হাতে ফুল চোখে জল জনস্রোত শহীদ মিনারে by ফিরোজ এহতেশাম
প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে সবাই বিদায় জানালেন চোখের জলে। তাঁদের চোখের জলে সিক্ত হলো প্রিয় লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের কফিন। এ যে বুকভরা ভালোবাসার প্রকাশ হৃদয়ভাঙা হাহাকারে।
রাজধানী ঢাকাবাসী সবার গন্তব্য যেন কেবলই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের দিকে।
রাজধানী ঢাকাবাসী সবার গন্তব্য যেন কেবলই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের দিকে।
যাঁরা সশরীরে হাজির হয়ে প্রিয় মানুষটিকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি, তাঁরা চোখ রেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সোমবার সকালে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে দেশে আনা হয় লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। আগের ঘোষণা অনুযায়ী সেখান থেকে সকাল ১১টার দিকে কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এদিকে প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ভোর থেকেই জনস্রোত বইতে থাকে শহীদ মিনারের দিকে। ব্যথিত মানুষের ভিড়ে জনারণ্যে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশ এলাকা। যেদিকে তাকানো যায় কেবলই মানুষ আর মানুষ। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর থেকে হাজার হাজার মানুষের পাঁচটি সারি এসে মিলিত হয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। স্বজন হারানোর ব্যথায় ব্যথিত মানুষগুলোর হাতে হাতে ফুল। তাঁরা এসেছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। লক্ষ্য প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো দেখা, শ্রদ্ধা জানানো।
রমজানে রোজা রেখেই প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তীব্র রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। সবাই বিষণ্ন, মলিন মুখ। কারো চোখ অশ্রুভেজা, কেউ ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না চেপে রেখেছেন। প্রিয় লেখক-চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যকারকে হারিয়ে সবার হৃদয় যেন ভেঙে গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে শহীদ মিনারে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। রাখা হয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। এরপর শুরু হয় ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। তাঁদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ফুলে ভরে ওঠতে থাকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই লেখকের কফিন। স্বেচ্ছাসেবকরা কফিনের ওপর থেকে ফুলের ডালি সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা আবার পূর্ণ হতে থাকে। এভাবেই চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তবে কফিনের ঢাকনা বন্ধ রাখায় শেষবারের মতো প্রিয় লেখকের মুখ না দেখতে পেরে অনেকেই মর্মাহত হন। তবু কফিনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মধ্যেই শোকার্ত জনতা শান্তি খুঁজেছে।
এ ছাড়া শহীদ মিনারের বাইরের ফুটপাতে টেবিলের ওপর রাখা তিনটি মন্তব্য খাতায় নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে মন্তব্য লিখেছেন অসংখ্য মানুষ। সবাই কালির কলমে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন হৃদয়ের বেদনামাখা অনুভূতি।
হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভিজিৎ কর্মকার বললেন, ''বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে 'নন্দিত নরকে'র মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর মতো রসবোধ ও সম্মোহনী ক্ষমতা খুব কম লেখকেরই আছে। অনেকেই লিখেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ একজনই। তিনি এই যুগের প্রবাদ পুরুষ। সাহিত্যে তিনি নতুন আঙ্গিক তৈরি করেছেন। তিনি ও তাঁর সাহিত্য মানুষের হৃদয়ে অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবে।''
নীলক্ষেত থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছিলেন চাকরিজীবী মারুফ হোসেন আবিদ। প্রায় চার ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি তাঁর প্রিয় নাট্যকারের কফিনে ফুল দিতে পেরেছেন তিনি। বেদনায় জড়ানো কণ্ঠে তিনি বললেন, 'আমার ভাষা হারিয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর নাটক আমার বেশি ভালো লাগত। এত মজার মজার নাটক আর তৈরি হবে না। ভীষণ মন খারাপ লাগছে।'
আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না আফরিন ঝুমা বলল, 'হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় মানুষ, অনেক বড় লেখক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এ দেশের যে ক্ষতি হলো, তা কেউ পূরণ করতে পারবেন না। বইমেলায় তাঁর নতুন বই পাব না, তাঁর নতুন নাটক-সিনেমা দেখতে পাব না- ভাবতেই খারাপ লাগছে। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।'
প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এসেছেন শ্রাবন্তী, শান্তা, নিশাত, মুক্তা ও আসমা। তাঁরা বললেন, 'আমরা আর কখনো তাঁকে খুঁজে পাব না- এ বোধটাই ভীষণ কষ্টের। তাঁর মতো এত শক্তিশালী লেখক আর আসবেন কি না, সন্দেহ আছে।'
বিষণ্ন মুখে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র সজীব রহমান। তিনি বললেন, 'হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে যেমন আমাদের হাসিয়েছেন, তেমনি কাঁদিয়েছেনও। জীবদ্দশায় এত জনপ্রিয়তা কোনো লেখক পাননি। গানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান আছে। বইমেলায় ও ঈদে তাঁর বই ও নাটকের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম। এখন কী হবে?'
