মহাভূমিকম্প এবং জাপানের অভিজ্ঞতা by প্রবীর বিকাশ সরকার

পৃথিবীর বুকে জাপান ছাড়া আর কোন দেশ আছে কিনা জানি না, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যার মাটি কোথাও না কোথাও মৃদু মৃদু নড়ছে বা দুলে উঠছে। এতটাই ভূমিকম্পপ্রবণ এই দেশটি। ক্ষুদ্র, মাঝারি আকারের ভূমিকম্প তো অহরহ হচ্ছেই। মাঝেমধ্যে বড় এক একটা এসে ল-ভ- ও বিশাল ক্ষতি করে চলে যায়।


সৌন্দর্যের অমরাবতী বলে খ্যাত জাপান আসলে একটি দুর্ভাগা রাষ্ট্র। প্রাকৃতিক সম্পদে একেবারেই দুর্বল জাপানকে খাদ্য, জ্বালানি এবং ধাতব পণ্য আমদানি করতে হয় বিপুল পরিমাণে। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এবং চীন, রাশিয়া ও দুই কোরিয়ার প্রতিবেশী হওয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ও তার প্রচুর। ১৯০৪-৫ সালে রুশ-জাপান যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বড় শহরগুলো। রাজধানী টোকিওর অর্ধেক ধূলিসাৎ হয়েছিল। ৪০ বছর কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে উন্নীত হয়ে মানবজাতির পথপরিক্রমায় অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করল দেশটি। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জাপান এখনও শীর্ষে। জনসংখ্যাও নেহাত কম নয়Ñ১২ কোটি। কাজেই প্রয়োজন তার বিপুল বিপুল অর্থ। পণ্যপ্রস্তুতকারী রফতানিনির্ভর দেশ হিসেবে জাপানী নাগরিকদের তাই উদয়াস্ত কলকারখানা-খামারে না কাজ করলে ব্যয়বহুল জীবন চালিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব।
তার ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগের অবিচার। এ দেশে রয়েছে শতাধিক জীবন্ত আগ্নেয়গিরিÑপাহাড়ে আর সমুদ্রের তলদেশে। যে কারণে ভূমিকম্প বেশি। ফুজি পর্বত জাপানের সর্ববৃহৎ এবং শক্তিশালী আগ্নেয়গিরি। বিগত ৭ লাখ বছর ধরে বহুবার সে জেগে ওঠে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে। গত ৩০০-৪০০ বছর ধরে সে তৎপরহীন আছে ঠিকই, কিন্তু কখন যে বিস্ফোরিত হয়ে নিকটবর্তী রাজধানী টোকিওকে উলটপালট করে দেয় বলা মুশকিলÑযদিওবা কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক সজাগ ভূমিকম্প সম্পর্কে। প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণাগারে। প্রতিটি শহরেই রয়েছে ভূমিকম্পবিষয়ক সরকারী দফতর। তবে সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন জাপানীরা সবসময়েই প্রস্তুত বড় কিছু নড়ে ওঠার আশঙ্কায়, বিশেষ করে রাজধানী টোকিওবাসী। টোকিও বিশ্বের সর্ববৃহৎ মেট্রোপলিটন শহর। স্মরণকালে ১৯২৩ সালে সংঘটিত ভয়াবহ তাইশোও মহাকানতো ভূমিকম্পে টোকিও এবং বন্দরনগরী ইয়োকোহামাতে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ৫,৭০,০০০ এর বেশি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ৬৮ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছে। প্রায় ১.৯ মিলিয়ন লোক গৃহহীন হয়েছিল। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৯ ম্যাগনিচ্যুড। তখন টোকিওর জনসংখ্যা ছিল ২.৩ মিলিয়ন। এখন কানতো অঞ্চলের জনসংখ্যা ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯০ বছরের ব্যবধানে। টোকিও মহানগরে গড়ে উঠেছে অগণন বসতবাড়ি, অফিস, সেতু, আকাশচুম্বী ভবন এবং মাটির নিচে ১৩টি পাতাল রেললাইনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রদেশ হিসেবে টোকিওর জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক, মেট্রোপলিটন এরিয়াতে বসবাস করছে ১ কোটির মতো মানুষ এবং তা ক্রমবর্ধমান।
