রোগ আমার, কিন্তু by কনিকা হক
স্বাস্থ্য অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে এই অধিকার প্রাপ্তিতে গ্রামের নিরক্ষর দরিদ্র নারী প্রান্তিক অবস্থানে আছেন। মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে তার তেমন কোনো অবস্থান নেই
প্রায় সবসময় গা গরম থাকে। প্রায়ই জ্বর আসে। সংসারের নানা কাজের ভিড়ে সেদিকে আর নজর দেওয়া হয় না। জ্বর বেশি হলে শরীর সায় না দিলে বাধ্য হয়ে বিছানায় যান। একটু পা পাতার শক্তি হলে আবারও বিশ্রামহীন ১৬ ঘণ্টা। এভাবে চলে যাচ্ছিল হাসিনা নাহারের দিন। কিন্তু মাস দুই ধরে তার শরীর যেন বেশি রকমের বাড়াবাড়ি করছিল। সামান্য কাজে হাঁপিয়ে উঠছিলেন তিনি। অসম্ভব দুর্বলতায় হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসে। কিছু করতে ইচ্ছা হয় না। একটু অবাকই হন হাসিনা তার এই শারীরিক পরিবর্তনে। স্বামীকে কয়েকদিন বলেছেন তার শরীরের এ অবস্থার কথা। কিন্তু স্বামী গা করেননি। হাসিনা গৃহিণী। স্বামীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাই স্বামী ডাক্তারের কাছে না নিয়ে গেলে কষ্ট সহ্য করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। শেষ পর্যন্ত স্বামী তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। বিভিন্ন পরীক্ষার পর মেমোগ্রাফিতে ধরা পরে তার ব্রেস্টে মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। ডাক্তার জানালেন রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এ অবস্থায় অপারেশন জরুরি। এতে ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জোর দিয়েই বলেন ডাক্তার। কিন্তু হাসিনার স্বামী অপারেশনের বদলে স্ত্রীকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করান। হাসিনার আত্মীয়-পরিজন আর্থিক সহায়তা দিতে চাইলে হাসিনার স্বামীর এক কথা তিনি তার স্ত্রীকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই করাবেন। হাসিনা শিক্ষিত নারী। তিনি জানেন তার কী ধরনের চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই তার।
নারীর স্বাস্থ্য অধিকার কতটুকু কিংবা কতটা সে নিজের সুস্থতার কথা ভাবতে পারে চারপাশে তাকালে বহু অসহায় চিত্র চোখে পড়ে আমাদের। ৩৭ বছর বয়সী সায়লা বেগম। এ বয়সে তিনি গর্ভধারণ করেন। স্বামী কখনই কোনো প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেননি। বাধ্য হয়ে সায়মা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতেন। মাসখানেক শারীরিক কিছু সমস্যায় পিল খাওয়া বন্ধ করেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। বয়সের কারণে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ তাই ডাক্তার সায়মাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেন। কিন্তু সায়মার স্বামীর কথা কাজে থাকলেই বরং তুমি ভালো থাকবে। উপায়হীন সায়মার ঘরের কাজ করতে গিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গর্ভপাত হয়। এ যাত্রা সায়মা বেঁচে গেলেও গর্ভপাতজনিত জটিলতায় শরীরে রোগ বাসা বাঁধে চিরদিনের জন্য।
স্বাস্থ্য অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে এই অধিকার প্রাপ্তিতে গ্রামের নিরক্ষর দরিদ্র নারী প্রান্তিক অবস্থানে আছেন। মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে তার তেমন কোনো অবস্থান নেই। পরিবারে ছোটবেলা থেকেই সে অবহেলিত, বঞ্চিত। এখনও অনেক শিক্ষিত পরিবারে ছেলেমেয়ে লিঙ্গবৈষম্যে বড় হয়। দরিদ্র পরিবারগুলোর অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। এসব পরিবারে মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক বিষয় ভাবার চেয়ে তাদের বিয়ে দিয়ে বোঝামুক্ত হওয়াই থাকে পরিবারের মুখ্য চাওয়া। স্বামীর বাড়িতে মেয়েটি পরিবারের সবার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত হয়। কিন্তু তার শরীর স্বাস্থ্যের কথা ভাবা দূরে থাক, তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছে কি-না সেটা জানতে চায় না কেউ। ফলে অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, রক্তশূন্যতায় ভোগে নারী খুব কম বয়স থেকে। তাই নানা রোগে আক্রান্ত হয় সহজেই। রোগাক্রান্ত নারী ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকে।
