জবানবন্দি ফুলবাড়ী হত্যাকাণ্ড by এম শামসুল আলম
২৬ আগস্ট ২০০৬। পড়ন্ত বিকেল। কিছুক্ষণের মধ্যে আঁধার নেমে আসবে। এশিয়া এনার্জি ও এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কারণে ফুলবাড়ীর মানুষের জীবনে যে আঁধার নামে, তা ঘোচাতেই এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে ফুলবাড়ীর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফুলবাড়ীতে এসেছিলাম।
ফুলবাড়ী শহরের অদূরে মাঠের মধ্য দিয়ে অন্যদের সঙ্গে একটি রিকশা-ভ্যান আমাকে নিয়ে গ্রামের অভিমুখে চলেছে। তখনো জানি না আমি কোথায় চলেছি। কিছুক্ষণ আগে শুনেছি, গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে। বহু মানুষের রক্ত ঝরেছে। অনুভব করছি আমার ভেতরে অনড়, অসাড়, নির্বাক, হতভম্ব এক অদ্ভুত আমাকে। শুধু চোখসর্বস্ব শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি পৃথিবীর দিগন্ত-রেখায়। একসময় আমার সে দৃষ্টিতে ধরা পড়ল রাস্তার দুই ধারে সদ্য বেড়ে ওঠা ধানক্ষেত। কি গাঢ় সবুজের সমাহার! চোখ জুড়ায়। অতি উর্বর ফুলবাড়ীর কৃষিজমি। বছরে তিনবার ধান হয়। এ জমিগুলো সব খনির গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে! ফুলবাড়ীর মানুষ এ জমি কিছুতেই হারাতে চায় না। বাপ-দাদার এ জমির সঙ্গে তাদের জীবনের সম্পর্ক, নাড়ির সম্পর্ক। সে সম্পর্ক কোনোভাবেই ছিন্ন হওয়ার নয়। এ মাঠেই কেটেছে তাদের শৈশব-কৈশোর জীবন ও যৌবন। জীবনের কত মধুময় ক্ষণে দেখতে পেয়েছে পুঞ্জ পুঞ্জ ধানের শীষ ঝিরঝিরে বাতাসে কিভাবে গা নাচায়। এ ক্ষেতের ধারে দাঁড়িয়ে পাকা ধানের গন্ধ পেয়েছে। নবান্ন উৎসবে মেতেছে জীবন। এ সবই হারাতে হবে খনির কারণে! এ সব কিছু বাঁচাতেই যারা ফুলবাড়ীতে এসেছিল, তাদের গুলি করে মারা হলো! তাদের জীবন দিতে হলো!
কেউ কি কখনো শুনেছে পুলিশ তার কর্তব্যকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এগিয়ে এসেছে? না। কত হানাহানি, কত হত্যা, কত সম্পদহানি ঘটেছে এবং ঘটে যাচ্ছে পুলিশেরই সামনে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। পুলিশ কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থেকে দর্শকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে মাত্র। তৎপর হয় তখন, যখন নেপথ্যে কারো বা কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ কাজ করে। ফুলবাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ বা বিডিআর গুলি করে মানুষ মেরেছে- এ কথা কোনোভাবেই বলা যায় না। কারণ পূর্বঘোষিত নির্ধারিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। তা ছাড়া পুলিশ সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতেও এ হত্যাকাণ্ড চালায়নি। তাহলে কেন করেছে? তার জবাব একটাই। এশিয়া এনার্জির অফিস রক্ষার দায়িত্বে তারা নিয়োজিত ছিল এবং গুলি করে মানুষ মেরে তারা এশিয়া এনার্জির কাছে প্রমাণ করেছে, সে দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করেছে।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে, বিচারপতি গোলাম রাব্বানীর ১৬.০৮.০৬ তারিখে একটি দৈনিকে প্রকাশিত 'হত্যারহস্য : বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক একটি লেখা। লেখাটি তিনি আমাকে পড়তে বলে জানিয়েছিলেন, আমাদের ভাবনা ও ফুলবাড়ীর কথা নিয়ে তিনি লিখেছেন। অসিত চক্রবর্তীর প্রায় দুই যুগ আগের হত্যারহস্য নামক গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি প্রবন্ধটি শুরু করেন। একা নিরস্ত্র দবির, কৃষকের ছেলে কৃষক পৈতৃক জমিতে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র ঘাতক দলের গুলিতে নিহত হন। হত্যা রহস্যাবৃত। তবে ঘটনায় বোঝা যায়, তিনি একদা তার পৈতৃক ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে নিজের মধ্যে শৈশব ও প্রথম যৌবন ফিরে পান এবং গর্জে ওঠেন। তখনই ঘাতক দল উঠে আসে এবং তাঁকে হত্যা করে। তিনি একা নিরস্ত্র। ঘাতক দল ছিল সশস্ত্র ও দলবদ্ধ। বিচারপতি মহোদয় যখন এ লেখাটি লিখেছিলেন, তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে এ লেখার তারিখ থেকে ঠিক ১০ দিন পর তার এই উদ্ধৃত ঘটনাটি এ দেশের মাটিতে আবারও ঘটবে এবং ঐতিহাসিক একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার জন্ম দেবে। তা হবে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দৃষ্টান্ত।
