অবশেষে আবুল বিদায়
বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত পূরণ করতে শেষ পর্যন্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতেই সোমবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের আগে সৈয়দ আবুল হোসেন দেশবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতেই তিনি দেশের স্বার্থে পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন উল্লেখ করেন। মূলত ওই খোলা চিঠি প্রকাশের পর থেকেই তাঁর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ না দেয়ায় কারণেই সৈয়দ আবুল হোসনের পদত্যাগের বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠে। এ নিয়ে সকাল থেকে নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুপুরের পর আবুল হোসেনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। জানা যায়, সকালে তিনি পতাকাবিহীন গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পদ্মা প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত চলাকালে দায়িত্বপূর্ণ পদে না থাকার ইচ্ছা থেকেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে। এ তদন্তে ইতোপূর্বে সৈয়দ আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে পদ্মা সেতুতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের বড় বাধা দূর হলো। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের শর্ত মোতাবেক এ কাজটি যদি তিনি আর এক মাস আগে করতেন তা হলে হয়ত বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার জাইকার প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। জাইকা প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন তাঁর বৈঠকের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সেতু বিভাগের কর্মকর্তা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক। ইতোপূর্বে সেতু বিভাগে দুই কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করলেন। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত চলাকালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মূল তিন ব্যক্তিই এখন আর কোন সরকারী দায়িত্বে নেই। এতে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাইকার প্রেসিডেন্টের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয়। তার আগে দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ প্রকল্পের ঋণ স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের কারণে সহযোগী অর্থায়নকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করে। তবে অপর দুই উন্নয়ন সহযোগী জাইকা ও আইডিবি সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ঋণচ্ুিক্ত বাতিল করেনি। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সে বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানায়। ফলে বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকেও অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
কারণ সম্প্রতি এক চিঠিতে বিশ্বব্যাংক সরকারকে চারটি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার চারটির মধ্যে দুটি পূরণ করতে পারেনি। প্রথমত দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি বিশেষ যৌথ তদন্ত ও বিচারিক টিম গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, যাতে দুদক সম্মতি দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত সরকার একটি বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থায় সম্মত হয়েছিল, যেখানে সহযোগী অর্থায়নকারীদের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অধিকতর তদারকির সুযোগ ছিল। তৃতীয়ত দুদককে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি বাইরের প্যানেলের কাছে তথ্য দেয়ার এবং প্যানেলকে তদন্ত প্রক্রিয়ার পর্যাপ্ততা মূল্যায়নের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুদক বাইরের প্যানেলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করার কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার বিষয়টি মেনে নেয়নি। সব শেষে সরকার বাংলাদেশী আইনের আওতায় থাকা সত্ত্বেও তদন্ত চলাকালে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে অভিযুক্ত সরকারী ব্যক্তিবর্গকে (আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত) ছুটি দিতে রাজি হয়নি। চারটি ব্যবস্থার মধ্যে দু’টি বিষয়ে ঐকমত্যের পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। অবশ্য এই ঋণচুক্তি বাতিলের আগে বিশ্বব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুতে ব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত করেছিল।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের সূত্রপাত হয় এ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্সি (সিএসসি) বা নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগকে কেন্দ্র করে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পাঁচটি কমপোনেন্টের মধ্যে একটি হচ্ছে এই নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে ঘুষের বিনিময়ে কাজ দেয়ার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আর এ অভিযোগে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। বিশ্বব্যাংকে ইন্ট্রিগ্রিটির কাছে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয় দরপত্রে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। বিশ্বব্যাংকের ইন্ট্রিগ্রিটি বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। সেই সঙ্গে তারা কানাডা সরকারকেও এসএনসি লাভালিনের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলে। কানাডার তদন্তে লাভালিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। কানাডীয় পুলিশের তদন্তেও প্রকল্পে সিএসসি নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের নাম আসে। বিশ্বব্যাংক নিজেরাও তদন্ত করে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। তবে তদন্ত চলাকালে দুই কর্মকর্তাদের অব্যাহতি ও সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া অথবা ছুটি প্রদানের প্রস্তাব করেন। সরকার প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ বাতিল এবং সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে সেতু বিভাগ থেকে সরিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এসে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলে সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকায় সৈয়দ আবুল হোসেনকে ছুটি প্রদান বা অব্যাহতি না দিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সরিয়ে দেয়। এতে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট হয়নি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত ঋণচুক্তি বাতিল করে।
