আসামে জাতিগত সহিংসতা, নিহত ১৯, কারফিউ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বোড়ো আদিবাসী ও বসতি স্থাপনকারী মুসলমানদের মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করা হয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে হাজার হাজার মানুষ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন অফিস, ব্যবসাকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল বন্ধ ছিল।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, বোড়ো অধ্যুষিত কোকরাঝাড় জেলায় অজ্ঞাত লোকজন চারজনকে গত শুক্রবার রাতে হত্যা করে। এরপর ওই এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিমরা ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ এনে বোড়োরা পাল্টা হামলা চালায়। অজ্ঞাত লোকজন ওই এলাকায় বাড়িঘর, বিদ্যালয় ও যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। এলাকাবাসী গত রোববার একটি নদীর তীর থেকে ছয় মাস বয়সী একটি শিশু ও একজন নারীর লাশ উদ্ধার করে।
আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক এস এন সিং বলেন, উত্তেজনাপূর্ণ ওই এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে সরকারি আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।
কোকরাঝাড় জেলার সরকারি কর্মকর্তা ডোনাল্ড গিলফেলন বলেন, স্থানীয়ভাবে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হবে।
ভুটান ও বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আসামের পশ্চিমাঞ্চলে বোড়ো সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের বহু দিন ধরেই বিরোধ চলছে। মূলত ভূমি বিরোধ থেকেই শুক্রবারের ওই সহিংসতা শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন বিশেষ করে নারী ও শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয় ও সরকারি দপ্তরে আশ্রিত ওই লোকজন সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে।
স্থানীয় সরকারি সংগঠন বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের উপপ্রধান কাম্পা বোরগোয়ারি বলেন, ভয়াবহ হামলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাচ্ছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আদিবাসীসহ প্রায় ২০০ জাতিগোষ্ঠীর আবাস। ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চলছে। ওই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী বাঙালি মুসলিমদের সঙ্গে স্থানীয় হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আদিবাসীদের বিরোধ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র রূপ নিয়েছে।
আসামে জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই চলছে গত কয়েক দশক ধরে। তবে বিদ্রোহী কয়েকটি সংগঠন সরকারের সঙ্গে সম্প্রতি শান্তি আলোচনা শুরু করেছে। এএফপি, রয়টার্স।
No comments