শ্রদ্ধাঞ্জলি-প্রক্সিমা সেন্টোরির আলো by সালেহা চৌধুরী
আজ সমস্ত দেশবাসী তাঁকে হারিয়ে কাঁদছে। তিনি এখন আমার কাছে প্রক্সিমা সেন্টোরি_ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ফেলে আর এক গ্যালাক্সিতে চলে গেছেন তিনি। তাঁর আলো যতদিন বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন অম্লান হয়ে রইবে। আর এক গ্যালাক্সিতে গেলেও কে তাকে ভুলে যাবে
অনেকদিন আগের কথা। আমার ননদ ইতি একদিন বাড়িতে এসে প্রশ্ন করে_ ভাবী, আপনি কি হুমায়ূন আহমেদ বলে কাউকে চেনেন? বললাম, কেন? উত্তর দিল_ এই দেখেন এই পত্রিকায় 'নন্দিত নরকে' বলে একটি ছোট উপন্যাস বেরিয়েছে, সেখানে একটি মেয়ে যার ডাক নাম রুনু আর ভালো নাম সালেহা খাতুন (তখন এই নামে আমি পরিচিত ছিলাম, দুটোই আমার নাম)। তখন তিন-চার বছর হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছি। ভাবলাম_ কী লিখেছেন এই লেখক। দেখলাম রুনু উত্তম পুরুষের ছোট্ট বোনটির নাম। মনটা সি্নগ্ধ হয়ে গেল। যদি তিনি এই নাম মন থেকে লেখেন তাহলেও বলতে হয় সেদিন থেকে কেমন যেন কোমলতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল আমার মন এবং সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত এই কোমলতাই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কের সর্বপ্রধান সুর। পরে সেখানে মিশেছে গভীর শ্রদ্ধা। অনেকদিন পর আবার দেখা। তখন তাঁকে আমার কিছু বই দিলাম। তারপর বিদেশে চলে এলাম। পরে যখন দেশে গেলাম জানতে পারলাম, তিনি আমার খোঁজ করছিলেন বাড়িতে ফোন করে। তাঁর বাড়িতে (রাস্তার এপার আর ওপার তাঁর-আমার বাড়ি) গিয়ে জানলাম_ বাড়িতে ফোন করবার কারণ জন স্টেইনবেকের অনূদিত গ্রন্থটি তাঁকে খুবই মুগ্ধ করেছে। আমারই মতো তিনি নিজেও জন স্টেইনবেকের গুণমুগ্ধ পাঠক। _ তিনি পড়বার পরপরই ফোন করে অনুভূতি জানাতে চেয়েছিলেন। বললেন_ আমার নুহাশ পল্লীতে যখন মনে হবে যাবেন। লিখবেন। নুহাশ পল্লীর দরজা আপনার জন্য খোলা। অভিভূত হলাম। কয়েকজন ছিলেন সেখানে ওদের বললেন_ জানেন, তিনি জন স্টেইনবেক অনবদ্য অনুবাদ করতে পারেন?
এরপর আমার তাঁর বাড়িতে যাওয়াটা একটা নেশার মতো হয়ে গেল। গেটে বলা ছিল দারোয়ান যেন আমাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেন। তাঁরা আমার গাড়ি দেখলে একটাও প্রশ্ন করতেন না। আমি সোজা উপরে চলে যেতাম। সকালের দিকে গিয়ে দেখতাম_ টুলের ওপর কাগজ পেতে লিখছেন। মাটিতে বসে যেতাম। চা পান আর গল্প চলত। বিকেলে গেলে সন্ধ্যার আসরের আগে চলে আসতাম। ইচ্ছা করেই। কোনো কোনোদিন খাওয়ার জন্য জেদ করতেন। দু'একবার আমার লেখা অতিপ্রাকৃত গল্প পড়ে শোনাতেও গিয়েছিলাম। মন দিয়ে শুনেছিলেন। বলেছিলেন_ উত্তমপুরুষে লিখবেন না। আমি তখন উত্তমপুরুষ নয়, থার্ডপারসনে গল্পটি লিখেছিলাম। তাঁর বাষট্টির জন্মদিনে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলাম। সেখানে তখন বেশ রাত। অনেক ফানুস উড়েছে। একটা নির্জন জায়গায় বসে ফানুস দেখতে দেখতে বললাম_ জানেন অনেকদিন আগে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। দেখেছি_ আকাশে একটি তারা। আপনি আমার সঙ্গে আছেন। আমি বলছি_ তারাটি প্রক্সিমা সেন্টোরি। আর প্রক্সিমা সেন্টোরি করতে করতে আমার ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি হেসে বললেন_ ওতো অনেকদূরের তারা। আর এক গ্যালাক্সির। আমি কাছের একটা তারা এনে দেব। আমি