মিলগেটে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রমাণ পেল মনিটরিং টিম-তিন রিফাইনারির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান, শোকজ by মিজান চৌধুরী

মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে তিন রিফাইনারি প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম। সোমবার বৃহত্তম ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপের অফিসে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় গত ছয় মাসের বিক্রি ও সরবরাহের কাগজপত্র চাওয়া হয়।


এদিকে বরিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মিল পরিদর্শন করেছে। ওই সময় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ওই টিম শনাক্ত করেছে যার জের ধরে সোমবার প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান করা হয় কাগজপত্র।
এদিকে দাম বৃদ্ধির অপরাধে সোমবার আরও তিন কোম্পানিকে শোকজ করা হয়েছে। এরা হচ্ছে মেঘনা গ্রুপ, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ও এসএ গ্রুপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওইদিনই শোকজপত্র সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ভোজ্যতেলের কয়েকটি রিফাইনারির বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। কারণ রোজা উপলক্ষে তারা মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি কমিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, প্রতিবছরের ন্যায় কোম্পানিগুলো এ বছর দাম বাড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক বৈঠক করার পরও তারা আমলে নেয়নি। দাম কমানোর ব্যাপারে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের পরও আরেক দফা ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এমন সময় এ দাম বাড়ল মাত্র চার দিন আগে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য সচিবকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রোজায় তেলের দাম বাড়াবে না। সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক লিটার বোতলজাত ভোজ্যতেলে ৩ থেকে ৫ টাকা, পাঁচ লিটার ভোজ্যতেলের বোতলে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ থেকে ৬৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৬৫ থেকে ৬৭০ টাকা। পরিবেশক আইন মতে দাম বাড়ানোর পূর্বে অবশ্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু আইন অমান্য করেই তা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দামবৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে মিলগেট পরিদর্শন করেও। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে মেঘনা ব্রিজসংলগ্ন মেঘনা কোম্পানির উৎপাদিত ফ্রেশ ভোজ্যতেল রিফাইনারি ও সিটি গ্রুপের মিল আকস্মিক পরিদর্শন করা হয়। এ সময় ওই টিম কোম্পানিগুলোর কাছে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি জানতে চায়।
মেঘনা মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ দুই লিটারের বোতল ২৬০ টাকা বিক্রি করেছে। ২৬ এপ্রিল এসে ওই বোতলের মূল্য বাড়িয়ে ২৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৩৭ দিনের ব্যবধানে এক দফা দামবৃদ্ধির পরও গত ১২ জুন আরও চার টাকা বৃদ্ধি করে ২৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২১ জুলাই ওই দামেই সরবরাহ করা হয়।
এদিকে সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের কর্মকর্তা খোঁজখবর নিয়েছে। তাদের গত ছয় মাসের বিক্রয় তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের শোকজ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া সোমবার ফের মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও এস গ্রুপের ভোজ্যতেল রিফাইনারিকে শোকজ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে আরও চার কোম্পানিকে একইভাবে অভিযোগে শোকজ করা হয়েছিল।
রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে এক লাখ ৭৫ হাজার টন। অন্যান্য মাসে চাহিদা সোয়া লাখ টন। তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্নভাবে মনিটরিং করার পরও দাম বাড়ানো থেকে বিরত থাকেনি। শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, তিনটি কোম্পানি আকস্মিক আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বাজারে তেলের বোতল সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এসব ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করে আইনের মাধ্যমে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে পারলে ১৫ কোটি ভোক্তার ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা রোধ করা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.