২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীর মানুষ তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি রক্ষার জন্য কয়লাখনি বাতিলের দাবিতে সেই পৈতৃক ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে শৈশব ও প্রথম যৌবন ফিরে পায় এবং গর্জে ওঠে। তখনই ঘাতক পুলিশ বা বিডিআরের দল তাদের ওপর গুলি চালায়। কিন্তু তারা দবিরের মতো একা ছিল না। ছিল অগণিত। ঘাতকদল দলবদ্ধ ও সশস্ত্র হলেও পরাজিত হয়। তারা তাদের পৈতৃক ভিটে রক্ষা করে। ঘাতকদলকে ফুলবাড়ীছাড়া করে। এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়িত করে। প্রায় দুই যুগ পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি; কিন্তু ফলাফল ঠিক তার উল্টো। অসিত চক্রবর্তী সেদিন ভাবতে পারেননি, অধিকারবঞ্চিত মানুষ অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শুধু প্রাণ দেবে না, অধিকার প্রতিষ্ঠিতও করতে পারবে।
তিনি তাঁর প্রবন্ধে 'মর্টগেজিং দি আর্থ' বইটির প্রসঙ্গ এনেছেন। বইটিতে দেখানো হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণে দরিদ্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশগুলোর মধ্যে দরিদ্রতর আরেক চতুর্থ বিশ্বের জন্ম দিচ্ছে। যেখানে গৃহহীন, জীবিকাহীন, ক্ষুধার্ত, রোগগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে, অন্যদিকে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের দল বড় বড় শহরে আশ্রয় ও আহারের খোঁজে জড়ো হচ্ছে। যেখানে হাওয়ায় টাকা ওড়ে। এশিয়া এনার্জির কবলে পড়ে এমনি একটি চতুর্থ বিশ্বের অধিবাসী হওয়ার মতো অবস্থার শিকার হতে চলেছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদ। কিন্তু সেখানকার মানুষ জীবন দিয়ে হলেও ২৬ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। ৩০ আগস্ট সরকারকে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছে। সে চুক্তিতে সরকার বাংলাদেশের কোথাও উন্মুক্ত কয়লাখনি না করা এবং এশিয়া এনার্জির চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। তারা এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে যে-
(১) দেশের সম্পদ মাটি ও মানুষ, তা ধ্বংস করে নয়, তা দিয়েই দেশের উন্নতি করতে হবে।
(২) শহর ও গ্রামের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
(৩) রাষ্ট্রীয় আয়ের সিংহভাগ রাজধানী ও বড় বড় শহরের কাজে এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে অপচয় করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
(৪) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ মর্মে একটি সঠিক ধারণা পেল যে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী এবং দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কোনো বিনিয়োগ বাংলাদেশে আদৌ সম্ভব নয়।
(৫) গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। ফুলবাড়ীর এই গণবিস্ফোরণের ফলে উন্মুক্ত খনন-পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের আর কোনো সম্ভাবনা রইল না। কয়লা রপ্তানি বন্ধ হলো। সুতরাং গ্যাস ও কয়লা কিংবা তা থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি আইন করে নিষিদ্ধ করার জন্য দেশের জনগণ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে যে আন্দোলন করে চলেছে, সে আন্দোলন সফল হলো। এখন আইন প্রণয়ন করে তা নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিকতাটুকুই শুধু বাকি।
খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধ বিল ২০১০ জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। সে বিল সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে- এটাই এখন জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
কেউ কি কখনো শুনেছে পুলিশ তার কর্তব্যকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এগিয়ে এসেছে? না। কত হানাহানি, কত হত্যা, কত সম্পদহানি ঘটেছে এবং ঘটে যাচ্ছে পুলিশেরই সামনে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। পুলিশ কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থেকে দর্শকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে মাত্র। তৎপর হয় তখন, যখন নেপথ্যে কারো বা কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ কাজ করে। ফুলবাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ বা বিডিআর গুলি করে মানুষ মেরেছে- এ কথা কোনোভাবেই বলা যায় না। কারণ পূর্বঘোষিত নির্ধারিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। তা ছাড়া পুলিশ সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতেও এ হত্যাকাণ্ড চালায়নি। তাহলে কেন করেছে? তার জবাব একটাই। এশিয়া এনার্জির অফিস রক্ষার দায়িত্বে তারা নিয়োজিত ছিল এবং গুলি করে মানুষ মেরে তারা এশিয়া এনার্জির কাছে প্রমাণ করেছে, সে দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করেছে।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে, বিচারপতি গোলাম রাব্বানীর ১৬.০৮.