সাকার গুডসহিলে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়- যুদ্ধাপরাধী বিচার-শাবি উপাচার্যের জবানবন্দী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে লোমহর্ষক নির্যাতনের জবানবন্দী প্রদান করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহ উদ্দিন।
তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ৮ম সাক্ষী। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের গুডস হিলে নিয়ে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় আমি সেখান থেকে ফিরে আসি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এসে বলতে থাকেন, একে কি মেরেছিস রে, ওর চোখে তো পানিও আসেনিÑ একথা বলে তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার বাম গালে প্রচ- জোরে এক থাপ্পড় মারেন। এরপর বলেন, একে নিয়ে যা। তখন দু’জন লোক আবার আমাকে নিচতলার আগের স্থানে নিয়ে যায়। সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই জবনবন্দী প্রদান করেন ৮ম সাক্ষী মোঃ সালেহ উদ্দিন।
এদিকে এই অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মোঃ হেলাল উদ্দিনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহিলার সাক্ষীর যে ক্যামেরা ট্রায়াল হবার কথা ছিল তা হয়নি। স্ক্ষাী অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি।
বিএনপি নেতা সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দী পেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালী, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা এবং আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান)। তাদের জেরাও সম্পন্ন করেছে আসামিপক্ষ। সোমবার জবানবন্দী উপলক্ষে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাক্ষী মোঃ সালেহ উদ্দিনকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীকে একটি মাত্র প্রশ্ন করেন। আজ তাঁকে পুনরায় জেরা করা হবে। ৮ম সাক্ষী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহ উদ্দিন জবানবন্দীতে একাত্তর সালের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। তরুণ সালেহ উদ্দিন সাকা চৌধুরী, তার বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী, আল শামস বাহিনী এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৮ম সাক্ষী মোঃ সালেহ উদ্দিন বলেন, গুডস হিলের বাসা থেকে আসার পর খানিকটা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ঐ বাড়িতেই ছিলাম (লজিং বাড়ি)। পরে প্রাণ ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাই। তিনি বলেন, আমি যখন গ্যারেজের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম তখন ওখানে একজন ড্রাইভার ও একটি ছেলেকে দেখতে পাই। আমার মনে হয়েছে ঐ ছেলেটির ওপরও অত্যাচার করা হয়েছে। তাকে যখন নিয়ে যায় তখন ফকার ড্রাইভার আমাকে বলেছে, হয়ত তাকে (ঐ ছেলেটিকে) মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছেলে সম্বন্ধে আর কিছু জানি না।
জবানবন্দী দেয়ার সময় নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বর্তমান বয়স ৬১ আনুমানিক। ছাত্র জীবনে তিনি নিজ গ্রাম হবিগঞ্জ জেলার মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। সেখানে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর একই জেলার অন্য একটি স্কুলে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পরে চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রামের এএল খান স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ থেকে ট্রান্সফার স্টুডেন্ট হিসেবে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হোন। ১৯৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। ১৯৮৯ সালে তিনি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী নেন। ১৯৭৫-এ মাস্টার্স পাস করার পর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
স্কুলের ভাল ছাত্র বিধায় আমার ভাইয়ের চাকরি থেকে বদলি হয়ে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আগ্রহে মোহরা গ্রামের রাজা চৌধুরীর সাহেবের বাড়িতে আমার লজিং-এর ব্যবস্থা হয়। ঐ বাড়িতে লজিং থেকে আমি স্কুল কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত অবস্থান করছিলাম। একাত্তরের মার্চে আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। মার্চের মাঝামাঝি ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় রাজা খান চৌধুরীর বাড়িতে চলে যাই।
