমূল্য স্মারকগুলো যেন একই আহ্বান জানিয়ে যায়। আর তা হচ্ছে শেকড়ের সন্ধান কর। উৎসবের আয়োজকরাও তাই ঘোষণা দিয়ে বলছেন শেকড়ের সন্ধানে আমাদের যাত্রা। এ যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্পে শুরু হয়েছে উৎসব।
শিল্পকলা একাডেমীর বহিরাঙ্গনে শনিবার সন্ধ্যায় সপ্তাহব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। পর্ষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব বাবুল বিশ^াস। উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সালাউদ্দীন জাকী, অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ ও সেলিম আল দীনের পতœী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা।
উৎসবের উদ্বোধন করে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সেলিম আল দীনের যখন জন্ম তখন দক্ষিণ স্বাধীন হয়ে গেছে। এক ধরনের স্বাধীন। তবে তাঁর যখন তরুণ বয়স তখন এ দেশ এক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছিল। ঔপনিবেশিক ও নব্য ঔপনিবেশিক অবস্থার সঙ্গে নিজের মতো করে মোকাবেলা করতে চেয়েছিলেন সেলিম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যখন মৃত্যু হয় তখন এই নাট্যকারের ষাট বছর হয়নি। চিন্তা করে দেখলাম, রবি ঠাকুর যদি এ বয়সে মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে আমরা কত না বঞ্চিত হতাম! সেলিম আল দীনের মৃত্যুতেও বঞ্চিত হয়েছি আমরা। তিনি হয়ত অনুমান করতে পেরেছিলেন, বেশি দিন বাঁচবেন না। আর তাই প্রচুর কাজ করে গেছেন। সেলিম আল দীনের সফল কর্মময় জীবনের উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নাট্যকোষ রচয়িতা। মধ্যযুগের নাট্যতত্ত্ব সম্পর্কে অনুপুঙ্খ আলোচনা করে গেছেন তিনি। অতীত থেকে যা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েছেন। তাঁর অনুশীলনে আমাদের অতীত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। আমরা উজ্জীবিত হয়েছি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও শিমুল ইউসুফের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যে মশাল সেলিম আল দীন জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তা তাঁর প্রাণসখা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও প্রাণসখার স্ত্রী শিমুল ইউসুফ সদর্পে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উৎসবের সঙ্গে ওয়ারী-বটেশ্বরের সংযোগ স্থাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অতীতের অনুসন্ধানে আছি। অস্তিত্বের অনুসন্ধানে আছি। এটি আমাদের অহঙ্কার। তবে কোন ব্যাপারেই আমরা অতিরঞ্জন করব না।
আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, সেলিম আল দীন শেকড়ের সন্ধান করতেন। সে একই কাজ করছেন প্রতœতাত্ত্বিকরা। সে কাজের কিছু নিদর্শন বটেশ্বর থেকে এ উৎসবে আনা হয়েছে। এটি চমৎকার উদ্যোগ। এর পর তিনি প্রশ্নের সুরে বলেন, আসলে আমরা কেন অতীতে ফিরে যাই? কেন আমরা শেকড়ের সন্ধান করি? উত্তরে বলেন, কারণ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি। তার নিরিখে বর্তমানকে নির্মাণ করতে পারি। একইভাবে ভবিষ্যতের পথটি খুঁজে নেয়া সহজ হয়। সেলিম আল দীন শেকড়ের সন্ধান করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁকে নানাভাবে আবিষ্কার করতে হবে। তবে এ জন্য সেলিম আল দীন পাঠের ওপর জোর দেন তিনি। সেলিম আল দীন দ্বারা উৎসাহিত অনেক তরুণ নির্দেশকদের নাটক এ উৎসবে রাখায় নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান রামেন্দু মজুমদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের রেশ ধরে অনুষ্ঠানের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সেলিম আল দীন ঔপনিবেশিক শিল্পভাবনা ও শিল্প রীতি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর পরিবর্তে বাঙালীর হাজার বছরের নিজস্ব শিল্পরীতি শিল্পভনাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এভাবে নতুন সৃষ্টির পথে হেঁটেছেন তিনি। আমরা সে পথে হেঁটেই বৃহত্তর অর্জনের স্বপ্ন দেখি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় মূল আয়োজন নাট্য প্রদর্শনী। এদিন একই সময় দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা থিয়েটারের আলোচিত প্রযোজনা ‘দ্য টেম্পেস্ট’। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রচনা থেকে এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। বাংলা নাট্যরীতিতে নির্মিত নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। মাত্র কিছু দিন আগে এটি মঞ্চস্থ হয়েছে লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে। আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়ালেও দেশের অনেকেই এটি দেখতে পারেননি। হয়ত তাই প্রথম দিনের উৎসব এক রকম দখলে নিয়েছিল ‘টেমপেস্ট’। বড় হলের প্রতিটি আসন ছিল পূর্ণ। বহু দর্শক জায়গার অভাবে দেখতে পারেননি।
অবশ্য পরীক্ষণ থিয়েটারেও প্রচুর দর্শক ছিল। একই সময় এখানে মঞ্চস্থ হয় দৃষ্টিপাত প্রযোজনা ‘রাজা হিমাদ্রি।’ সফোক্লিসের ইডিপাস অবলম্বনে ও শম্ভু মিত্রের অনুবাদ থেকে নির্মিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন খন্দকার তাজমি নূর। এটিও নতুন প্রযোজনা। কয়েকবার মাত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। ফলে দর্শকের কৌতূহল ছিল। ভাললাগা নিয়ে নাটকটি উপভোগ করেছেন তারা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ রবিবার জাতীয় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক ‘জ্যোতিসংহিতা’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাটের ‘রাজা এবং অন্যান্য...।’ তৃতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে সেলিম আল দীন রচিত ঢাকা থিয়েটার প্রযোজনা ‘ধাবমান’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করবে ‘নিশিমন-বিসর্জন’। মঙ্গলবার একাডেমীর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। উয়ারী-বটেশ্বর : শেকড়ের সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করবেন সুফী মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে কলকাতার নাট্যদল নয়ে নাটুয়ার দুটি প্রযোজনা বড়দা বড়দা ও কাব্যে গানে। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ইউনিভার্সেল থিয়েটার প্রযোজনা ‘মহাত্মা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে চট্টগ্রামের তির্যক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘রক্তকরবী’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘মহাজনের নাও’ পরিবেশন করবে সুবচন নাট্য সংসদ। এদিন একই সময় স্টুডিও থিয়েটার হলে দ্যাশ বাংলা থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে ‘কঙ্কাল ও সাড়ে তিন হাত।’ উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় নাট্যশালায় পরিবেশিত হবে কলকাতার নাট্যদল তৃতীয় সূত্র প্রযোজনা ‘বিসর্জন’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে সময় নাট্যদলের ‘শেষ সংলাপ’। স্টুডিও থিয়েটারে থাকবে আবৃত্তি প্রযোজনা। ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন হাসান আরিফ। সমাপনী দিন ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে ঘোষণা করা হবে মীর মকসুদ-উস-সালেহীনÑবজলুল করিম সম্মাননা প্রাপ্তদের নাম। এ ছাড়াও থিয়েটারের অকাল প্রয়াত নাট্যকর্মী ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলীর নামে প্রবর্তিত প্রদক দেয়া হবে দুই তরুণ নাট্যকর্মীকে।
উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে থাকবে নাটক প্রদর্শনী। এ ছাড়া উয়ারী-বটেশ্বরের বিভিন্ন নিদর্শন মূল মিলনায়তনের লবিতে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে প্রদর্শিত হবে।
No comments