জানা যায়, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের সব সুপারিশই সরকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাংকের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া না হলে শেষ পর্যন্ত সহ-অর্থায়নকারী অন্য দাতারাও বিশ্বব্যাংকের পথ অনুসরণ করবে। তখন নিজস্ব অর্থেও পদ্মা সেতু নির্মাণ কষ্টকর হয়ে পড়বে। কারণ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির দেশের জন্য দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে পদত্যাগের আগে তিনি এক খোলা চিঠির মাধ্যমে দেশবাসীকের তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার ‘নানা পর্যায়ে’ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জাইকার প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনে আছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারের এ ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা নিয়েই জাইকার প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ছাড়াও এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ না দেয়ায় কারণেই সৈয়দ আবুল হোসনের পদত্যাগের বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠে। এ নিয়ে সকাল থেকে নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুপুরের পর আবুল হোসেনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। জানা যায়, সকালে তিনি পতাকাবিহীন গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পদ্মা প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত চলাকালে দায়িত্বপূর্ণ পদে না থাকার ইচ্ছা থেকেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে। এ তদন্তে ইতোপূর্বে সৈয়দ আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে পদ্মা সেতুতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের বড় বাধা দূর হলো। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের শর্ত মোতাবেক এ কাজটি যদি তিনি আর এক মাস আগে করতেন তা হলে হয়ত বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার জাইকার প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। জাইকা প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন তাঁর বৈঠকের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সেতু বিভাগের কর্মকর্তা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক। ইতোপূর্বে সেতু বিভাগে দুই কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করলেন। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত চলাকালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মূল তিন ব্যক্তিই এখন আর কোন সরকারী দায়িত্বে নেই। এতে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাইকার প্রেসিডেন্টের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয়। তার আগে দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ প্রকল্পের ঋণ স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের কারণে সহযোগী অর্থায়নকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করে। তবে অপর দুই উন্নয়ন সহযোগী জাইকা ও আইডিবি সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ঋণচ্ুিক্ত বাতিল করেনি। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সে বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানায়। ফলে বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকেও অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
কারণ সম্প্রতি এক চিঠিতে বিশ্বব্যাংক সরকারকে চারটি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার চারটির মধ্যে দুটি পূরণ করতে পারেনি। প্রথমত দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি বিশেষ যৌথ তদন্ত ও বিচারিক টিম গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, যাতে দুদক সম্মতি দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত সরকার একটি বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থায় সম্মত হয়েছিল, যেখানে সহযোগী অর্থায়নকারীদের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অধিকতর তদারকির সুযোগ ছিল। তৃতীয়ত দুদককে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি বাইরের প্যানেলের কাছে তথ্য দেয়ার এবং প্যানেলকে তদন্ত প্রক্রিয়ার পর্যাপ্ততা মূল্যায়নের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুদক বাইরের প্যানেলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করার কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার বিষয়টি মেনে নেয়নি। সব শেষে সরকার বাংলাদেশী আইনের আওতায় থাকা সত্ত্বেও তদন্ত চলাকালে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে অভিযুক্ত সরকারী ব্যক্তিবর্গকে (আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত) ছুটি দিতে রাজি হয়নি। চারটি ব্যবস্থার মধ্যে দু’টি বিষয়ে ঐকমত্যের পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। অবশ্য এই ঋণচুক্তি বাতিলের আগে বিশ্বব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুতে ব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত করেছিল।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের সূত্রপাত হয় এ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্সি (সিএসসি) বা নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগকে কেন্দ্র করে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পাঁচটি কমপোনেন্টের মধ্যে একটি হচ্ছে এই নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে ঘুষের বিনিময়ে কাজ দেয়ার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আর এ অভিযোগে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। বিশ্বব্যাংকে ইন্ট্রিগ্রিটির কাছে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয় দরপত্রে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। বিশ্বব্যাংকের ইন্ট্রিগ্রিটি বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। সেই সঙ্গে তারা কানাডা সরকারকেও এসএনসি লাভালিনের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলে। কানাডার তদন্তে লাভালিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। কানাডীয় পুলিশের তদন্তেও প্রকল্পে সিএসসি নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের নাম আসে। বিশ্বব্যাংক নিজেরাও তদন্ত করে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। তবে তদন্ত চলাকালে দুই কর্মকর্তাদের অব্যাহতি ও সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া অথবা ছুটি প্রদানের প্রস্তাব করেন। সরকার প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ বাতিল এবং সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে সেতু বিভাগ থেকে সরিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এসে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলে সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকায় সৈয়দ আবুল হোসেনকে ছুটি প্রদান বা অব্যাহতি না দিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সরিয়ে দেয়। এতে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট হয়নি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত ঋণচুক্তি বাতিল করে।
জানা যায়, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের সব সুপারিশই সরকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাংকের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া না হলে শেষ পর্যন্ত সহ-অর্থায়নকারী অন্য দাতারাও বিশ্বব্যাংকের পথ অনুসরণ করবে। তখন নিজস্ব অর্থেও পদ্মা সেতু নির্মাণ কষ্টকর হয়ে পড়বে। কারণ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির দেশের জন্য দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে পদত্যাগের আগে তিনি এক খোলা চিঠির মাধ্যমে দেশবাসীকের তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার ‘নানা পর্যায়ে’ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জাইকার প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনে আছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারের এ ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা নিয়েই জাইকার প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ছাড়াও এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
No comments