সরেজমিন ময়মনসিংহ- ‘রাজনৈতিক বাণিজ্য’ নিয়ে আওয়ামী লীগে উদ্বেগ by রাজীব নূর
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পৌরসভা ও গৌরীপুর উপজেলায় সদরের সাংসদ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং হালুয়াঘাট উপজেলায় সেখানকার সাংসদ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের বিরুদ্ধে গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ‘রাজনৈতিক বাণিজ্য’ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ময়মনসিংহের রাজনীতির হালচাল বুঝতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ অভিযোগ তোলেন। আগামী বছরজুড়ে পৌরসভা ও বছরের শেষ ভাগে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় গত নির্বাচনের ‘কালো দিকগুলো’ আবার কর্মীদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। তাঁদের উদ্বেগ, সরকারের শেষ সময়ে চলমান পরিস্থিতিতে আবার এমন ঘটনা ঘটলে জেলায় দল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সদর উপজেলা: ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাচনে এস এম ইসহাককে দলের সমর্থন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ নিয়েছেন বলে সাংসদ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। ইসহাক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সাংসদের এই প্রার্থী পরাজিত হলেও তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আশরাফ হোসাইন বিজয়ী হন। আশরাফ হোসাইন মনোনয়ন পাওয়ার বিনিময়ে অধ্যক্ষ মতিউরকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়েজুর রহমান ফকির দাবি করেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অনিয়মের জন্ম হয়, তাতেই বিতর্কিত হতে শুরু করেন সাংসদ মতিউর রহমান। তিনি বলেন, তাঁর মনে হয়েছিল, অধ্যক্ষ মতিউর স্বয়ং আত্মীয় এস এম ইসহাককে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের ভোটকে প্রভাবিত করছেন। তাই তিনি (ফকির) তৃণমূলের ওই ভোট শেষ হওয়ার আগেই স্বতন্ত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে যান।
সাংসদ মতিউর রহমান অবশ্য প্রথম আলোর কাছে এস এম ইসহাকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে আশরাফ হোসাইনের কাছ থেকে একটি গাড়ি নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আশরাফ আমার ডাক্তার ছেলের বন্ধু। সংসদ নির্বাচনের আগেই ও আমাকে একটি গাড়ি ব্যবহার করতে দিয়েছিল, যা এখনো আমার কাছে আছে। এ গাড়ির সঙ্গে উপজেলায় ওর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি মিলিয়ে ফেলা হলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে।’
জানা গেছে, সাংসদ মতিউর রহমানের পরিবার দুটি গাড়ি ব্যবহার করে। একটি টয়োটা এসটিমা, যা আশরাফ হোসাইন তাঁকে দিয়েছিলেন। অন্যটি টয়োটা প্রাডো। সাংসদের দাবি, এসটিমা গাড়িটিই হচ্ছে আশরাফ হোসাইনের আর প্রাডো গাড়িটি তিনি কিনেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত কোটায় গাড়িটির জন্য তাঁকে ২৯ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এ টাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ মতিউর বলেছিলেন, একটি গরুর খামারই তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস। জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তিনি রিকশা-ভ্যানে চলাফেরায় অভ্যস্ত—নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। তবে গত সাড়ে তিন বছরে সাংসদ মতিউরের বাড়ির প্রতিটি ঘরে লেগেছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। বাসায় এসেছে অত্যাধুনিক আসবাব।
মতিউর রহমানকে ওই সাক্ষাৎকারের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমার এখনো একটি গরুর খামার ছাড়া তেমন কিছুই নেই।’ তাহলে অর্থবিত্ত কী করে বাড়ছে—জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার ছেলেদের একজন ডাক্তার, মেয়ে থাকে কানাডায়। তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বড় ছেলে শান্ত (মুহিতউর রহমান) ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছে, সে-ও সংসারের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।’
ময়মনসিংহ পৌরসভা: মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ পৌরসভা নির্বাচনে দলের তৃণমূল থেকে মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ওরফে তারাকে দলীয় সমর্থন না দিয়ে বর্তমান পৌর মেয়র ইকরামুল হক ওরফে টিটুকে সমর্থন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচনের দিন টিটুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে তাঁর (টিটু) বড় ভাই ব্যবসায়ী আমিনুল হক ওরফে শামীমকে দায়িত্ব দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাংসদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থীকে কেন নির্বাচন করতে দেওয়া হলো না—এ প্রশ্নের জবাব তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন সাংসদ মতিউর। তিনি বলেন, এ ব্যাপারটা জানা আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির। তিনি ইকরামুল হককে জিতিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ চেষ্টার পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আমার আস্থার প্রমাণ।’