ঘনবসতির দিক দিয়ে টোকিও মহানগরে প্রতি বর্গ কি.মি. জায়গায় ৬০২৯ মানুষের বসবাস। যদি একটি বড় মাপের ভূকম্পন ঘটে তাহলে কী হবে এই ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীটির ভাবতেই শিহরিত হতে হয়! ছবিতে টোকিওকে দালানকোঠার ঘনজঙ্গল ছাড়া অন্যকিছু ভাবা মুশকিল। একটা বিরাট ভূমিকম্প যে আসবে টোকিওতে এটা বিগত কয়েক দশক ধরেই সরকারী-বেসরকারীভাবে বলাবলি হচ্ছে। সাধারণ মানুষও সচেতন এই বিষয়ে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জাপানীরা ভূমিকম্প এবং জলোচ্ছ্বাসে তত ভীত নয়। এর কারণ তারা প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভ্যস্ত এবং এই দেশটি তাদের জন্মভূমি সুতরাং কিছু করারও নেই। তবে যতখানি সতর্ক ও সাবধান থাকা যায় এ বিষয়ে তারা সজাগ। প্রায় প্রতি ঘরে শুকনো খাবারদাবার এবং বিপদকালীন যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত আছে। নার্সারি থেকে শুরু হয় ভূমিকম্প সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ। সারা বছরই চলে ভূমিকম্পের সময় কি কি করা উচিত তার মহড়া। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাতে থাকে। অনুষ্ঠিত হয় ভূমিকম্প সম্পর্কে সেমিনার, আলোচনাসভা এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোতে থাকে বিশেষ ফিচার ও আলোচনা, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীÑযাতে ব্যস্ত মানুষ দুর্যোগকে ভুলে না থাকে। জাপানীরা এ্যানিমিজম বা সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী, ফলে জন্মগতভাবেই তারা সংবেদনশীল এবং সহযোগিতামনস্ক। দুর্যোগকালে পরস্পরের বিপদে-আপদে যাতে অনতিবিলম্বে ঝাঁপিয়ে পড়া যায় এবং দ্রুত পুনর্নির্মাণে আত্মনিয়োগ করা সম্ভব হয়Ñএই ব্যাপারে তাদের কোন তুলনা নেই। দুর্যোগ নিয়েই তাদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বিমত নেই, নেই রাজনীতি বা ব্যক্তিস্বার্থ। ১৯২৪ সালে কবিগুরু জাপানে এসে মাত্র এক বছর আগের মহাভূমিকম্পে বিধ্বস্ত টোকিওকে পরিপাটি দেখতে পেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন। তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জাপানীদের বড় ধর্ম হচ্ছে স্বদেশপ্রেম, পার্থিব ধর্ম নয়। ‘কুনি’ বা ‘দেশ’ না থাকলে জাতি নেই বলেই তাদের বিশ্বাস। তার প্রমাণ ১৯৯৫ সালে হানশিন বা কোবে মহাভূমিকম্পে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, বহু মানুষ গৃহহারা হয়েছে, তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে জাপানের দুর্ধর্ষ আন্ডারওয়ার্ল্ড তথা ‘ইয়াকুজা’ নামে পরিচিত মাফিয়ারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উদ্ধার কাজে এবং নিজেরা রান্না ঘরে ক্ষুধার্ত আবাল-বৃদ্ধবনিতাকে খাদ্য সরবরাহ করেছেÑএটাই স্বদেশপ্রেম।