মোঃ সালেহ উদ্দিন জবানবন্দীতে বলেন, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কোন একদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে আমি যে মোহরা গ্রামে থাকতাম সেই গ্রামের পাশের ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান শামসু মিয়াসহ তিনজন লোক আমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। শামসু মিয়া ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের সদস্য এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর অনুসারী। অসময়ে দরজায় কড়া নাড়া শুনে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি এবং লক্ষ্য করি যে, চেয়ারম্যানের ডান হাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকানো আর সেখানে একটি অস্ত্র। তিনি আমাকে তার সঙ্গে বাইরে যেতে বলেন। আমি কাপড় পাল্টানোর কথা বললে তিনি বলেন, তার দরকার নেই। সামান্য সময়ের ব্যাপার।
আমার গায়ে ছিল সাদা হাফ শার্ট ও লুঙ্গি। আমি তার সঙ্গে রওনা দেই। আনুমানিক দু-তিন শ’ গজ দূরে গিয়ে লক্ষ্য করি একটি সেনাবাহিনীর জীপ দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই দু’জন পাকিস্তানী সিপাহি আমার দুই হাত ধরে আমাকে জীপে টেনে তুলে নেয়। এ সময় তারা আমার দেহতল্লাশি করে। চেয়ারম্যান শামসু মিয়া চালকের আসনের পাশে বসেন। জীপটা শামসু মিয়ার বাড়ির কাছাকাছি যাবার পর শামসু মিয়া জীপ থেকে নেমে যান। তারপর জীপটি যদুমিয়া সড়কের কাছে কাপ্তাই শহরে ওঠে। সেখান থেকে আরাকান রোড হয়ে সোজা গুডস হিলে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে থামে। তখন আমি দেখি ফজলুল কাদের চৌধুরী (ফকা চৌধুরী) একটা চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনে একটি টেবিল। পাশে দাঁড়ানো তাঁর বড় ছেলে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। তিনি (ফকা) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ওকে তক্তা (মার) দাও।
ওই সময় আমাকে ধরে-নিয়ে যাওয়া দুই পাক সিপাহি ফকার বাড়ির ভেতরের লম্বা ঘরের দোতলায় নিয়ে যায়। আমি সেখানে দাঁড়ানো মাত্র দু’যুবক সেখানে ঢোকে। ওদের দুু’জনকে আমি আগে থেকে চিনতাম। একজন হামিদুল কবির, যার ডাক নাম খোকা। আরেকজন সেকান্দার। খোকাকে আল শামস বাহিনীর স্থানীয় প্রধান বলে আমি জানতাম। কোন কথা না বলেই তারা দু’জন আমাকে বেধড়ক কিলঘুষি মারতে থাকে। এক সময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার সঙ্গে আর কারা আছে? অস্ত্র কোথায় আছে?
জবাবে আমি আমার সঙ্গে কারোরই সম্পৃক্ততা নাই জানাতেই তারা আমাকে আবার মারতে থাকে। ওই ঘরে মশারির কয়েকটি স্ট্যান্ড স্তূপ করে রাখা ছিল। এই সময় পাক আর্মির সিপাহিদের একজন আমাকে মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে পেটাতে থাকে। এভাবে আমার শরীরের ওপর তিনটা স্ট্যান্ড সে ভাঙ্গে। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি। অচেতন হয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে তারা আমায় বলতে থাকে,নাম বল, অস্ত্র কোথায় আছে বল। এরপর ওরা আমাকে সেখানে রেখে নিচে চলে যায়। এরপর আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর সিপাহিরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নিয়ে যায়। তখন সেখানে উপস্থিত সাকা বলতে থাকেন, একে কি মেরেছিস রে। ওর চোখে তো পানিও আসেনি। একথা বলে তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গালে প্রচ- জোরে এক থাপ্পড় মারেন। এরপর বলেন, একে নিয়ে যা। তখন দু’জন লোক আবার আমাকে নিচতলার আগের স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটায় তারা। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচব না। বার বার মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাব। সেই স্থানে আমি কতক্ষণ অচেতন হয়ে পড়েছিলাম সেটা বলতে পারব না। এর মধ্যে তারা আমাকে সিঁড়ি দিয়ে আবার উপরের ঘরে নিয়ে যায়।
কিছ্ক্ষুণ পর ওখানে একটি ছেলে আসে। সে আমার পূর্বের পরিচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র। এক বছরের সিনিয়র। তার নাম নুরুল ইসলাম। সে এমএলএফ করত। পরবর্তীকালে শুনেছি পাহাড়তলী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছে। নুরুল ইসলাম আমাকে দেখে বলল, আমি কোন কিছু স্বীকার করেছি কিনা। আমি তাকে বললাম, কিছুর সঙ্গে জড়িত নই, স্বীকার করব কিভাবে।
