মিয়ানমারে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের অতি আগ্রহ-সু চি-হিলারি সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কা!

আসছে সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে যাবেন মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চি। সু চির জন্য এ শহরটিও স্মৃতি জাগরূক। একসময় বেশ কয়েক বছর এ শহরে কাটিয়েছেন তিনি। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সহাস্যে বরণ করে নেওয়া হবে তাঁকে। হাসি দেখা যাবে সু চির চেহারাতেও।


তবে ক্যামেরার সামনের এই হাসির রেশ হয়তো অন্তরঙ্গ আলোচনায় থাকবে না। সেখানে মিয়ানমারে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের অতি আগ্রহ নিয়ে সু চির কড়া প্রশ্নের সামনে পড়তে হতে পারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে।
প্রসঙ্গত, এ সপ্তাহেই মিয়ানমারের ওপর থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর এখানেই আপত্তি সু চির। গণতন্ত্রের পথে সদ্য প্রবেশ করছে মিয়ানমার। এখনই সব নিষেধাজ্ঞা তুলে ক্ষমতাসীন সেনা সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে চাপমুক্ত করার পক্ষে নন তিনি।
আটলান্টিক কাউন্সিলের নৈশভোজে যোগ দিতে আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে যাবেন সু চি। সেখানে পরিষদের বিশ্ব নাগরিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তার হাতে। জাতিসংঘের কনিষ্ঠ আমলা হিসেবে একসময় এ শহরে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন তিনি। সফরকালে ওয়াশিংটনের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এ সময় কংগ্রেসের স্বর্ণপদকও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
মিয়ানমারে প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকার পর গত মে মাসে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পা রাখেন সু চি। সে দফায় ব্যাংককে অর্থনৈতিক সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি থাই সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের শরণার্থীদেরও দেখে আসেন তিনি। পরের মাসেই নোবেলসহ অন্তত ডজন খানেক পুরস্কার নিতে ইউরোপে যান। বন্দি থাকাকালে এসব পুরস্কার পান তিনি। তাঁর ১৭ দিনের সফরে নানাভাবে আলো ফেলে গণমাধ্যম। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও ভিন্ন মাত্রা যোগ করে এ সফর। অসলোতে গিয়ে নোবেল পুরস্কার গ্রহণের পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং নবনির্বাচিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
প্রতিটি সাক্ষাৎ এবং সফরে একই বার্তা প্রচার করেন সু চি। মিয়ানমারে বিনিয়োগে 'হ্যাঁ' বলুন। তবে তা অবশ্যই দেশটি 'গণতন্ত্রবান্ধব' এবং 'মানবাধিকারবান্ধব' হওয়ার পর। সম্প্রতি গণতন্ত্রের পথে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। মূলত বিনিয়োগের আশাতেই এই সংস্কার। তবে সু চির বার্তাটিও ঝাপসা নয়। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, 'বিদেশি কম্পানিগুলোর উচিত দুর্নীতিগ্রস্ত জেনারেলদের আরো সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা।' তিনি সরকারি কম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ না করার অনুরোধ জানান। যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর বার্তা এর ভিন্ন হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। গত ডিসেম্বরে হিলারি ইয়াঙ্গুন সফরে গেলেও একই কথা বলেছিলেন সু চি। তবে অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা হচ্ছে, সু চির বার্তা প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের বোধগম্য হয়নি। এ সপ্তাহেই মিয়ানমারে বিনিয়োগের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তারা। অর্থাৎ উর্দিধারী কম্পানিগুলোর সঙ্গে মার্কিন কম্পানিগুলোর কাজের ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না।
শুরুর দিকে ধারণা করা হচ্ছিল, সু চির বদৌলতেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হচ্ছে মিয়ানমারের। তবে প্রকৃত পরিস্থিতি হয়তো তেমন নয়।
নিউ ইয়র্কে সু চির ঠোঁটেও হয়তোবা চওড়া হাসি শোভা পাবে তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক যে আর আগের মতো নিভাঁজ নেই তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.