শীর্ষসম্মেলন- জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও বর্তমান বিশ্ব by সমীরণ রায়
ডান নয়, বামও নয়। মিত্র বা অক্ষ, কোনো শক্তির সঙ্গে জোট বাঁধা নয়। প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া—এই মূলনীতির ভিত্তিতে ১৯৬১ সালে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে জন্ম হয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)।
কিউবার হাভানায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত এবং বর্তমানে বিশ্বের ১২০টি দেশ এর সদস্য। ন্যামের ষষ্ঠদশ শীর্ষ সম্মেলন আজ শুরু হচ্ছে ইরানের রাজধানী তেহরানে। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রথম চার দিন পদস্থ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হবে। আর শেষ দুই দিন হবে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন। এ আন্দোলন গড়ার মূল নায়ক ছিলেন যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রোজ টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, মিসরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদুল নাসের, ঘানার প্রেসিডেন্ট কোয়ামি ইনকোমো এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ। একে বলা হতো ‘পঞ্চ-উদ্যোগ’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৪৫ সালে চালু হয় বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ। ১৯৪৫ সালেই সৃষ্টি হয় জাতিসংঘ। শুল্ক হ্রাস ও বাণিজ্যবাধা কমিয়ে আনার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে শুরু হয় শুল্ক ও বাণিজ্যবিষয়ক সাধারণ চুক্তি (গ্যাট) আলোচনা। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সামরিক জোট গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে জন্ম নেয় নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। সহযোগিতার মোড়কে ঢাকা হলেও একই উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৫৪ সালে সৃষ্টি হয় সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিয়াটো) এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালে ‘ওয়ারশো প্যাক্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শত্রু-মিত্র নতুন করে জোট বাঁধে। বিশ্ব দুই শক্তিধর গ্রুপের অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
১০টি নীতির ভিত্তিতে ন্যাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: জাতিসংঘ সনদের আলোকে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো; সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন; ছোট-বড় সব দেশ ও গোত্রের মধ্যে সমতার স্বীকৃতি; অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; জাতিসংঘ সনদের আলোকে এককভাবে বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দেশের অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রদান; কোনো বড় শক্তির স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে যেকোনো প্রচেষ্টা ও অন্য দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকা; কোনো দেশের অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ বা হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকা; সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধ জাতিসংঘ সনদের আলোকে আলোচনা, সমঝোতা, সালিস বা আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা; পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং ন্যায় ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
এই নীতিমালার আলোকে ন্যাম এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মতাদর্শভিত্তিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রশমনে অবদান রেখেছে। বর্ণবাদ, শাসন-শোষণ ও জাতিগত বিরোধের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অনেক দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সমর্থন জুগিয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও ঔপনিবেশবাদের অবসানের পর ন্যামও তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন করণীয় নির্ধারণ করেছে। ন্যায়ানুগ ও সমতাভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়েছে। সমসাময়িক ইস্যুগুলোর ওপর ঐক্যবদ্ধ নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে বহুজাতিক নীতি বাস্তবায়ন, সমতা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠ বলিষ্ঠতর হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যামের সদস্যদের দাবি সুসংহত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের হার বেড়েছে, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ন্যামের সদস্যরা টেকসই উন্নয়ন ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাও ঠিক যে উন্নয়নের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সার্বভৌম উন্নয়ন নিশ্চিত করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বায়নের অভিঘাতের পাশাপাশি ঋণের বোঝা, অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা, বৈদেশিক সহায়তা হ্রাস, দাতাদের অযাচিত শর্তারোপ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ার ফলে উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘে সব রাষ্ট্রের সমান অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শক্তিশালী দেশগুলো হরহামেশাই তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়। এর ফলেও উন্নয়নশীল বিশ্ব তাদের সার্বভৌম অধিকার সংরক্ষণ করতে পারছে না। এসব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ন্যাম দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় ৭৭-জাতি গ্রুপের সঙ্গে কয়েকটি যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্য ঘোচানোর দাবি আজ বিশ্বদাবিতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ধর্মীয় সহনশীলতা, কৃষ্টির বিশেষত্ব ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি সর্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ন্যামের বৃহদাকার, সদস্য দেশগুলোর বিভিন্নমুখী স্বার্থ এবং বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কারণে অনেক সময়ই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। সবার চাওয়া-পাওয়াকে সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। তার পরও সদস্যদের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের একগুঁয়েমির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও সহযোগিতার মনোভাব টিকে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানের পরিবর্তে মধ্য পন্থা অবলম্বন করেছে। স্বল্পোন্নত বিশ্বের বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবে দ্রুত ও কার্যকর অবদান রাখতে উন্নত বিশ্বের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বায়নের কারণে বিশ্বে নতুন করে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা ঘোচানোর জন্য দাবি জোরালো হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ন্যামের সদস্যরা মনে করে, অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অবিচারই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। তাই এ তিনটি ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে আরও তৎপর হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
