কথা সামান্যই-বাংলাদেশে 'সরকার' শব্দটির নতুন অর্থ by ফজলুল আলম
সরকার শব্দটি এসেছে ফারসি থেকে; ভারতে মুসলমান শাসনামলে শব্দটি চালু হয়, এবং সেটা হিন্দু ও মুসলমান রাজকর্মচারীদের প্রদত্ত খেতাব ছিল। আমরা এখনো উত্তর-ঔপনিবেশিকতা পার হইনি বিধায় ইংরেজিতে এর অর্থ জানা দরকার; সেখানে খুবই সহজ করে লেখা আছে- 'দি গ্রুপ অব পিপ্ল হু আর রেসপনসিবল ফর কনট্রোলিং এ কান্ট্রি অর
এ স্টেট' অর্থাৎ একটা দেশ বা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার ভার পাওয়া ব্যক্তিবর্গকে গভর্নমেন্ট বলা হয়। বাংলা অভিধানে আছে শাসন বিভাগ, ইংরেজিতে গভর্নমেন্ট। এর সঙ্গে যোগ হয় রাষ্ট্রশাসনতন্ত্র। বাংলায় ও ইংরেজিতে প্রায় একই অর্থ। সুতরাং সমস্যা নেই বললেই চলে, তবু বিষয়টি সমস্যাসংকুল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামক পাঠ্যবিষয়টিতে 'সরকার' নিয়ে হাজার হাজার বই, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সন্দর্ভ ইত্যাদি লেখা চলছে তো চলছেই। সরকারের নানা বিভাগ নিয়ে যেমন ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ আছে, সেরূপ সরকারের চরিত্র বিশ্লেষণ করেও গ্রন্থ লেখা আছে।
চলতি সময়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে সরকার হচ্ছে 'গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত' জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আরো কিছু আইন মেনে এই দল পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করে। মূল কথাটি হলো নির্বাচনে জেতা। এই জেতার জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নানা কৌশল গ্রহণ করতে পারেন, তাতেও অনেক বিধিনিষেধ আছে। কিছু কৌশল তো একেবারে অবৈধ। তার ওপর যারা একবার কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াতেও বিধিনিষেধ আছে। এত বিধিনিষেধের পরও অনেকের পক্ষে 'গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত' হওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। তারা প্রতিবছর নির্বাচিত হতে থাকেন। বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যে দুর্নীতি করেছেন বা করছেন এমন ব্যক্তির অভাব কোনো দলেই নেই। এই সত্যটা আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। ফলে দুর্নীতিবাজ বা বিধিনিষেধ না-মানা সংসদ সদস্যরা বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে চলছেন।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা বাধ্য হচ্ছি একই ব্যক্তিকে বারবার নির্বাচিত করতে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (বুধবার, জুলাই ১১) অবলীলায় লিখলেন যে আবুল হোসেনকে তাড়ালেই বিশ্বব্যাংকের অর্থ পাওয়া যেত না। সবচেয়ে কঠিন কথা তিনি আরো লিখেছেন যে কত কত দুর্নীতিবাজ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সাজা ভোগ করার পরও আমাদের দেশে ও ভারতে দিব্যি বারবার সংসদে ফিরে আসন গ্রহণ করছেন। তাঁর ভাষায়- "ভারত থেকে শুরু করে বহু দেশে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগে রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যাওয়া বহু ব্যক্তি রাজনীতি ও মন্ত্রিত্বে ফিরে এসেছেন। কেন আমাদের দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ কি দুর্নীতির নানা অভিযোগে জেল খেটেও জিয়া, এরশাদ, খালেদার আমলে বারবার মন্ত্রী হননি? খালেদা জিয়ার গত মন্ত্রিসভায় খুনের আসামি, পুলিশের তালিকাভুক্ত চোরাচালানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীকে 'মাননীয় মন্ত্রী' হতে দেখা যায়নি?"
গাফ্ফার ভাই কথাগুলো লিখেছেন বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে, সেটাতে দ্বিমত হওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু আমার মনে একটা খটকা লেগে গেল। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্রের এই হালে এতটুকু বিচলিত নন বলে মনে হলো। তাঁর কাছে কি এই অবস্থা সয়ে গেছে?