তখন সে বলল, ঠিক আছে দেখি কিছু করা যায় কিনা। তবে কেউ যদি আরও কিছু জিজ্ঞাসা করে কিছুতেই স্বীকার করবে না। কিছুক্ষণ পর সে আবার ফিরে আসে এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করে হোমরা গ্রামে মুসলিম লীগের ইউপি সদস্যসহ বিশিষ্ট কেউ আমার পক্ষে কিছু বলবে কিনা। আমি তখন কিছুৃটা আসার আলো দেখি। কারণ ঐ গ্রামে আমি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলাম।
আমি তখন দু’জন লোকের নাম বললাম। প্রথম হচ্ছেন নুরুল হুদা কদরী ওরফে মাইছে মিয়া ও বাদশা মিয়া সওদাগর। দু‘জনই আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। যদিও তারা মুসলিম লীগ করতেন। ঐ সময়ে তাঁদের হাতে কোন মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতাকামী মানুষ নিহত হয়নি। আমি যে স্কুলে লেখাপড়া করেছি তার সব শিক্ষককেও সাক্ষী মেনেছিলাম। এমনকি ঐ গ্রামে যে কোন লোককে জিজ্ঞাসা করতে বলেছি। আমি এটাও বলেছিলাম, একজনও যদি বলে আমি কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি তারপর মেরে ফেললে আপত্তি থাকবে না।
নুরুল ইসলাম তখন সাকার সঙ্গে কথা বলে আশ্বাস দিলে চলে যান। শেষ বিকেলে ঐ দু’জন সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য এবং সওদাগর সাহেবকে এবং আমি যে ছেলেকে পড়াতাম সেই ছেলে অর্থাৎ চৌধুরী হারুনুর রশিদÑ এরা ৩ জনে ওখানে (গুডস হিলে) হাজির হলাম।
তাঁদের সঙ্গে আমাকে যারা ধরে এনেছিল এবং সাকার সঙ্গে কি কথা হয় তা আমি জানিনি। যাবার সময় তারা আমাকে বলে যায়, আমরা সাকাকে বলেছি তুমি ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র। দেখি কি করা যায়! এরপর আমাকে নিচে নামিয়ে সাকার সামনে আনা হয়। সাকা তখন আমাকে বলেন, আপাতত তোমাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তোমার সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেব। যেখানে আছ সেখানেই থাক। যে গাড়িতে তুলে আনা হয়েছিল আবার সেই গাড়িতেই ফেরৎ পাঠানো হলো। আমার গায়ের রক্তাক্ত শার্টটি খুলে আরেকটি দেয়া হয়, যা আমার গয়ের চেয়ে বড় ছিল। সন্ধ্যার পর অনেকে দেখতে এলে তাদের কাছে পুরো ঘটনাটি বলি।
এর আগের ৬ জন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে সাকার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে ধরলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা ও প্রফেসর সালেহ উদ্দিন। ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নবেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ১৮ নবেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে এই অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মোঃ হেলাল উদ্দিনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহিলার সাক্ষীর যে ক্যামেরা ট্রায়াল হবার কথা ছিল তা হয়নি। স্ক্ষাী অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি।
বিএনপি নেতা সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দী পেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালী, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা এবং আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান)। তাদের জেরাও সম্পন্ন করেছে আসামিপক্ষ। সোমবার জবানবন্দী উপলক্ষে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাক্ষী মোঃ সালেহ উদ্দিনকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীকে একটি মাত্র প্রশ্ন করেন। আজ তাঁকে পুনরায় জেরা করা হবে। ৮ম সাক্ষী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহ উদ্দিন জবানবন্দীতে একাত্তর সালের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। তরুণ সালেহ উদ্দিন সাকা চৌধুরী, তার বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী, আল শামস বাহিনী এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৮ম সাক্ষী মোঃ সালেহ উদ্দিন বলেন, গুডস হিলের বাসা থেকে আসার পর খানিকটা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ঐ বাড়িতেই ছিলাম (লজিং বাড়ি)। পরে প্রাণ ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাই। তিনি বলেন, আমি যখন গ্যারেজের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম তখন ওখানে একজন ড্রাইভার ও একটি ছেলেকে দেখতে পাই। আমার মনে হয়েছে ঐ ছেলেটির ওপরও অত্যাচার করা হয়েছে। তাকে যখন নিয়ে যায় তখন ফকার ড্রাইভার আমাকে বলেছে, হয়ত তাকে (ঐ ছেলেটিকে) মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছেলে সম্বন্ধে আর কিছু জানি না।