তেজগাঁও কলেজের ছাত্র কাজী মহসিন ও রফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, 'দুঃখের বিষয় বাসাবো থেকে এত কষ্ট করে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও হুমায়ূন আহমেদের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পারলাম না। তবু তাঁর মরদেহের পাশ দিয়ে হেঁটে এসেছি, তাতেই শান্তি। তাঁর বই প্রায় সবই পড়েছি। শেষ পড়লাম নিউ ইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ ও মেঘের ওপর বাড়ি। এ রকম লেখক বারবার আসেন না। তিনি এ দেশে ওয়ান পিস। তাঁর নাটক ও চলচ্চিত্রের চেয়ে তাঁর বইকে বেশি মিস করব।'
কবি সাখাওয়াত টিপু বলেন, ''তিনি ছিলেন এ দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় লেখক। মধ্যবিত্ত সমাজের অসুখ ও সীমাবদ্ধতাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। এ জন্যই তিনি এত জনপ্রিয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গীয় সাহিত্যভাষা থেকে আলাদা এক ভাষা তৈরি করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কখনোই প্রবেশ করেননি। বরং বিনোদন তৈরি করেছেন। এ দেশের টিভি নাটকের ধারণা ও চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। তাঁর 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার', মধ্যাহ্ন', 'জোৎস্না ও জননীর গল্প'- এমন বইগুলোর জন্যই তিনি টিকে থাকবেন।''
ঢাকা কলেজের ছাত্র নাট্যকর্মী সাইদুজ্জামান দীপু বললেন, 'আমাদের যিনি স্বপ্ন দেখাতেন, তিনি নেই। কে আমাদের স্বপ্ন দেখাবেন। এই আক্ষেপ ও দুঃখ ঘুচবে না। তিনি যে বিষয়েই হাত দিয়েছেন, সফল হয়েছেন।'
ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারিয়েছে। তিনি ছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক মুক্তির পথনির্দেশক। আমাদের সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন টার্নিং পয়েন্ট। তিনি এ দেশের প্রতিটি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিউল ইসলাম রবি বললেন, 'হুমায়ূন আহমেদ এ দেশের তরুণ সমাজকে বই পড়ায় ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর উপস্থাপন ভঙ্গি জটিলতাহীন, সহজ-সরলই। তাঁর প্রতিভা বহুমাত্রিক।'
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সোমবার সকালে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে দেশে আনা হয় লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। আগের ঘোষণা অনুযায়ী সেখান থেকে সকাল ১১টার দিকে কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এদিকে প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ভোর থেকেই জনস্রোত বইতে থাকে শহীদ মিনারের দিকে। ব্যথিত মানুষের ভিড়ে জনারণ্যে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশ এলাকা। যেদিকে তাকানো যায় কেবলই মানুষ আর মানুষ। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর থেকে হাজার হাজার মানুষের পাঁচটি সারি এসে মিলিত হয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। স্বজন হারানোর ব্যথায় ব্যথিত মানুষগুলোর হাতে হাতে ফুল। তাঁরা এসেছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। লক্ষ্য প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো দেখা, শ্রদ্ধা জানানো।
রমজানে রোজা রেখেই প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তীব্র রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। সবাই বিষণ্ন, মলিন মুখ। কারো চোখ অশ্রুভেজা, কেউ ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না চেপে রেখেছেন। প্রিয় লেখক-চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যকারকে হারিয়ে সবার হৃদয় যেন ভেঙে গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে শহীদ মিনারে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। রাখা হয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। এরপর শুরু হয় ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। তাঁদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ফুলে ভরে ওঠতে থাকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই লেখকের কফিন। স্বেচ্ছাসেবকরা কফিনের ওপর থেকে ফুলের ডালি সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা আবার পূর্ণ হতে থাকে। এভাবেই চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তবে কফিনের ঢাকনা বন্ধ রাখায় শেষবারের মতো প্রিয় লেখকের মুখ না দেখতে পেরে অনেকেই মর্মাহত হন। তবু কফিনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মধ্যেই শোকার্ত জনতা শান্তি খুঁজেছে।