অবশ্য গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র, নির্বাচন বা সরকার নিয়ে এই লেখাটি লেখেননি, তিনি লিখেছেন পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ বের করতে। বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট কলামিস্টের কাছ থেকে আমরা তবু আশা করতে পারি যে সরকারে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যাতে প্রবেশ না করতে পারে, সে সম্পর্কে জোরাল ভাষায় ব্যবস্থা গ্রহণের উপদেশ দেওয়া।
স্বাধীনতার আগে ও পরে আমাদের সমস্যাবলির কিছু হেরফের হলেও সেসব অধিকাংশই রয়ে গেছে; আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন- এসব আমরা এখনো করতে পারিনি, সেটা না পারলেও আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বজায় রেখেই আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মারফত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, তেল-গ্যাস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি খুঁজে বের করতে আমরা অনেকাংশে স্বাবলম্বী হয়েছি ও অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছি।
আমরা অনেকে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাই না। ড. সা'দত হুসাইন আমাদের সমাজদেহে এক মারাত্মক সমস্যার ভ্রূণ দেখে লিখলেন,
'বিষয়টি সরকারের, কোনো রাজনৈতিক দলের, প্রশাসনযন্ত্রের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, কোনো পেশাগত গোষ্ঠীর কিংবা কোনো সম্প্রদায়ের একার সমস্যা নয়।' (কালের কণ্ঠ, শনিবার, জুলাই ১৪)
'একার সমস্যা নয়'- কথাটি সবাইকে বাঁচিয়ে দিল, অথচ আমরা জানি, যেকোনো সভ্য দেশে এদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডেই সেসব দেশে সমস্যাবলি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়। আমাদের দেশে সরকার থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্তব্যকর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন তো করেনই না, উল্টো দুষ্কৃতকারীদের সহায়তা করেন- এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি দেওয়া যায়। সরকারই সব কিছুর উৎস, গণতন্ত্র থেকে শুরু করে সব অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ একমাত্র সরকারই করতে পারে।
সাধারণ নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কথা বলা আর আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া একই বিষয়। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সরকার, আমাদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পেরেছি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একত্রে কাজ করে, অথচ নির্বাচিত সরকার যখন সমাজে অন্যায়-অবিচার দুষ্কৃতিকর্মের (সা'দত হুসাইন সেসবের সুন্দর তালিকাও দিয়েছেন) বিরুদ্ধে কোনো সঠিক কার্যকলাপে ও পরিকল্পনায় ব্যর্থ হন, তখন আমাদের কী উপায় আছে?
আমি মনে করি, জনগণের সামর্থ্যের মধ্যে যা আছে, তা হলো প্রতিবার নির্বাচনে একই মুখকে নির্বাচিত না করা। এখন পর্যন্তু আমরা দেখেছি যে নির্বাচনী তৎপরতায় চোর-ডাকাত, খুনি একসময় সাজাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য- সবাই গলাবাজি তো করেই, ভোটারদের ভয় দেখাতেও পিছপা হয় না। আইন আছে এদের থামানোর; কিন্তু সেটা যে কার এখতিয়ার, সেটাই এখনো নিরূপিত হয়নি, অন্তত সাধারণ ভোটাররা তো জানেই না। তারা ভোট দিতে যায় উচ্চ ধাপের মানুষকে, সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ধনীদের। এই কারণেই আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের সরকারে গুটিকয়েক মানুষের একচ্ছত্রতা চলছে তো চলছেই। বিগত নির্বাচনে যে নেতারা নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাঁরা আবার পরে অন্য কনস্টিটিউশান থেকে পাস করে এসেছেন। অর্থাৎ দলীয় নেতাগিরি থেকে কেউ সটকে পড়েননি। এবং সেটা সম্ভব করেছি আমরাই, সাধারণ ভোটাররা।
বাংলাদেশে 'সরকার' শব্দটির অর্থ তাহলে এভাবেই করা উচিত, 'সরকার অর্থ বারবার নির্বাচিত একই ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের বিকল্প বাংলাদেশে নেই।' এই অর্থকে শোধন না করা পর্যন্ত আমাদের সব সফলতা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
চলতি সময়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে সরকার হচ্ছে 'গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত' জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আরো কিছু আইন মেনে এই দল পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করে। মূল কথাটি হলো নির্বাচনে জেতা। এই জেতার জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নানা কৌশল গ্রহণ করতে পারেন, তাতেও অনেক বিধিনিষেধ আছে। কিছু কৌশল তো একেবারে অবৈধ। তার ওপর যারা একবার কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াতেও বিধিনিষেধ আছে। এত বিধিনিষেধের পরও অনেকের পক্ষে 'গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত' হওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। তারা প্রতিবছর নির্বাচিত হতে থাকেন। বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যে দুর্নীতি করেছেন বা করছেন এমন ব্যক্তির অভাব কোনো দলেই নেই। এই সত্যটা আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। ফলে দুর্নীতিবাজ বা বিধিনিষেধ না-মানা সংসদ সদস্যরা বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে চলছেন।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা বাধ্য হচ্ছি একই ব্যক্তিকে বারবার নির্বাচিত করতে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (বুধবার, জুলাই ১১) অবলীলায় লিখলেন যে আবুল হোসেনকে তাড়ালেই বিশ্বব্যাংকের অর্থ পাওয়া যেত না। সবচেয়ে কঠিন কথা তিনি আরো লিখেছেন যে কত কত দুর্নীতিবাজ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সাজা ভোগ করার পরও আমাদের দেশে ও ভারতে দিব্যি বারবার সংসদে ফিরে আসন গ্রহণ করছেন। তাঁর ভাষায়- "ভারত থেকে শুরু করে বহু দেশে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগে রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যাওয়া বহু ব্যক্তি রাজনীতি ও মন্ত্রিত্বে ফিরে এসেছেন। কেন আমাদের দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ কি দুর্নীতির নানা অভিযোগে জেল খেটেও জিয়া, এরশাদ, খালেদার আমলে বারবার মন্ত্রী হননি? খালেদা জিয়ার গত মন্ত্রিসভায় খুনের আসামি, পুলিশের তালিকাভুক্ত চোরাচালানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীকে 'মাননীয় মন্ত্রী' হতে দেখা যায়নি?"