জবানবন্দী দেয়ার সময় নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বর্তমান বয়স ৬১ আনুমানিক। ছাত্র জীবনে তিনি নিজ গ্রাম হবিগঞ্জ জেলার মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। সেখানে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর একই জেলার অন্য একটি স্কুলে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পরে চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রামের এএল খান স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ থেকে ট্রান্সফার স্টুডেন্ট হিসেবে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হোন। ১৯৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। ১৯৮৯ সালে তিনি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী নেন। ১৯৭৫-এ মাস্টার্স পাস করার পর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
স্কুলের ভাল ছাত্র বিধায় আমার ভাইয়ের চাকরি থেকে বদলি হয়ে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আগ্রহে মোহরা গ্রামের রাজা চৌধুরীর সাহেবের বাড়িতে আমার লজিং-এর ব্যবস্থা হয়। ঐ বাড়িতে লজিং থেকে আমি স্কুল কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত অবস্থান করছিলাম। একাত্তরের মার্চে আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। মার্চের মাঝামাঝি ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় রাজা খান চৌধুরীর বাড়িতে চলে যাই।
মোঃ সালেহ উদ্দিন জবানবন্দীতে বলেন, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কোন একদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে আমি যে মোহরা গ্রামে থাকতাম সেই গ্রামের পাশের ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান শামসু মিয়াসহ তিনজন লোক আমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। শামসু মিয়া ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের সদস্য এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর অনুসারী। অসময়ে দরজায় কড়া নাড়া শুনে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি এবং লক্ষ্য করি যে, চেয়ারম্যানের ডান হাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকানো আর সেখানে একটি অস্ত্র। তিনি আমাকে তার সঙ্গে বাইরে যেতে বলেন। আমি কাপড় পাল্টানোর কথা বললে তিনি বলেন, তার দরকার নেই। সামান্য সময়ের ব্যাপার।
আমার গায়ে ছিল সাদা হাফ শার্ট ও লুঙ্গি। আমি তার সঙ্গে রওনা দেই। আনুমানিক দু-তিন শ’ গজ দূরে গিয়ে লক্ষ্য করি একটি সেনাবাহিনীর জীপ দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই দু’জন পাকিস্তানী সিপাহি আমার দুই হাত ধরে আমাকে জীপে টেনে তুলে নেয়। এ সময় তারা আমার দেহতল্লাশি করে। চেয়ারম্যান শামসু মিয়া চালকের আসনের পাশে বসেন। জীপটা শামসু মিয়ার বাড়ির কাছাকাছি যাবার পর শামসু মিয়া জীপ থেকে নেমে যান। তারপর জীপটি যদুমিয়া সড়কের কাছে কাপ্তাই শহরে ওঠে। সেখান থেকে আরাকান রোড হয়ে সোজা গুডস হিলে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে থামে। তখন আমি দেখি ফজলুল কাদের চৌধুরী (ফকা চৌধুরী) একটা চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনে একটি টেবিল। পাশে দাঁড়ানো তাঁর বড় ছেলে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। তিনি (ফকা) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ওকে তক্তা (মার) দাও।
ওই সময় আমাকে ধরে-নিয়ে যাওয়া দুই পাক সিপাহি ফকার বাড়ির ভেতরের লম্বা ঘরের দোতলায় নিয়ে যায়। আমি সেখানে দাঁড়ানো মাত্র দু’যুবক সেখানে ঢোকে। ওদের দুু’জনকে আমি আগে থেকে চিনতাম। একজন হামিদুল কবির, যার ডাক নাম খোকা। আরেকজন সেকান্দার। খোকাকে আল শামস বাহিনীর স্থানীয় প্রধান বলে আমি জানতাম। কোন কথা না বলেই তারা দু’জন আমাকে বেধড়ক কিলঘুষি মারতে থাকে। এক সময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার সঙ্গে আর কারা আছে? অস্ত্র কোথায় আছে?