এটা আমি গত বছরের ১১ মার্চ তারিখে তোওহোকু ভূমিকম্প বা মহাপূর্বজাপান ভূমিকম্প সংঘটিত হবার পর গভীরভাবে অনুভব করেছি। ২:৪৬ মিনিটে ভূমিকম্প হলো। যার কম্পন ছিল ম্যাগনিচ্যুড ৯.০। পুরো হোনশু দ্বীপ, যেখানে রাজধানী টোকিও অবস্থিতÑটলোমলো করে দিয়েছিল। এটা ছিল এ পর্যন্ত জাপানে সংঘটিত সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এবং বিশ্বে বিগত শতবর্ষের মধ্যে পঞ্চমতম ভয়াবহ। আমি তখন আকিহাবারা শহরের একটি ভবনের তিনতলায় ছিলাম। সেকি ঝাঁকুনি! তিন মিনিটকাল বসে বা দাঁড়িয়ে থাকাই ছিল কঠিন! ঝনঝন শব্দে লাফাচ্ছিল দরজা ও জানালাগুলো। বুকসেলফ, আলমারি থেকে বই, জিনিসপত্র পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। জানালা দিয়ে দৃষ্টি দিয়ে দেখি সরু দালানগুলো সুপারিগাছের মতো এপাশে ওপাশে দুলছে, রাস্তায় দুলছে নৌকোর মতো গাড়িগুলো। থমকে দাঁড়িয়ে গেছে অনেকে, আবার অনেকে দালানের ভেতরে আশ্রয় নিতে ছুটছে। শহরে ভূমিকম্পের সময় বাইরে থাকা বিপদজনক।
মূল ভূমিকম্পস্থল থেকে কমপক্ষে আড়াই শ’ কি.মি. দূরে অবস্থান করা সত্ত্বেও যে কি ভয়াবহ ঝাঁকুনি অনুভব করেছি, তা এই জীবনে ভোলার মতো নয়! ভূমিকম্প কাকে বলে! টোকিওতে কম্পন মাত্রা ছিল ৫ ম্যাগনিচ্যুডের বেশি। তাতে রক্ষা পেয়েছে ইট-ধাতুর তৈরি আধুনিক টোকিও। টোকিওসহ কোথাও একটি ভবন ধসে পড়েনি বা ভায়াবহ রকম আগুনও লাগেনি, যেমনটি হয়েছিল ১৯২৩ বা ১৯৯৫ সালের ভূমিকম্পে। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি নানা ঘটনা। আকাশচুম্বী ভবনগুলো তেমনি ছিল। ভূমিকম্প অঞ্চল ছাড়া সর্বত্রই বিদ্যুৎ ছিল। সাবওয়েসহ ইলেকট্রিক ট্রেনগুলো এখানে সেখানে থেমে গেছে। সেতুর ওপরও থেমে যেতে দেখেছি। দালানের ভেতর লিফটগুলো চলাচল করেছে। সাময়িকভাবে মোবাইল ফোন সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ল্যান্ড ফোন চালু ছিল। স্বল্পভাষী জাপানীদের মধ্যে গুঞ্জন ছিল, কিন্তু কাউকে বিস্মিত হতে দেখিনি। পুলিশের মাইকিং শুনিনি। সবাই বাস ও ট্যাক্সি চেপে বাড়ি ফিরছে লাইন ধরে। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ল না। দোকানপাটও তেমনি খোলা। সেখানে তাড়াহুড়ো দেখতে পাইনি। খাবারদাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনে মানুষ বাড়ি ফিরছে গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই। দ্রুত খাদ্য-খাবার শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এলোমেলো হওয়ার কারণে। কিন্তু কারও মুখে কোন বিরূপ শব্দ শুনতে পেলাম না। ভবিতব্যকে মেনে নিতে জাপানীরা অভ্যস্ত। আমিও কিছু খাবার খুঁজে নিয়ে এসে যখন কম্পিউটারে বসলাম তখন ইন্টারনেটে দেখলাম ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস! ঘণ্টায় ৫০০ কি.মি. বেগে ধেয়ে ৩-৬ মিটার উঁচু পাহাড়সমান সামুদ্রিক ঢেউ তথা সুনামি ভাসিয়ে নিয়ে গেল উপকূলবর্তী বসতিগুলো। জলের মধ্যে ঘরবাড়ি, গাড়ি, বিমানবহরগুলোকে খেলনার মতো মনে হচ্ছিল। ১১ হাজার মানুষ সঙ্গে সঙ্গে বিলীন! তারপর দেখলাম ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটিতে বিস্ফোরণ! সেকি ভয়ঙ্কর আগুনের কু-লি! এ সবের সঙ্গে তো ক্রমাগত আফটার শক ভূমিকম্প হয়েই চলেছে। সত্যিকারের কেয়ামত যেন শুরু হয়েছে জাপানে জীবিতকালেই এমনটি মনে হয়েছিল। কিন্তু সরকার, কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, জনগণ খুব ঠা-া মাথায় বিন্দুমাত্র দলাদলি ছাড়া সুচারুরূপে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। রেডিয়েশন ও লাভা বন্ধ করার জন্য অগ্নিনির্বাপক এবং পরমাণু কেন্দ্রের কর্মচারীদের প্রাণান্তকর চেষ্টা বিস্ময় জাগিয়েছে! মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে তারা স্বদেশের জন্য। এই না হলে জাপানী!