গাফ্ফার ভাই কথাগুলো লিখেছেন বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে, সেটাতে দ্বিমত হওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু আমার মনে একটা খটকা লেগে গেল। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্রের এই হালে এতটুকু বিচলিত নন বলে মনে হলো। তাঁর কাছে কি এই অবস্থা সয়ে গেছে?
অবশ্য গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র, নির্বাচন বা সরকার নিয়ে এই লেখাটি লেখেননি, তিনি লিখেছেন পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ বের করতে। বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট কলামিস্টের কাছ থেকে আমরা তবু আশা করতে পারি যে সরকারে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যাতে প্রবেশ না করতে পারে, সে সম্পর্কে জোরাল ভাষায় ব্যবস্থা গ্রহণের উপদেশ দেওয়া।
স্বাধীনতার আগে ও পরে আমাদের সমস্যাবলির কিছু হেরফের হলেও সেসব অধিকাংশই রয়ে গেছে; আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন- এসব আমরা এখনো করতে পারিনি, সেটা না পারলেও আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বজায় রেখেই আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মারফত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, তেল-গ্যাস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি খুঁজে বের করতে আমরা অনেকাংশে স্বাবলম্বী হয়েছি ও অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছি।
আমরা অনেকে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাই না। ড. সা'দত হুসাইন আমাদের সমাজদেহে এক মারাত্মক সমস্যার ভ্রূণ দেখে লিখলেন,
'বিষয়টি সরকারের, কোনো রাজনৈতিক দলের, প্রশাসনযন্ত্রের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, কোনো পেশাগত গোষ্ঠীর কিংবা কোনো সম্প্রদায়ের একার সমস্যা নয়।' (কালের কণ্ঠ, শনিবার, জুলাই ১৪)
'একার সমস্যা নয়'- কথাটি সবাইকে বাঁচিয়ে দিল, অথচ আমরা জানি, যেকোনো সভ্য দেশে এদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডেই সেসব দেশে সমস্যাবলি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়। আমাদের দেশে সরকার থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্তব্যকর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন তো করেনই না, উল্টো দুষ্কৃতকারীদের সহায়তা করেন- এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি দেওয়া যায়। সরকারই সব কিছুর উৎস, গণতন্ত্র থেকে শুরু করে সব অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ একমাত্র সরকারই করতে পারে।
সাধারণ নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কথা বলা আর আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া একই বিষয়। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সরকার, আমাদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পেরেছি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একত্রে কাজ করে, অথচ নির্বাচিত সরকার যখন সমাজে অন্যায়-অবিচার দুষ্কৃতিকর্মের (সা'দত হুসাইন সেসবের সুন্দর তালিকাও দিয়েছেন) বিরুদ্ধে কোনো সঠিক কার্যকলাপে ও পরিকল্পনায় ব্যর্থ হন, তখন আমাদের কী উপায় আছে?
আমি মনে করি, জনগণের সামর্থ্যের মধ্যে যা আছে, তা হলো প্রতিবার নির্বাচনে একই মুখকে নির্বাচিত না করা। এখন পর্যন্তু আমরা দেখেছি যে নির্বাচনী তৎপরতায় চোর-ডাকাত, খুনি একসময় সাজাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য- সবাই গলাবাজি তো করেই, ভোটারদের ভয় দেখাতেও পিছপা হয় না। আইন আছে এদের থামানোর; কিন্তু সেটা যে কার এখতিয়ার, সেটাই এখনো নিরূপিত হয়নি, অন্তত সাধারণ ভোটাররা তো জানেই না। তারা ভোট দিতে যায় উচ্চ ধাপের মানুষকে, সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ধনীদের। এই কারণেই আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের সরকারে গুটিকয়েক মানুষের একচ্ছত্রতা চলছে তো চলছেই। বিগত নির্বাচনে যে নেতারা নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাঁরা আবার পরে অন্য কনস্টিটিউশান থেকে পাস করে এসেছেন। অর্থাৎ দলীয় নেতাগিরি থেকে কেউ সটকে পড়েননি। এবং সেটা সম্ভব করেছি আমরাই, সাধারণ ভোটাররা।
বাংলাদেশে 'সরকার' শব্দটির অর্থ তাহলে এভাবেই করা উচিত, 'সরকার অর্থ বারবার নির্বাচিত একই ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের বিকল্প বাংলাদেশে নেই।' এই অর্থকে শোধন না করা পর্যন্ত আমাদের সব সফলতা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
No comments