জোট আমলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে কোটি কোটি টাকা অপচয়- অডিট আপত্তি

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মেশিন কিনেও বছরের পর বছর ফেলে রাখা, পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া, বিধি অনুসরণ না করে যন্ত্রপাতি কেনাসহ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অডিট আপত্তি দেয়া হয়েছে।


এ ধরনের অনিয়মের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অডিট প্রতিবেদনে।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে এ অডিট আপত্তি পেশ করা হয়। কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য আলী আশরাফ, টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, মোহাম্মদ ছায়েদুল হক ও খান টিপু সুলতান বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে ২০০৫-০৬ অর্থবছর পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রাণাধীন বিএসএমএমইউ অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৪ টাকার অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়। অডিট আপত্তিতে বলা হয়, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৬৯ লাখ ২০ টাকা ব্যয়ে মোবাইল-সি-আর্ম মেশিন কেনা হয়। কেনার পরে প্রায় তিন বছর এটি অব্যবহৃত ফেলে রাখা হয়। এছাড়া এই মেশিন কেনার জন্য সরকারী ক্রয় নীতিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। কমিটি এক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ৬ কোটি ৮১ লাখ ৩২ হাজার টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনায় নির্দিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া হয়। এর ফলে আরো কম দামে যন্ত্রপাতি কেনার সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। কমিটি আগামী তিন মাসের দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।
অডিট রিপোর্টে আরও বলা হয়, পিপিআর অনুসরণ না করে এনজিওক্যাথল্যাব মেশিন কেনার ফলে ৩ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। কমিটির অভিযোগ একই মেশিন বিভিন্ন বেসরকারী হাতপাতালে কম দামে কেনা হলেও সরকারী হাসপাতালের ক্ষেত্রে বেশি টাকা খরচ হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কমিটি অতিরিক্ত টাকা খরচের সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।
এছাড়া আর্থিক সাশ্রয় নীতিমালা অনুসরণ না করে অনিয়মিতভাবে লিথোট্রিপস মেশিন ক্রয়ের ফলে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ এবং হার্ট লাং মেশিন ক্রয়ে অনিয়ম ও ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
লিফট, জেনারেটর, এয়ারকুলার সরবরাহ, স্থাপন ও চালু করার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মূসক নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হয়নি। এর ফলে সরকারের প্রায় ৫৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই টাকা সরবরাহকারী ও স্থাপনকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিএসএমএমইউতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০-২০০১ অর্থবছর পর্যন্ত বিএসএমএমইউ’তে কোনো অনিয়ম হয়নি। অথচ এর পর থেকেই অনিয়ম শুরু হয়ে গেল। এটা ইপ্সিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.