উচ্চশিক্ষিত একটি পরিবারের কথা শুনুন পাঠক। পঞ্চাশোর্ধ সিলভিয়া রেজা (ছদ্মনাম ব্যবহার করা হলো) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করেছেন আশির দশকে। স্বামী প্রকৌশলী। স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্বামীর গর্ব থাকলেও চাকরি করতে দেননি তাকে। সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বামীর একক সিদ্ধান্ত। জরায়ুতে টিউমার হওয়ার কারণে ৪৩ বছর বয়সেই জরায়ু ফেলে দিতে হয় তাকে। বলেন, আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে অথচ তিনি জরায়ু ফেলে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। সমস্যা আমার অথচ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তিনি। আমার অবস্থা খুব সিরিয়াস হয়ে গেলে বাধ্য হন অপারেশন করাতে। এতগুলো টাকা খরচ হয়ে গেল আমার পেছনে_ এ নিয়ে কত কথা যে শুনতে হয়েছে। এখনও শুনতে হয় প্রতিনিয়ত। কারণ আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি। আমার আত্মীয়-পরিজন অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে চেকআপ করানোর কথা বলেন, কিন্তু আমি আমার স্বামীকে বলি না। কারণ আমি জানি সে আমার পেছনে এত টাকা খরচ করবে না। অথচ আমার স্বামী সিঙ্গাপুর থেকে তার হার্টের বাইপাস করিয়েছেন। ঢাকায় তিনি নিয়মিত চেকআপও করাচ্ছেন। আমার অসুস্থতা তার চিন্তার কোনো কারণ তো নয়ই উল্টো বিরক্ত হন সবসময়। আমার স্বামীকে বাইরে থেকে লোকে বুঝবে না সে এমন। কত কষ্টে যে দিন কাটাচ্ছি শুধু ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে।
নারীর স্বাস্থ্য অধিকার কতটুকু কিংবা কতটা সে নিজের সুস্থতার কথা ভাবতে পারে চারপাশে তাকালে বহু অসহায় চিত্র চোখে পড়ে আমাদের। ৩৭ বছর বয়সী সায়লা বেগম। এ বয়সে তিনি গর্ভধারণ করেন। স্বামী কখনই কোনো প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেননি। বাধ্য হয়ে সায়মা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতেন। মাসখানেক শারীরিক কিছু সমস্যায় পিল খাওয়া বন্ধ করেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। বয়সের কারণে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ তাই ডাক্তার সায়মাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেন। কিন্তু সায়মার স্বামীর কথা কাজে থাকলেই বরং তুমি ভালো থাকবে। উপায়হীন সায়মার ঘরের কাজ করতে গিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গর্ভপাত হয়। এ যাত্রা সায়মা বেঁচে গেলেও গর্ভপাতজনিত জটিলতায় শরীরে রোগ বাসা বাঁধে চিরদিনের জন্য।
স্বাস্থ্য অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে এই অধিকার প্রাপ্তিতে গ্রামের নিরক্ষর দরিদ্র নারী প্রান্তিক অবস্থানে আছেন। মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে তার তেমন কোনো অবস্থান নেই। পরিবারে ছোটবেলা থেকেই সে অবহেলিত, বঞ্চিত। এখনও অনেক শিক্ষিত পরিবারে ছেলেমেয়ে লিঙ্গবৈষম্যে বড় হয়। দরিদ্র পরিবারগুলোর অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। এসব পরিবারে মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক বিষয় ভাবার চেয়ে তাদের বিয়ে দিয়ে বোঝামুক্ত হওয়াই থাকে পরিবারের মুখ্য চাওয়া। স্বামীর বাড়িতে মেয়েটি পরিবারের সবার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত হয়। কিন্তু তার শরীর স্বাস্থ্যের কথা ভাবা দূরে থাক, তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছে কি-না সেটা জানতে চায় না কেউ। ফলে অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, রক্তশূন্যতায় ভোগে নারী খুব কম বয়স থেকে। তাই নানা রোগে আক্রান্ত হয় সহজেই। রোগাক্রান্ত নারী ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকে।
উচ্চশিক্ষিত একটি পরিবারের কথা শুনুন পাঠক। পঞ্চাশোর্ধ সিলভিয়া রেজা (ছদ্মনাম ব্যবহার করা হলো) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করেছেন আশির দশকে। স্বামী প্রকৌশলী। স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্বামীর গর্ব থাকলেও চাকরি করতে দেননি তাকে। সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বামীর একক সিদ্ধান্ত। জরায়ুতে টিউমার হওয়ার কারণে ৪৩ বছর বয়সেই জরায়ু ফেলে দিতে হয় তাকে। বলেন, আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে অথচ তিনি জরায়ু ফেলে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। সমস্যা আমার অথচ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তিনি। আমার অবস্থা খুব সিরিয়াস হয়ে গেলে বাধ্য হন অপারেশন করাতে। এতগুলো টাকা খরচ হয়ে গেল আমার পেছনে_ এ নিয়ে কত কথা যে শুনতে হয়েছে। এখনও শুনতে হয় প্রতিনিয়ত। কারণ আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি। আমার আত্মীয়-পরিজন অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে চেকআপ করানোর কথা বলেন, কিন্তু আমি আমার স্বামীকে বলি না। কারণ আমি জানি সে আমার পেছনে এত টাকা খরচ করবে না। অথচ আমার স্বামী সিঙ্গাপুর থেকে তার হার্টের বাইপাস করিয়েছেন। ঢাকায় তিনি নিয়মিত চেকআপও করাচ্ছেন। আমার অসুস্থতা তার চিন্তার কোনো কারণ তো নয়ই উল্টো বিরক্ত হন সবসময়। আমার স্বামীকে বাইরে থেকে লোকে বুঝবে না সে এমন। কত কষ্টে যে দিন কাটাচ্ছি শুধু ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে।
No comments