রাত ৯টার সময় দু-একটি সাবওয়ে চালু হলে বিশ মিটার নিচে অবস্থিত গিনজা লাইন মেট্রো ট্রেনে চড়ে আসাকুসা শহরে এলাম। সেখান থেকে গাড়ি না পেয়ে হাঁটা জাপানীদের মিছিলে শামিল হলাম। তাড়াহুড়োহীন নিঃশব্দ মিছিল। ভূমিকম্প তখনও হচ্ছিল। মনে পড়ল ১৯৭১ সালে নিশ্চয়ই এভাবে পাকবাহিনীর ভয়ে বাঙালিরা হেঁটে হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল। আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পর বাসায় ফিরেছিলাম রাত ১টায়। পথে পথে মানুষ নিঃশব্দে সবুজ চা ও অনিগিরি বা ভাতের বল বিতরণ করেছে যারা ক্ষুধার্ত তাদেরকে, টয়লেট ব্যবহারের জন্য কাগজে বিজ্ঞপ্তি আকারে আবেদন লিখে রেখেছে। পথ চিনিয়ে দিয়েছে। দূর-দূরান্তের পথে হেঁটে যাচ্ছে মানুষ আর মানুষ। ক্লান্তি নেই, হাহুতাশ নেই, ঈশ্বরের নামও মুখে নেই!
তারপর কী দেখলাম অবাক বিস্ময়ে! মাত্র তিন মাসের মধ্যেই পুনরায় পূর্বের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিধ্বস্ত অঞ্চলকে। সুনামি বা জলোচ্ছ্বাস ২৪-২৫ মিলিয়ন টন রাবিশ সৃষ্টি করেছিল সব সরিয়ে জনগণ এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে স্বাভাবিক উপকূলবর্তী শহরের আগের আদলে পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন কে বলবে এখানে মাত্র বছরখানেক আগে এমন মহাদুর্যোগ সংঘটিত হয়েছিল! হিরোশিমার মতোই জাপানীরা দ্রুতগতিতে ঝকঝকে তকতকে করে ফেলেছে বিধ্বস্ত তোওহোকুর ইওয়াতে, মিয়াগি, ফুকুশিমা শহরগুলো! ভাবতেই আশ্চর্য ঠেকে! বিদ্যুৎসাশ্রয়ে অভূতপূর্ব সাড়া দিল জনগণ। ১৫% বিদ্যুৎসাশ্রয় না হলে কলকারখানা চালু রাখা যেত না। এই ভূমিকম্পে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার, পুনরুদ্ধার তো করতে হবে!
খুব মনে পড়ে প্রাথমিক স্কুলের ১ম বর্ষের ছাত্রী ইয়োশিদা রিসা হাতে লিখে একটি দেয়ালপত্রিকা ‘ফাইট’ নামে প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেটাতে সে সবাইকে দুঃখ না করে, অশ্রুসিক্ত না হয়ে আশা বুকে ধারণ করে এই মহাদুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যুদ্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছিল। তার এই আহ্বানে সাড়া পড়ে গিয়েছিল বিধ্বস্ত অঞ্চলের বিপর্যন্ত মানুষের মধ্যে। গণমাধ্যম এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল। মহাবন্যা, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাসসহ দুর্যোগপ্রবণ দেশ জাপানের মানুষ কী রকম মনোবলে বলীয়ানÑএই ছোট্ট মেয়েটির মানস থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম। তখন রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটি মনে পড়ে গেল : বিপদে মোরে রক্ষা করো/এ নহে মোর প্রার্থনা/বিপদে আমি না যেন করি ভয়......কবিগুরু ‘ঔম’ নামে এই কবিতাটি স্বহস্তে লিখে উপহার দিয়েছিলেন তাঁর জাপানী বন্ধু চিত্রশিল্পী কাৎসুতা শোওকিনকে জাপানে ১৯১৬ সালে।

লেখক : জাপান প্রবাসী লেখক, গবেষক ও মাসিক কিশোরচিত্র সম্পাদক

No comments

Powered by Blogger.