এ ছাড়া শহীদ মিনারের বাইরের ফুটপাতে টেবিলের ওপর রাখা তিনটি মন্তব্য খাতায় নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে মন্তব্য লিখেছেন অসংখ্য মানুষ। সবাই কালির কলমে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন হৃদয়ের বেদনামাখা অনুভূতি।
হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভিজিৎ কর্মকার বললেন, ''বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে 'নন্দিত নরকে'র মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর মতো রসবোধ ও সম্মোহনী ক্ষমতা খুব কম লেখকেরই আছে। অনেকেই লিখেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ একজনই। তিনি এই যুগের প্রবাদ পুরুষ। সাহিত্যে তিনি নতুন আঙ্গিক তৈরি করেছেন। তিনি ও তাঁর সাহিত্য মানুষের হৃদয়ে অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবে।''
নীলক্ষেত থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছিলেন চাকরিজীবী মারুফ হোসেন আবিদ। প্রায় চার ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি তাঁর প্রিয় নাট্যকারের কফিনে ফুল দিতে পেরেছেন তিনি। বেদনায় জড়ানো কণ্ঠে তিনি বললেন, 'আমার ভাষা হারিয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর নাটক আমার বেশি ভালো লাগত। এত মজার মজার নাটক আর তৈরি হবে না। ভীষণ মন খারাপ লাগছে।'
আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না আফরিন ঝুমা বলল, 'হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় মানুষ, অনেক বড় লেখক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এ দেশের যে ক্ষতি হলো, তা কেউ পূরণ করতে পারবেন না। বইমেলায় তাঁর নতুন বই পাব না, তাঁর নতুন নাটক-সিনেমা দেখতে পাব না- ভাবতেই খারাপ লাগছে। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।'
প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এসেছেন শ্রাবন্তী, শান্তা, নিশাত, মুক্তা ও আসমা। তাঁরা বললেন, 'আমরা আর কখনো তাঁকে খুঁজে পাব না- এ বোধটাই ভীষণ কষ্টের। তাঁর মতো এত শক্তিশালী লেখক আর আসবেন কি না, সন্দেহ আছে।'
বিষণ্ন মুখে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র সজীব রহমান। তিনি বললেন, 'হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে যেমন আমাদের হাসিয়েছেন, তেমনি কাঁদিয়েছেনও। জীবদ্দশায় এত জনপ্রিয়তা কোনো লেখক পাননি। গানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান আছে। বইমেলায় ও ঈদে তাঁর বই ও নাটকের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম। এখন কী হবে?'
তেজগাঁও কলেজের ছাত্র কাজী মহসিন ও রফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, 'দুঃখের বিষয় বাসাবো থেকে এত কষ্ট করে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও হুমায়ূন আহমেদের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পারলাম না। তবু তাঁর মরদেহের পাশ দিয়ে হেঁটে এসেছি, তাতেই শান্তি। তাঁর বই প্রায় সবই পড়েছি। শেষ পড়লাম নিউ ইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ ও মেঘের ওপর বাড়ি। এ রকম লেখক বারবার আসেন না। তিনি এ দেশে ওয়ান পিস। তাঁর নাটক ও চলচ্চিত্রের চেয়ে তাঁর বইকে বেশি মিস করব।'
কবি সাখাওয়াত টিপু বলেন, ''তিনি ছিলেন এ দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় লেখক। মধ্যবিত্ত সমাজের অসুখ ও সীমাবদ্ধতাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। এ জন্যই তিনি এত জনপ্রিয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গীয় সাহিত্যভাষা থেকে আলাদা এক ভাষা তৈরি করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কখনোই প্রবেশ করেননি। বরং বিনোদন তৈরি করেছেন। এ দেশের টিভি নাটকের ধারণা ও চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। তাঁর 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার', মধ্যাহ্ন', 'জোৎস্না ও জননীর গল্প'- এমন বইগুলোর জন্যই তিনি টিকে থাকবেন।''
ঢাকা কলেজের ছাত্র নাট্যকর্মী সাইদুজ্জামান দীপু বললেন, 'আমাদের যিনি স্বপ্ন দেখাতেন, তিনি নেই। কে আমাদের স্বপ্ন দেখাবেন। এই আক্ষেপ ও দুঃখ ঘুচবে না। তিনি যে বিষয়েই হাত দিয়েছেন, সফল হয়েছেন।'
ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারিয়েছে। তিনি ছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক মুক্তির পথনির্দেশক। আমাদের সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন টার্নিং পয়েন্ট। তিনি এ দেশের প্রতিটি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিউল ইসলাম রবি বললেন, 'হুমায়ূন আহমেদ এ দেশের তরুণ সমাজকে বই পড়ায় ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর উপস্থাপন ভঙ্গি জটিলতাহীন, সহজ-সরলই। তাঁর প্রতিভা বহুমাত্রিক।'
No comments