বেগুনের খাদ্যগুণ ও ইফতারে বেগুনী by ডা. মোঃ ফারুক হোসেন

বেগুন সোলানেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি সবজি যার বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম মেলেঙ্গোনা। বেগুন কম ক্যালরিসম্পন্ন একটি সবজি, কিন্তু পুষ্টিমান কারও চেয়ে কম নয়। বেগুন ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারÑযাতে ফ্যাট নেই বললেই চলে।


এর ফাইবার কোলন ক্যান্সার হতে বাধা প্রদান করে এবং হজমে সাহায্য করে থাকে। যারা ওজন কমাতে চান, তারা নিয়মিত সবজি হিসেবে বেগুন খেতে পারেন। বেগুনে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ফাইটোক্যামিকেলস্। শরীরে হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন মুক্ত র‌্যাডিকেলস্সমূহ অপসারণে সাহায্য করে বেগুন । বেগুনে যদি ফাইটোক্যামিকেলস্রে পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে বেগুন তিতা স্বাদের হবে। বেগুনে রয়েছে কোলরোজেনিক এসিড উপাদান যার রয়েছে মুক্ত র‌্যাডিকেলসসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা। এছাড়া এটির ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। কোলরোজেনিক এসিড এন্টিমিউটোজেনিক যার অর্থ এটি কোষকে ক্যান্সার সেলে মিউটেশন হতে রক্ষা করে। কোলরোজেনিক এসিড এন্টিভাইরাল এবং এন্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে। বেগুনে নাসুনিন নামে আরেকটি কার্যকর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা মুক্ত র‌্যাডিকেলসসমূহ অপসারণে সাহায্য করে থাকে। বেগুনে নাসুনিন মানবদেহের ব্রেনকে মুক্ত র‌্যাডিকেলসসমূহের হাত থেকে রক্ষা করেÑযা ব্রেনের ক্ষতি করতে পারে।
বেগুনে যেসব উপাদান বিদ্যমান সেগুলো হলো : ১. ফাইবার ২. ফলেট বা ফলিক এসিড ৩. পটাসিয়াম ৪. ম্যাঙ্গানিজ ৫. ম্যাগনেসিয়াম ৬. ফসফরাস ৭. কপার ৮. ভিটামিন সি ৯. ভিটামিন কে ১০. থিয়ামিন বা ভিটামিন বি১ ১১. নিয়াসিন বা ভিটামিন বি৩ ১২. প্যান্টোথেনিক এসিড বা ভিটামিন বি৫ ১৩. পাইরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬। ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের বিপাক ক্রিয়ায় বেগুনে বিদ্যমান ভিটামিনগুলো কাজে আসে। বেগুনে বিদ্যমান ম্যাঙ্গানিজ এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম সুপার অক্সাইড ডিসমিউটেজের কো-ফ্যাকটর হিসেবে কাজ করে। বেগুনে বিদ্যমান পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইলেকট্রোলাইট যা সোডিয়ামের হাইপারটেনশন কার্যকারিতায় বাধা প্রদান করে।
বেগুন খাবারে সতর্কতা : বেগুন এমন একটি সবজি যাতে রয়েছে অক্সালেট। যাদের কিডনি বা পিত্তথলির পাথর রয়েছে তাদের বেগুন না খাওয়াই ভাল। বিশেষ করে যাদের কিডনিতে অক্সালেট জাতীয় পাথর আছেÑযা পূর্বে ছিল তাদের জন্য বেগুন খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। যারা আর্থাইটিস রোগে ভুগছেন তাদের রাতের বেলায় বেগুন না খাওয়াই উত্তম। আবার অনেকের বেগুনের প্রতি এলার্জি রয়েছে, যা তাদের ক্ষেত্রে চর্মে ও মুখে চুলকানি ভাব হতে পারে। তাই তাদের বেগুন না খাওয়াই ভাল।
ইফতারে বেগুনী : বেগুন দ্বারা তৈরি বেগুনী ছাড়া আমাদের দেশে ইফতার পূর্ণতা লাভ করে না। ইফতারে বেগুনী একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। ইফতারে যেহেতু ভাজা পোড়া খাবার বেশে খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে বেগুনী উপকারী হতে পারে। কারণ বেগুনীর বেগুন এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে থাকে। বেগুনী হজমে সাহায্য করে। ইফতারে মুড়ি, খেজুর বা অন্য খাবারের সঙ্গে অনেক মুক্ত র‌্যাডিকেলস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ভেজাল খাবারের কারণে। এর ফলে ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে। বেগুনীতে বিদ্যমান ফাইটোক্যামিকেলস, কোলরোজেনিক এসিড এবং নাসুনিন আমাদের শরীরের মুক্ত র‌্যাডিকেলসসমূহ অপসারণে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া বেগুনে বিদ্যমান কোলরোজেনিক এসিড এন্টিমিউটোজেনিক হওয়ায় কোন কোষকে ক্যান্সার কোষে মিউটেশনে বাধা প্রদান করে। সারাদিন রোজা রাখার পর বেগুনী থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। যারা কিডনি রোগী তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবারে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। সেক্ষেত্রে বেগুনী তাদের ইফতারে একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। ক্রনিক কিডনী রোগীদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বেগুনী তৈরি করার সময় বেগুনের টুকরার ওপর প্রলেপ যেন বেসনের তৈরি না হয়ে ময়দার তৈরি হয়। বেগুনের টুকরার ওপর ময়দার প্রলেপ দিয়ে বেগুনী উপকারী হবে শুধুমাত্র কিডনী রোগীদের জন্য নয়, বরং সব সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও। কারণ বেসনেও ভেজাল দেয়া হয়। শুধুমাত্র কিডনিতে অক্সালেট জাতীয় পাথর থাকলে বেগুনী খাওয়া নিষেধ। ইচ্ছা করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগীরা বেগুনী খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বেগুনী হতে হবে অলিভ অয়েল ভাজা। কারণ অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে কোন কোলেস্টেরল থাকে না। তাই ইফতারে ময়দার প্রলেপ দেয়া বেগুন অলিভ অয়েলে ফ্রাই করে খেতে পারেন প্রাণ ভরে কোন প্রকার ভয়ভীতি ছাড়া। রমজান মাসে রাতের খাবারে মাছ এবং বেগুন তরকারি একটি আদর্শ খাবার যা সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

No comments

Powered by Blogger.