বললাম, সত্যি? তিনি হাসলেন। এরপর সেই বছর তিনি আমাকে ওঁর বই রূপা উৎসর্গ করে লিখেছেন_ আমার অল্প কয়েকজন কাছের মানুষের একজন। তখন আমি বইমেলায়। আমার স্বামী ফোন করে জানিয়েছেন_ জানো, হুমায়ূন আহমেদ তোমাকে একটা বই উৎসর্গ করেছেন। এক তোড়া ফুল, এক বাক্স মিষ্টি আর দুটো বই একজনের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাকে বলি এ কথা? সময় পাবলিশার্সের ফরিদ আহমদকে বললাম এবং আরও দু'একজনকে। বলাবাহুল্য, এই খুশি আমি কোথায় রাখব ভেবে পাইনি।
কখন যে তিনি আমাকে এত আপনজন ভেবেছেন জানি না। কিন্তু এত বড় মানুষের প্রিয় একজন, কাছের একজন, আমার মনে হয়েছিল_ এটা যে কোনো সাহিত্য পুরস্কারের চাইতেও বড় ঘটনা আমার কাছে। আমার একটি উপন্যাস পড়ে বলেছিলেন_ দু'একটা কঠিন (এটি তার প্রিয় ব্যবহৃত শব্দ) শব্দ দেখলাম। এগুলো বাদ দেওয়া যায় না? এরপর থেকে আমি কঠিন বা ভারী শব্দ লিখতে চিন্তা করেছি। সেই বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণে তাঁর অপছন্দের ভারী শব্দ বাদ দিয়েছি। কিন্তু সে বই তাঁকে দেখাতে পারিনি।
বলেছিলাম_ আমি অতিপ্রাকৃত গল্প দিয়ে একটা বই করছি। আপনি কি ভূমিকা লিখে দেবেন? বলেছিলেন_ দেব। এটা এমনকি কঠিন কাজ। সেটা তিনি আর লিখে দিতে পারেননি। আমি সেই কারণে গত বছর বইটা ছাপাইনি। ভেবেছিলাম_ আসবেন। তখন লিখে দিলে ছাপাব। আবার আমি ঢাকা যাব। কিন্তু আর কখনোই তাঁর ফ্ল্যাটে না হলে নুহাশ পল্লীতে তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা যাবে না, ভাবতেই ঢাকায় যাবার সমস্ত আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। তাঁর মা, যাকে আমি খালাম্মা বলি, খুবই প্রিয় একজন। একবার তাঁর বোন মমতাজ শহীদ শিখু ওর লেখা আমার দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদ এই শিরোনামের বইটা আমাকে উপহার দিতে গিয়ে লিখেছিল_ 'সালেহা আপা আমার মায়ের চতুর্থ মেয়ে।' তাঁদের সকলের কাছে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি তাঁর তুলনা করব এমন কিছু আমি খুঁজে পাই না। তাঁরা সকলেই অসাধারণ। আহসান হাবীব, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ওদের ছোট খালা, বড় খালা, মামা, সকলেই। আমি বলেছিলাম একবার_ আমি কিন্তু আপনাদের পরিবারের একজন। বড় খালা বলেছিলেন_ পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বাড়ে তত ভালো। ফেলে আসা স্ত্রী-কন্যার কথা অনেকবার শুনেছি তাঁর কাছে। হৃদয়ের ভেতরে একটা বেদনার কথা জেনেছি অনেক হাসি আর মজার কথার ভেতর। কেউ কি গভীর করে ভেবেছে জীবনের এই অধ্যায়ের কষ্টটা তারই তো একার।
তাঁর অসুখের খবর পেয়ে বলেছিলাম_ খালাম্মা খুব করে ছেলের জন্য দোয়া করবেন। মায়ের দোয়া আল্লাহ শোনেন। আল্লাহ আমাদের কারো প্রার্থনাই রাখেননি। তিনি নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। কোনো টেক্সট মেসেজ করলেই উত্তর পেতাম। আমি তাঁর নামটাকে সংক্ষেপ করে, মোবাইলে লিখেছিলাম ঐুসহ. আমার মোবাইলে সেভ করা এই নাম কী করে মুছে ফেলি। যদি কোনোদিন আর এক জগৎ থেকে কোনো কথা ভেসে আসে_ এখন আপনি কী লিখছেন সালেহা চৌধুরী রুনু? তাঁর মোবাইলে আমার কী নাম লেখা ছিল জানি না। ফোন করলেই উত্তর পাওয়া যেত এতবড় একজন মানুষের কাছ থেকে।
