মাতৃমৃত্যু হ্রাস
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ এর জনসংখ্যা বিভাগের প্রধান কিম পিটার স্ট্রিডফিল্ড বলেছেন যে, গর্ভধারণ না করলে মাতৃমৃত্যুরও ঝুঁকি থাকে না। তাই গর্ভধারণ যত কম হবে, মাতৃমৃত্যুও তত কম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নারীর গর্ভধারণের হার কমে।
আর এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই নারীর সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতা অনেকাংশেই কমে যায়। গর্ভধারণ কমে গেলে গর্ভপাত ও সেই সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিও কমে যাবে। ২০০১ সালে এদেশের মাতৃমৃত্যু জরিপে দেখা গেছে যে, সন্তান প্রসবকালে বছরে ১২ হাজার ২২৮ জন নারীর মৃত্যু হতো। ২০১০ সালের জরিপে দেখা যায় যে, বর্তমানে বছরে ৭ হাজার ৩৩২ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। নারীর জন্ম দেবার হার কমে যাবার ফলেই মায়ের মৃত্যুহারও কমে এসেছে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল সংবাদ। ২০০১ সালে টিএফআর বা নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার হার ছিল ৩ দশমিক ৩ যা কিনা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩। গর্ভধারণ রোধ করতে পারলে গর্ভপাত বা প্রসবকালীন জটিলতা হবার কোন আশঙ্কাই থাকে না, ফলে নারী দৈহিকভাবে থাকে সুস্থ। নারীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে গেলে বা মাতৃমৃত্যু রোধ করতে হলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে। বিডিএইচএস (২০১১)-এর মতে, এখনও বিবাহিত নারীদের ১২ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পান না। শহরের নারীরা হয়তো সহজে এই সব সামগ্রী কিনতে পারে কিন্তু গ্রামে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে এই সব সামগ্রী পাওয়া দুষ্কর। সেই সব স্থানে নির্ভর করতে হয় পরিবার পরিকল্পনার মাঠ কর্মীদের ওপর। কাজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের পরিবার পরিকল্পনা অনেকাংশেই নির্ভর করে মাঠকর্মীদের ওপর। তাই সরকারী নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে করে এই মাঠকর্মীরা জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিরোধক সরবরাহে একটি বাড়িও যেন বাদ না দেয়। শহরেও মাঠকর্মীদের কাজকে আরও নিবিড় করতে হবে। কারণ অনেক দরিদ্র নারীই নিজের অর্থে প্রতিরোধক কিনতে সমর্থ হবে না। সুতরাং কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণে নারী পুরুষকে সচেতন করলেই চলবে না। একই সঙ্গে নিয়মিতভাবে গর্ভ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে এই বিশাল জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যাকে কমাতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনায় ব্যাপক প্রচার ও প্রসার। প্রতিটি দম্পতি যখন জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি গ্রহণ করবে তখন দেশের জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধ করা যাবে। আর এর ফলে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্যগত দিকেরও উন্নতি ঘটবে।
No comments