হুমায়ূন ও মাজহারুলের জন্য মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত

দেশের দুই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও আধুনিক স্থাপত্যের প্রবর্তক মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।


কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মারা যান। অন্যদিকে প্রখ্যাত স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ১৪ জুলাই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প ও শিক্ষায় হুমায়ূন আহমেদ ও মাজহারুল ইসলামের অবদানের কথা স্মরণ করা হয় এবং দেশের এই খ্যাতিমান দুই ব্যক্তিত্বের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করা হয়। বৈঠকে তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে বলা হয়, হুমায়ূন আহমেদের বহুমুখী সৃষ্টিশীল ও প্রাঞ্জল লেখনী বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে। তিনি অনন্যসাধারণ এক সাহিত্যিক ধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে এক পাঠক শ্রেণী সৃষ্টি করে। বৈঠকে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়, নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে হুমায়ূনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।
অন্যদিকে মাজহারুল ইসলামের শোক প্রস্তাবে বলা হয়, তিনি ছিলেন বাংলাদেশে আধুনিক স্থাপত্যের প্রবর্তক। সংসদ ভবনের ডিজাইন তৈরিতে লুই আই কানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে তাঁর সম্পৃক্ততার কথাও বৈঠকে স্মরণ করা হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গ্রন্থাগার ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ভবন এবং রাঙামাটি শহরসহ তাঁর বিভিন্ন অনন্য ডিজাইনের কথা স্মরণ করা হয়।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯২ শতাংশ
বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছর মেয়াদে মন্ত্রিসভায় নেওয়া এক হাজার ৫৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৯৭৪টি বাস্তবায়িত হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯২ শতাংশ। বিগত জোট সরকারের আমলে একই সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৪৪টি এবং বাস্তবায়িত হয় ৩৯৫টি। সে সময়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭২ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মন্ত্রিসভায় নেওয়া ১৫৪টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১১৯টি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের হার ৭৪ শতাংশ। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বৈঠকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, গত তিন বছরে ১৮০টি আইন প্রণয়ন এবং ১২টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে আরো ৩৩টি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। এর ১৬টি সংসদে প্রক্রিয়াধীন এবং ১৭টি রয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায়ে। সাড়ে তিন বছরে বর্তমান সরকার ৮৬টি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। নীতিমালা এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে ৩৩টি।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তি অনুসমর্থন, 'সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন মাল্টিলেটারাল অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিকগনিশন অব কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট' এবং 'সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন ইমপ্লিমেনটেশন অব রিজিওনাল স্ট্যান্ডার্ডস' অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'দুপুর পর্যন্ত আমার বিভাগে কোনো পদত্যাগপত্র পৌঁছেনি। তিনি পদত্যাগ করেছেন কি না, তা আমি জানি না।' তবে বৈঠকে আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না, এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.