০৬ তারিখে একটি দৈনিকে প্রকাশিত 'হত্যারহস্য : বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক একটি লেখা। লেখাটি তিনি আমাকে পড়তে বলে জানিয়েছিলেন, আমাদের ভাবনা ও ফুলবাড়ীর কথা নিয়ে তিনি লিখেছেন। অসিত চক্রবর্তীর প্রায় দুই যুগ আগের হত্যারহস্য নামক গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি প্রবন্ধটি শুরু করেন। একা নিরস্ত্র দবির, কৃষকের ছেলে কৃষক পৈতৃক জমিতে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র ঘাতক দলের গুলিতে নিহত হন। হত্যা রহস্যাবৃত। তবে ঘটনায় বোঝা যায়, তিনি একদা তার পৈতৃক ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে নিজের মধ্যে শৈশব ও প্রথম যৌবন ফিরে পান এবং গর্জে ওঠেন। তখনই ঘাতক দল উঠে আসে এবং তাঁকে হত্যা করে। তিনি একা নিরস্ত্র। ঘাতক দল ছিল সশস্ত্র ও দলবদ্ধ। বিচারপতি মহোদয় যখন এ লেখাটি লিখেছিলেন, তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে এ লেখার তারিখ থেকে ঠিক ১০ দিন পর তার এই উদ্ধৃত ঘটনাটি এ দেশের মাটিতে আবারও ঘটবে এবং ঐতিহাসিক একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার জন্ম দেবে। তা হবে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দৃষ্টান্ত।
২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীর মানুষ তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি রক্ষার জন্য কয়লাখনি বাতিলের দাবিতে সেই পৈতৃক ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে শৈশব ও প্রথম যৌবন ফিরে পায় এবং গর্জে ওঠে। তখনই ঘাতক পুলিশ বা বিডিআরের দল তাদের ওপর গুলি চালায়। কিন্তু তারা দবিরের মতো একা ছিল না। ছিল অগণিত। ঘাতকদল দলবদ্ধ ও সশস্ত্র হলেও পরাজিত হয়। তারা তাদের পৈতৃক ভিটে রক্ষা করে। ঘাতকদলকে ফুলবাড়ীছাড়া করে। এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়িত করে। প্রায় দুই যুগ পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি; কিন্তু ফলাফল ঠিক তার উল্টো। অসিত চক্রবর্তী সেদিন ভাবতে পারেননি, অধিকারবঞ্চিত মানুষ অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শুধু প্রাণ দেবে না, অধিকার প্রতিষ্ঠিতও করতে পারবে।
তিনি তাঁর প্রবন্ধে 'মর্টগেজিং দি আর্থ' বইটির প্রসঙ্গ এনেছেন। বইটিতে দেখানো হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণে দরিদ্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশগুলোর মধ্যে দরিদ্রতর আরেক চতুর্থ বিশ্বের জন্ম দিচ্ছে। যেখানে গৃহহীন, জীবিকাহীন, ক্ষুধার্ত, রোগগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে, অন্যদিকে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের দল বড় বড় শহরে আশ্রয় ও আহারের খোঁজে জড়ো হচ্ছে। যেখানে হাওয়ায় টাকা ওড়ে। এশিয়া এনার্জির কবলে পড়ে এমনি একটি চতুর্থ বিশ্বের অধিবাসী হওয়ার মতো অবস্থার শিকার হতে চলেছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদ। কিন্তু সেখানকার মানুষ জীবন দিয়ে হলেও ২৬ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। ৩০ আগস্ট সরকারকে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছে। সে চুক্তিতে সরকার বাংলাদেশের কোথাও উন্মুক্ত কয়লাখনি না করা এবং এশিয়া এনার্জির চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। তারা এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে যে-
(১) দেশের সম্পদ মাটি ও মানুষ, তা ধ্বংস করে নয়, তা দিয়েই দেশের উন্নতি করতে হবে।
(২) শহর ও গ্রামের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
(৩) রাষ্ট্রীয় আয়ের সিংহভাগ রাজধানী ও বড় বড় শহরের কাজে এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে অপচয় করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
(৪) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ মর্মে একটি সঠিক ধারণা পেল যে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী এবং দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কোনো বিনিয়োগ বাংলাদেশে আদৌ সম্ভব নয়।
(৫) গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। ফুলবাড়ীর এই গণবিস্ফোরণের ফলে উন্মুক্ত খনন-পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের আর কোনো সম্ভাবনা রইল না। কয়লা রপ্তানি বন্ধ হলো। সুতরাং গ্যাস ও কয়লা কিংবা তা থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি আইন করে নিষিদ্ধ করার জন্য দেশের জনগণ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে যে আন্দোলন করে চলেছে, সে আন্দোলন সফল হলো। এখন আইন প্রণয়ন করে তা নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিকতাটুকুই শুধু বাকি।
খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধ বিল ২০১০ জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। সে বিল সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে- এটাই এখন জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
No comments