গৌরীপুর উপজেলা: আওয়ামী লীগ-সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রতন সরকার দলের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মনোনীত হন এবং দল তাঁকে সমর্থনও করে। কিন্তু সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (পরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী) ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির বিদ্রোহী প্রার্থী আলী আহমেদ খান পাঠান ওরফে সেলভির পক্ষে নির্বাচন করেন। রতন সরকার ৩৯২ ভোটে হেরে যান।
মজিবুর রহমান ফকিরের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূলের মনোনয়ন বিপক্ষে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তাঁর নয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মতিউর রহমানের। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী সেলভি মতিউরের ভাগনিজামাই। এখন আবার এও শুনতে পাচ্ছি, আসছে সংসদ নির্বাচনে সেলভিকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলার পরিকল্পনা চলছে।’
হালুয়াঘাট: নেতা-কর্মীদের মতে, তৃণমূলের ভোটে মনোনীতদের উপেক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ-১) থেকে তৃণমূলের ভোটাররা তাঁকেই সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু জেলা বা কেন্দ্র তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তাঁর ধারণা, বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তদের কাউকে কাউকে মনোনয়ন দেননি। এ ক্ষেত্রে কোনো বাণিজ্য ছিল না। প্রমোদ মানকিনকে দলের প্রার্থী করা হয়।
ফারুক আহমেদ জানান, মনোনয়ন না পেলেও তিনি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী প্রমোদ মানকিনের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। কিন্তু পরে তিনি যখন উপজেলা নির্বাচনে দলের সমর্থন পেলেন, তখন প্রমোদ মানকিন প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। তিনি বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আলী আজগরকে জিতিয়ে আনেন। ফারুকের মতে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রমোদ মানকিনের প্রকাশ্য ভূমিকা নেওয়ার পেছনে রয়েছে হালুয়াঘাটের দুটি শুল্ক স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা সমিতির বাণিজ্য।
কয়লা শুল্ক স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়া আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি হয়েছেন প্রমোদ মানকিন, আর সাধারণ সম্পাদক হলেন আলী আজগর। সম্প্রতি এ সমিতিটিকে আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপ নাম দিয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে নিবন্ধন করা হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন প্রথম আলোর কাছে বিএনপির নেতা আলী আজগরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সহাবস্থানই ময়মনসিংহের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য।’ তিনি দাবি করেন, দলীয় স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কাজে কখনো যুক্ত ছিলেন না, ভবিষ্যতেও থাকবেন না।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার বলেন, দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তাঁরা যেন তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে আর উপেক্ষা না করেন। তাঁর মতে, তৃণমূলের সিদ্ধান্ত মেনে চললে ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে কেনাবেচার জায়গায় নিতে পারবেন না।
সদর উপজেলা: ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাচনে এস এম ইসহাককে দলের সমর্থন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ নিয়েছেন বলে সাংসদ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। ইসহাক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সাংসদের এই প্রার্থী পরাজিত হলেও তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আশরাফ হোসাইন বিজয়ী হন। আশরাফ হোসাইন মনোনয়ন পাওয়ার বিনিময়ে অধ্যক্ষ মতিউরকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়েজুর রহমান ফকির দাবি করেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অনিয়মের জন্ম হয়, তাতেই বিতর্কিত হতে শুরু করেন সাংসদ মতিউর রহমান। তিনি বলেন, তাঁর মনে হয়েছিল, অধ্যক্ষ মতিউর স্বয়ং আত্মীয় এস এম ইসহাককে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের ভোটকে প্রভাবিত করছেন। তাই তিনি (ফকির) তৃণমূলের ওই ভোট শেষ হওয়ার আগেই স্বতন্ত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে যান।
সাংসদ মতিউর রহমান অবশ্য প্রথম আলোর কাছে এস এম ইসহাকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে আশরাফ হোসাইনের কাছ থেকে একটি গাড়ি নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আশরাফ আমার ডাক্তার ছেলের বন্ধু। সংসদ নির্বাচনের আগেই ও আমাকে একটি গাড়ি ব্যবহার করতে দিয়েছিল, যা এখনো আমার কাছে আছে। এ গাড়ির সঙ্গে উপজেলায় ওর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি মিলিয়ে ফেলা হলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে।’
জানা গেছে, সাংসদ মতিউর রহমানের পরিবার দুটি গাড়ি ব্যবহার করে। একটি টয়োটা এসটিমা, যা আশরাফ হোসাইন তাঁকে দিয়েছিলেন। অন্যটি টয়োটা প্রাডো। সাংসদের দাবি, এসটিমা গাড়িটিই হচ্ছে আশরাফ হোসাইনের আর প্রাডো গাড়িটি তিনি কিনেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত কোটায় গাড়িটির জন্য তাঁকে ২৯ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এ টাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ মতিউর বলেছিলেন, একটি গরুর খামারই তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস। জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তিনি রিকশা-ভ্যানে চলাফেরায় অভ্যস্ত—নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। তবে গত সাড়ে তিন বছরে সাংসদ মতিউরের বাড়ির প্রতিটি ঘরে লেগেছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। বাসায় এসেছে অত্যাধুনিক আসবাব।