আজ সমস্ত দেশবাসী তাঁকে হারিয়ে কাঁদছে। তিনি এখন আমার কাছে প্রক্সিমা সেন্টোরি_ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ফেলে আর এক গ্যালাক্সিতে চলে গেছেন তিনি। তাঁর আলো যতদিন বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন অম্লান হয়ে রইবে। আর এক গ্যালাক্সিতে গেলেও কে তাকে ভুলে যাবে। বাংলাদেশের লেখকদের বই বিক্রি হয় না, লেখক খেতে পায় না, ভারতের লেখকদের বই থাকলে বাংলাদেশের বই পড়া হয় না, দেশ পত্রিকা পুজো সংখ্যায় বাংলাদেশের লেখকের লেখা ছাপে না, এইসব গ্গ্নানি থেকে তিনি আমাদের মুক্ত করেছিলেন। একবার দুঃখ করে বলেছিলেন আমাকে_ কেন আপনাকে ওরা বাংলা একাডেমী পুরস্কার দিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। ওঁরা কি সব কবর থেকে লেখক তুলে পুরস্কার দেবে নাকি? এইবার ব্রিটেনে বসে সেই সম্মানিত পুরস্কারে ভূষিত আমি। জানি না সে খবর তিনি পেয়েছিলেন কিনা। আরো কত কথা। আরো কত স্মৃতি।
বড় কোনো তারার আলো এনে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি কি জানেন না যতবারই আমি তার কাছে বসেছি, মনে হয়েছে_ মস্ত উজ্জ্বল এক তারার কাছাকাছি আমি।
সালেহা চৌধুরী : কথাশিল্পী
এরপর আমার তাঁর বাড়িতে যাওয়াটা একটা নেশার মতো হয়ে গেল। গেটে বলা ছিল দারোয়ান যেন আমাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেন। তাঁরা আমার গাড়ি দেখলে একটাও প্রশ্ন করতেন না। আমি সোজা উপরে চলে যেতাম। সকালের দিকে গিয়ে দেখতাম_ টুলের ওপর কাগজ পেতে লিখছেন। মাটিতে বসে যেতাম। চা পান আর গল্প চলত। বিকেলে গেলে সন্ধ্যার আসরের আগে চলে আসতাম। ইচ্ছা করেই। কোনো কোনোদিন খাওয়ার জন্য জেদ করতেন। দু'একবার আমার লেখা অতিপ্রাকৃত গল্প পড়ে শোনাতেও গিয়েছিলাম। মন দিয়ে শুনেছিলেন। বলেছিলেন_ উত্তমপুরুষে লিখবেন না। আমি তখন উত্তমপুরুষ নয়, থার্ডপারসনে গল্পটি লিখেছিলাম। তাঁর বাষট্টির জন্মদিনে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলাম। সেখানে তখন বেশ রাত। অনেক ফানুস উড়েছে। একটা নির্জন জায়গায় বসে ফানুস দেখতে দেখতে বললাম_ জানেন অনেকদিন আগে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। দেখেছি_ আকাশে একটি তারা। আপনি আমার সঙ্গে আছেন। আমি বলছি_ তারাটি প্রক্সিমা সেন্টোরি। আর প্রক্সিমা সেন্টোরি করতে করতে আমার ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি হেসে বললেন_ ওতো অনেকদূরের তারা। আর এক গ্যালাক্সির। আমি কাছের একটা তারা এনে দেব। আমি বললাম, সত্যি? তিনি হাসলেন। এরপর সেই বছর তিনি আমাকে ওঁর বই রূপা উৎসর্গ করে লিখেছেন_ আমার অল্প কয়েকজন কাছের মানুষের একজন। তখন আমি বইমেলায়। আমার স্বামী ফোন করে জানিয়েছেন_ জানো, হুমায়ূন আহমেদ তোমাকে একটা বই উৎসর্গ করেছেন। এক তোড়া ফুল, এক বাক্স মিষ্টি আর দুটো বই একজনের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাকে বলি এ কথা? সময় পাবলিশার্সের ফরিদ আহমদকে বললাম এবং আরও দু'একজনকে। বলাবাহুল্য, এই খুশি আমি কোথায় রাখব ভেবে পাইনি।
কখন যে তিনি আমাকে এত আপনজন ভেবেছেন জানি না। কিন্তু এত বড় মানুষের প্রিয় একজন, কাছের একজন, আমার মনে হয়েছিল_ এটা যে কোনো সাহিত্য পুরস্কারের চাইতেও বড় ঘটনা আমার কাছে। আমার একটি উপন্যাস পড়ে বলেছিলেন_ দু'একটা কঠিন (এটি তার প্রিয় ব্যবহৃত শব্দ) শব্দ দেখলাম। এগুলো বাদ দেওয়া যায় না? এরপর থেকে আমি কঠিন বা ভারী শব্দ লিখতে চিন্তা করেছি। সেই বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণে তাঁর অপছন্দের ভারী শব্দ বাদ দিয়েছি। কিন্তু সে বই তাঁকে দেখাতে পারিনি।
