নারী উন্নয়ন নীতি-অকারণ হরতাল
জাতীয় নারীনীতি বাতিলের দাবিতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা ৪ এপ্রিলের হরতালকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা লক্ষণীয়। ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন সংগঠনের ডাকা এই হরতালে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর সমর্থন মিলবে না, সেটা স্পষ্ট।
কিন্তু যারা জাতীয় নারীনীতিকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে হরতাল ডেকে দিলেন এবং প্রকাশ্য সভায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সহিংস আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য উস্কানি দিলেন_ তারা এত সহজে দেশকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য থেকে সরে যাবেন, এটা ভাবা ঠিক নয়। এই বেপরোয়া মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে গত শুক্রবার চট্টগ্রামে তাদের সমর্থকদের পুলিশের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ঘটনায়। নারীনীতিতে মুসলিম আইনে বর্ণিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারকে স্পর্শ করা হয়নি এবং কেবল উত্তরাধিকার, উপার্জন, ঋণ, ভূমি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নারী যে সম্পদ অর্জন করবে, তার ওপর নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকার নিশ্চিত করার কথাই বলা হয়েছে। এটা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলার পরও আমিনীদের ইসলাম গেল গেল রব কেন? খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তাদের হরতালের লক্ষ্য কেবল নারীনীতি নয়, এর সঙ্গে শিক্ষানীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিও রয়েছে। অর্থাৎ নতুন নীতিমালার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে এককাতারে দাঁড়ানোর যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে এরা নস্যাৎ করে দিতে চায় সূচনাতেই। তাই এদের আন্দোলনকে সমর্থন করা মানেই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিকে নিরুসাহিত এবং ব্যর্থ করে দেওয়ার শামিল। সে কারণেই আজ সব বিবেকবান ও সমাজসচেতন মানুষের দেশকে পুনরায় জঙ্গিবাদের লালনক্ষেত্র বানানোর হীন চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। জাতীয় নারীনীতি, শিক্ষানীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা ৪ এপ্রিলের হরতাল প্রত্যাহার করা হোক_ এটাই দেশবাসীর দাবি। ধর্মান্ধ এই গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী হরতালের প্রতি সমর্থন জানায়নি। এ মনোভাব সাধুবাদ পাবে।
No comments