মতিউর রহমানকে ওই সাক্ষাৎকারের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমার এখনো একটি গরুর খামার ছাড়া তেমন কিছুই নেই।’ তাহলে অর্থবিত্ত কী করে বাড়ছে—জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার ছেলেদের একজন ডাক্তার, মেয়ে থাকে কানাডায়। তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বড় ছেলে শান্ত (মুহিতউর রহমান) ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছে, সে-ও সংসারের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।’
ময়মনসিংহ পৌরসভা: মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ পৌরসভা নির্বাচনে দলের তৃণমূল থেকে মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ওরফে তারাকে দলীয় সমর্থন না দিয়ে বর্তমান পৌর মেয়র ইকরামুল হক ওরফে টিটুকে সমর্থন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচনের দিন টিটুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে তাঁর (টিটু) বড় ভাই ব্যবসায়ী আমিনুল হক ওরফে শামীমকে দায়িত্ব দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাংসদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থীকে কেন নির্বাচন করতে দেওয়া হলো না—এ প্রশ্নের জবাব তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন সাংসদ মতিউর। তিনি বলেন, এ ব্যাপারটা জানা আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির। তিনি ইকরামুল হককে জিতিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ চেষ্টার পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আমার আস্থার প্রমাণ।’
গৌরীপুর উপজেলা: আওয়ামী লীগ-সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রতন সরকার দলের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মনোনীত হন এবং দল তাঁকে সমর্থনও করে। কিন্তু সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (পরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী) ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির বিদ্রোহী প্রার্থী আলী আহমেদ খান পাঠান ওরফে সেলভির পক্ষে নির্বাচন করেন। রতন সরকার ৩৯২ ভোটে হেরে যান।
মজিবুর রহমান ফকিরের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূলের মনোনয়ন বিপক্ষে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তাঁর নয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মতিউর রহমানের। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী সেলভি মতিউরের ভাগনিজামাই। এখন আবার এও শুনতে পাচ্ছি, আসছে সংসদ নির্বাচনে সেলভিকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলার পরিকল্পনা চলছে।’
হালুয়াঘাট: নেতা-কর্মীদের মতে, তৃণমূলের ভোটে মনোনীতদের উপেক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ-১) থেকে তৃণমূলের ভোটাররা তাঁকেই সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু জেলা বা কেন্দ্র তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তাঁর ধারণা, বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তদের কাউকে কাউকে মনোনয়ন দেননি। এ ক্ষেত্রে কোনো বাণিজ্য ছিল না। প্রমোদ মানকিনকে দলের প্রার্থী করা হয়।
ফারুক আহমেদ জানান, মনোনয়ন না পেলেও তিনি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী প্রমোদ মানকিনের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। কিন্তু পরে তিনি যখন উপজেলা নির্বাচনে দলের সমর্থন পেলেন, তখন প্রমোদ মানকিন প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। তিনি বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আলী আজগরকে জিতিয়ে আনেন। ফারুকের মতে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রমোদ মানকিনের প্রকাশ্য ভূমিকা নেওয়ার পেছনে রয়েছে হালুয়াঘাটের দুটি শুল্ক স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা সমিতির বাণিজ্য।
কয়লা শুল্ক স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়া আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি হয়েছেন প্রমোদ মানকিন, আর সাধারণ সম্পাদক হলেন আলী আজগর। সম্প্রতি এ সমিতিটিকে আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপ নাম দিয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে নিবন্ধন করা হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন প্রথম আলোর কাছে বিএনপির নেতা আলী আজগরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সহাবস্থানই ময়মনসিংহের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য।’ তিনি দাবি করেন, দলীয় স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কাজে কখনো যুক্ত ছিলেন না, ভবিষ্যতেও থাকবেন না।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার বলেন, দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তাঁরা যেন তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে আর উপেক্ষা না করেন। তাঁর মতে, তৃণমূলের সিদ্ধান্ত মেনে চললে ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে কেনাবেচার জায়গায় নিতে পারবেন না।
No comments