বলেছিলাম_ আমি অতিপ্রাকৃত গল্প দিয়ে একটা বই করছি। আপনি কি ভূমিকা লিখে দেবেন? বলেছিলেন_ দেব। এটা এমনকি কঠিন কাজ। সেটা তিনি আর লিখে দিতে পারেননি। আমি সেই কারণে গত বছর বইটা ছাপাইনি। ভেবেছিলাম_ আসবেন। তখন লিখে দিলে ছাপাব। আবার আমি ঢাকা যাব। কিন্তু আর কখনোই তাঁর ফ্ল্যাটে না হলে নুহাশ পল্লীতে তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা যাবে না, ভাবতেই ঢাকায় যাবার সমস্ত আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। তাঁর মা, যাকে আমি খালাম্মা বলি, খুবই প্রিয় একজন। একবার তাঁর বোন মমতাজ শহীদ শিখু ওর লেখা আমার দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদ এই শিরোনামের বইটা আমাকে উপহার দিতে গিয়ে লিখেছিল_ 'সালেহা আপা আমার মায়ের চতুর্থ মেয়ে।' তাঁদের সকলের কাছে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি তাঁর তুলনা করব এমন কিছু আমি খুঁজে পাই না। তাঁরা সকলেই অসাধারণ। আহসান হাবীব, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ওদের ছোট খালা, বড় খালা, মামা, সকলেই। আমি বলেছিলাম একবার_ আমি কিন্তু আপনাদের পরিবারের একজন। বড় খালা বলেছিলেন_ পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বাড়ে তত ভালো। ফেলে আসা স্ত্রী-কন্যার কথা অনেকবার শুনেছি তাঁর কাছে। হৃদয়ের ভেতরে একটা বেদনার কথা জেনেছি অনেক হাসি আর মজার কথার ভেতর। কেউ কি গভীর করে ভেবেছে জীবনের এই অধ্যায়ের কষ্টটা তারই তো একার।
তাঁর অসুখের খবর পেয়ে বলেছিলাম_ খালাম্মা খুব করে ছেলের জন্য দোয়া করবেন। মায়ের দোয়া আল্লাহ শোনেন। আল্লাহ আমাদের কারো প্রার্থনাই রাখেননি। তিনি নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। কোনো টেক্সট মেসেজ করলেই উত্তর পেতাম। আমি তাঁর নামটাকে সংক্ষেপ করে, মোবাইলে লিখেছিলাম ঐুসহ. আমার মোবাইলে সেভ করা এই নাম কী করে মুছে ফেলি। যদি কোনোদিন আর এক জগৎ থেকে কোনো কথা ভেসে আসে_ এখন আপনি কী লিখছেন সালেহা চৌধুরী রুনু? তাঁর মোবাইলে আমার কী নাম লেখা ছিল জানি না। ফোন করলেই উত্তর পাওয়া যেত এতবড় একজন মানুষের কাছ থেকে।
আজ সমস্ত দেশবাসী তাঁকে হারিয়ে কাঁদছে। তিনি এখন আমার কাছে প্রক্সিমা সেন্টোরি_ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ফেলে আর এক গ্যালাক্সিতে চলে গেছেন তিনি। তাঁর আলো যতদিন বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন অম্লান হয়ে রইবে। আর এক গ্যালাক্সিতে গেলেও কে তাকে ভুলে যাবে। বাংলাদেশের লেখকদের বই বিক্রি হয় না, লেখক খেতে পায় না, ভারতের লেখকদের বই থাকলে বাংলাদেশের বই পড়া হয় না, দেশ পত্রিকা পুজো সংখ্যায় বাংলাদেশের লেখকের লেখা ছাপে না, এইসব গ্গ্নানি থেকে তিনি আমাদের মুক্ত করেছিলেন। একবার দুঃখ করে বলেছিলেন আমাকে_ কেন আপনাকে ওরা বাংলা একাডেমী পুরস্কার দিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। ওঁরা কি সব কবর থেকে লেখক তুলে পুরস্কার দেবে নাকি? এইবার ব্রিটেনে বসে সেই সম্মানিত পুরস্কারে ভূষিত আমি। জানি না সে খবর তিনি পেয়েছিলেন কিনা। আরো কত কথা। আরো কত স্মৃতি।
বড় কোনো তারার আলো এনে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি কি জানেন না যতবারই আমি তার কাছে বসেছি, মনে হয়েছে_ মস্ত উজ্জ্বল এক তারার কাছাকাছি আমি।
সালেহা চৌধুরী : কথাশিল্পী
No comments