ভোজ্য তেল-সংকটের দায় সরকারেরও

রমজানে তেল নিয়ে তেলেসমাতি নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই অন্য অনেক ব্যবসায়ীর মতো তেল ব্যবসায়ীরা পবিত্র রমজানকে অতি মুনাফার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। সরকারের ব্যর্থতা কিংবা আন্তরিকতার অভাবও একই মাত্রায় চলতে থাকে। জনদুর্ভোগ হলো কি হলো না, সেদিকে তাদের নজর থাকে না।


এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে, তেলের মজুদ সংকট কাটিয়ে তোলা হবে। সরবরাহ ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও আভাস দেওয়া হয়েছিল, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য- যেমন প্রতিবছরই তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় জোরালোভাবে ঘোষণা করে, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হবে না। কিন্তু রমজান এলে তারা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। প্রচারমাধ্যমে এ নিয়ে কিছুদিন হৈচৈ হয়, তারপর সবই গা-সওয়া হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করাই শুধু নয়, এর পেছনে অন্য কোনো কারণও কাজ করতে পারে। ব্যবসায়ীরা তেল আমদানি করবে তাদের মুনাফার উদ্দেশ্যে। দেশে তেলের চাহিদা থাকার পরও সেই আমদানি কোন কারণে ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে যায়, তা ভেবে দেখার দরকার আছে। সরকারের কাছে যে মজুদের তালিকা আছে তা-ও যথাযথ নয়, সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং সরকারের আন্তরিকতার অভাবকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশের ১১টি ভোজ্য তেল মিলের পাঁচটিতেই কোনো পরিশোধিত ভোজ্য তেল নেই। আবার যাদের হাতে অপরিশোধিত তেল কিছু আছে, তারাও সেগুলো পরিশোধন করার তাগাদা অনুভব করছে বলে মনে হয় না। এর পেছনেও সেই একই কারণ কাজ করছে বলে মনে হয়। আট হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন তেল মজুদ দিয়ে বাংলাদেশের এক দিনের চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে সরকারি হিসাব অনুযায়ী মিলগুলোতে যে পরিমাণ তেল মজুদ থাকার কথা, বাস্তবে তার কাছাকাছিও নেই কেন, তারও খোঁজ নিতে হবে। সময়মতো এলসি না খোলার ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুক্তিও পর্যালোচনার দাবি রাখে। তারা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কখন কমবে, ব্যবসায়ীরা সেই অপেক্ষায় ছিল বলে এলসি খোলা হয়নি সময়মতো। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়, তা যে কেউ বলবে। তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি প্রমাণ হয় তেলের মজুদের হিসাবে গরমিল দেখার পরও। তাদের হিসাব অনুযায়ী, তেল মিলগুলোতে মজুদ থাকা তেলের পরিমাণ এক লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৭ টন। যার মধ্যে ৩১ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল। সরকারের এই তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে- বাকি তেল কোথায় গেল? সরকারের আন্তরিকতা এবং ব্যবসায়ীদেরও অতি মুনাফার লোভ সংবরণ করতে হবে জনস্বার্থেই।

No comments

Powered by Blogger.