সমীরণ রায়: অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৪৫ সালে চালু হয় বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ। ১৯৪৫ সালেই সৃষ্টি হয় জাতিসংঘ। শুল্ক হ্রাস ও বাণিজ্যবাধা কমিয়ে আনার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে শুরু হয় শুল্ক ও বাণিজ্যবিষয়ক সাধারণ চুক্তি (গ্যাট) আলোচনা। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সামরিক জোট গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে জন্ম নেয় নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। সহযোগিতার মোড়কে ঢাকা হলেও একই উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৫৪ সালে সৃষ্টি হয় সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিয়াটো) এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালে ‘ওয়ারশো প্যাক্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শত্রু-মিত্র নতুন করে জোট বাঁধে। বিশ্ব দুই শক্তিধর গ্রুপের অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
১০টি নীতির ভিত্তিতে ন্যাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: জাতিসংঘ সনদের আলোকে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো; সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন; ছোট-বড় সব দেশ ও গোত্রের মধ্যে সমতার স্বীকৃতি; অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; জাতিসংঘ সনদের আলোকে এককভাবে বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দেশের অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রদান; কোনো বড় শক্তির স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে যেকোনো প্রচেষ্টা ও অন্য দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকা; কোনো দেশের অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ বা হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকা; সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধ জাতিসংঘ সনদের আলোকে আলোচনা, সমঝোতা, সালিস বা আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা; পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং ন্যায় ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
এই নীতিমালার আলোকে ন্যাম এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মতাদর্শভিত্তিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রশমনে অবদান রেখেছে। বর্ণবাদ, শাসন-শোষণ ও জাতিগত বিরোধের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অনেক দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সমর্থন জুগিয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও ঔপনিবেশবাদের অবসানের পর ন্যামও তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন করণীয় নির্ধারণ করেছে। ন্যায়ানুগ ও সমতাভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়েছে। সমসাময়িক ইস্যুগুলোর ওপর ঐক্যবদ্ধ নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে বহুজাতিক নীতি বাস্তবায়ন, সমতা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠ বলিষ্ঠতর হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যামের সদস্যদের দাবি সুসংহত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের হার বেড়েছে, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ন্যামের সদস্যরা টেকসই উন্নয়ন ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাও ঠিক যে উন্নয়নের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সার্বভৌম উন্নয়ন নিশ্চিত করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বায়নের অভিঘাতের পাশাপাশি ঋণের বোঝা, অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা, বৈদেশিক সহায়তা হ্রাস, দাতাদের অযাচিত শর্তারোপ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ার ফলে উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘে সব রাষ্ট্রের সমান অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শক্তিশালী দেশগুলো হরহামেশাই তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়। এর ফলেও উন্নয়নশীল বিশ্ব তাদের সার্বভৌম অধিকার সংরক্ষণ করতে পারছে না। এসব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ন্যাম দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় ৭৭-জাতি গ্রুপের সঙ্গে কয়েকটি যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্য ঘোচানোর দাবি আজ বিশ্বদাবিতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ধর্মীয় সহনশীলতা, কৃষ্টির বিশেষত্ব ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি সর্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ন্যামের বৃহদাকার, সদস্য দেশগুলোর বিভিন্নমুখী স্বার্থ এবং বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কারণে অনেক সময়ই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। সবার চাওয়া-পাওয়াকে সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। তার পরও সদস্যদের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের একগুঁয়েমির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও সহযোগিতার মনোভাব টিকে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানের পরিবর্তে মধ্য পন্থা অবলম্বন করেছে। স্বল্পোন্নত বিশ্বের বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবে দ্রুত ও কার্যকর অবদান রাখতে উন্নত বিশ্বের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বায়নের কারণে বিশ্বে নতুন করে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা ঘোচানোর জন্য দাবি জোরালো হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ন্যামের সদস্যরা মনে করে, অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অবিচারই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। তাই এ তিনটি ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে আরও তৎপর হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
সমীরণ রায়: অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষক।
No comments