জবাবে আমি আমার সঙ্গে কারোরই সম্পৃক্ততা নাই জানাতেই তারা আমাকে আবার মারতে থাকে। ওই ঘরে মশারির কয়েকটি স্ট্যান্ড স্তূপ করে রাখা ছিল। এই সময় পাক আর্মির সিপাহিদের একজন আমাকে মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে পেটাতে থাকে। এভাবে আমার শরীরের ওপর তিনটা স্ট্যান্ড সে ভাঙ্গে। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি। অচেতন হয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে তারা আমায় বলতে থাকে,নাম বল, অস্ত্র কোথায় আছে বল। এরপর ওরা আমাকে সেখানে রেখে নিচে চলে যায়। এরপর আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর সিপাহিরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নিয়ে যায়। তখন সেখানে উপস্থিত সাকা বলতে থাকেন, একে কি মেরেছিস রে। ওর চোখে তো পানিও আসেনি। একথা বলে তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গালে প্রচ- জোরে এক থাপ্পড় মারেন। এরপর বলেন, একে নিয়ে যা। তখন দু’জন লোক আবার আমাকে নিচতলার আগের স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটায় তারা। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচব না। বার বার মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাব। সেই স্থানে আমি কতক্ষণ অচেতন হয়ে পড়েছিলাম সেটা বলতে পারব না। এর মধ্যে তারা আমাকে সিঁড়ি দিয়ে আবার উপরের ঘরে নিয়ে যায়।
কিছ্ক্ষুণ পর ওখানে একটি ছেলে আসে। সে আমার পূর্বের পরিচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র। এক বছরের সিনিয়র। তার নাম নুরুল ইসলাম। সে এমএলএফ করত। পরবর্তীকালে শুনেছি পাহাড়তলী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছে। নুরুল ইসলাম আমাকে দেখে বলল, আমি কোন কিছু স্বীকার করেছি কিনা। আমি তাকে বললাম, কিছুর সঙ্গে জড়িত নই, স্বীকার করব কিভাবে।
তখন সে বলল, ঠিক আছে দেখি কিছু করা যায় কিনা। তবে কেউ যদি আরও কিছু জিজ্ঞাসা করে কিছুতেই স্বীকার করবে না। কিছুক্ষণ পর সে আবার ফিরে আসে এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করে হোমরা গ্রামে মুসলিম লীগের ইউপি সদস্যসহ বিশিষ্ট কেউ আমার পক্ষে কিছু বলবে কিনা। আমি তখন কিছুৃটা আসার আলো দেখি। কারণ ঐ গ্রামে আমি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলাম।
আমি তখন দু’জন লোকের নাম বললাম। প্রথম হচ্ছেন নুরুল হুদা কদরী ওরফে মাইছে মিয়া ও বাদশা মিয়া সওদাগর। দু‘জনই আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। যদিও তারা মুসলিম লীগ করতেন। ঐ সময়ে তাঁদের হাতে কোন মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতাকামী মানুষ নিহত হয়নি। আমি যে স্কুলে লেখাপড়া করেছি তার সব শিক্ষককেও সাক্ষী মেনেছিলাম। এমনকি ঐ গ্রামে যে কোন লোককে জিজ্ঞাসা করতে বলেছি। আমি এটাও বলেছিলাম, একজনও যদি বলে আমি কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি তারপর মেরে ফেললে আপত্তি থাকবে না।
নুরুল ইসলাম তখন সাকার সঙ্গে কথা বলে আশ্বাস দিলে চলে যান। শেষ বিকেলে ঐ দু’জন সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য এবং সওদাগর সাহেবকে এবং আমি যে ছেলেকে পড়াতাম সেই ছেলে অর্থাৎ চৌধুরী হারুনুর রশিদÑ এরা ৩ জনে ওখানে (গুডস হিলে) হাজির হলাম।
তাঁদের সঙ্গে আমাকে যারা ধরে এনেছিল এবং সাকার সঙ্গে কি কথা হয় তা আমি জানিনি। যাবার সময় তারা আমাকে বলে যায়, আমরা সাকাকে বলেছি তুমি ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র। দেখি কি করা যায়! এরপর আমাকে নিচে নামিয়ে সাকার সামনে আনা হয়। সাকা তখন আমাকে বলেন, আপাতত তোমাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তোমার সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেব। যেখানে আছ সেখানেই থাক। যে গাড়িতে তুলে আনা হয়েছিল আবার সেই গাড়িতেই ফেরৎ পাঠানো হলো। আমার গায়ের রক্তাক্ত শার্টটি খুলে আরেকটি দেয়া হয়, যা আমার গয়ের চেয়ে বড় ছিল। সন্ধ্যার পর অনেকে দেখতে এলে তাদের কাছে পুরো ঘটনাটি বলি।
এর আগের ৬ জন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে সাকার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে ধরলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা ও প্রফেসর সালেহ উদ্দিন। ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নবেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ১৮ নবেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
No comments