ভিন্ন স্বাদের ইফতারি

ইফতারির নিত্য মেন্যুতে ভিন্নতা আনতে পারেন সহজেই। তাতে স্বাদেরও কমতি হবে না। দেখুন ফাতিমা আজিজের দেওয়া রেসিপিগুলো। পিনাট চপ উপকরণ: চিনাবাদাম গুঁড়া ১ কাপ, আলু (বড়) ৪টি, সুইট কর্ন ১ কাপ, লাল ক্যাপসিকাম (না দিলেও চলবে) কুচি ১টি, লবণ ১ চা-চামচ, লাল মরিচ আধা ভাঙা ২ টেবিল চামচ,


ব্রেড ক্রাম্ব ২ টেবিল চামচ, কর্ন ফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, ডালিম অথবা আনার দানা সিকি কাপ, লেবুর রস আধা টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ ও তেল সিকি কাপ ।
প্রণালি: আলু ধুয়ে সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। খোসা ছাড়িয়ে মসৃণ করে চটকে নিন। বাটিতে চটকানো আলু, সুইট কর্ন, লাল ক্যাপসিকাম, লবণ, লাল মরিচ ভাঙা, ব্রেড ক্রাম্ব ও কর্নফ্লাওয়ার একত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ১০ থেকে ১২টি ভাগ করুন। একটি ছোট বাটিতে আনার দানা, লেবুর রস ও এক চিমটি লবণ, কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার হাতের তালুতে নিয়ে একেকটি ভাগ গোল করে মাঝখানে হাঁড়ির মতো গর্ত করে প্রতিটির ভেতরে আনার দানার পুর ভরে মুখ বন্ধ করে টিকিয়ার মতো চ্যাপ্টা করে চপ তৈরি করুন। এবার প্রতিটি গুঁড়া করা চিনাবাদামে গড়িয়ে নিন।
ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে চপগুলো দুই পিঠ সোনালি রং করে ভেজে একটি টিস্যু পেপার অথবা পেপার ন্যাপকিনে রাখুন। তেল শুষে নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

পাস্তা-মিটবল
উপকরণ: মিটবল: মুরগির কিমা ৫০০ গ্রাম, তাবাস্কো সস ২ টেবিল চামচ, যেকোনো সিজনিং সস ২ চা-চামচ, লবণ আধা কাপ, সিরকা অল্প, লেবুর রস অথবা টকদই আধা চা-চামচ, ব্রেডক্রাম্ব বা বিস্কুটের গুঁড়া আধা কাপ, টমেটো চটকানো ২ টেবিল চামচ, গোল মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, ডিম ১টি, চিনি ১ চা-চামচ, পাউরুটি টুকরা কয়েকটি ও কাঁচা মরিচ কুচি ১টি।
প্রণালি: বাটিতে মাংসের কিমার সঙ্গে টমেটো চটকানো, লবণ, গোল মরিচ গুঁড়া, সিজনিং ও তাবাস্কো সস এবং লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন। ডিমের সাদা অংশে পাউরুটি ছোট ছোট টুকরা করে মিশিয়ে কিমার সঙ্গে দিয়ে মেখে দিন। এবার হাতের তালুতে অল্প করে কিমা নিয়ে ছোট ছোট মিটবল তৈরি করে ভেজে উঠিয়ে রাখুন।
পাস্তা এবং মিটবল রান্নার উপকরণ: ১ চা-চামচ লবণ ও ১ চামচ তেল দিয়ে সেদ্ধ করা পাস্তা ৪০০ গ্রাম, গাজর কিউব এক কাপ, আলু চৌকো করে কাটা আধা কাপ, টমেটো কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ। রসুন কুচি ২ টেবিল চামচ। লেবুর রস বা সিরকা ১ চা-চামচ। রোজমেরি, অরিগ্যানো, বেসিল ইত্যাদি ১ চা-চামচ করে। সাদা গোল মরিচ গুঁড়া আধা চামচ। কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ। জলপাই তেল ৫ টেবিল চামচ। ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ। চিলি গার্লিক সস ১ টেবিল চামচ। টমেটো সস ২ টেবিল চামচ। পনির ঝুরি (মোজারোলা) ১ কাপ।
প্রণালি: ফুটন্ত গরম পানিতে ১ চা-চামচ লবণ ও ১ চা-চামচ তেল দিয়ে পাস্তা ১০-১২ মিনিট সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। বেকিং ট্রেতে অল্প তেল মেখে পাস্তা নিয়ে ১ টেবিল চামচ জলপাই তেল দিয়ে মেখে রাখুন। আলু এবং গাজর সিকি চামচ লবণ দিয়ে সামান্য ভেজে নরম করে নিন। এবার তা নামিয়ে পাস্তার সঙ্গে মিশিয়ে সমান করে ওপর থেকে আধা কাপ পনির ঝুরি ছিটিয়ে রাখুন। ফ্রাইপ্যানে বাকি ২ চামচ জলপাই তেল গরম করে অবশিষ্ট পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে রসুন কুচি দিন এবং পেঁয়াজ ও রসুন হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। এবার টমেটো কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন। তাতে সিরকা বা লেবুর রস, চিলি গার্লিক সস, টমেটো সস, লবণ, চিনি, রোজমেরি, অরিগ্যানো, বেসিল, গোল মরিচ গুঁড়া ও অর্ধেক কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে ধনেপাতা কুচি দিয়ে মিটবলগুলো ছেড়ে দিন। ভালোমতো মিশিয়ে নেড়েচেড়ে জ্বালে রাখুন। পানি সিকি কাপ বা ২ টেবিল চামচের মতো দিয়ে কষিয়ে নিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। সামান্য ঝোল থাকবে। তাই পানি পুরো শুকাবেন না। এবার তা চুলা থেকে নামিয়ে পাস্তার ওপর বিছিয়ে দিন। তার ওপর পনির ঝুরি, লাল মরিচ ভাঙা ও বাকি অর্ধেক কাঁচা মরিচ ছিটিয়ে দিয়ে প্রিহিটেড ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৮ থেকে ১০ মিনিট বেক করুন। হয়ে গেলে বের করে পরিবেশন করুন।

ব্রেড রোল
উপকরণ: সসেজ এক প্যাকেট, পনির ২০০ গ্রাম, পাউরুটি টুকরা ১০টি, ম্যাগি সস ১০টি, তাবাস্কো সস ২ টেবিল চামচ, লাল মরিচ ভাঙা ২ টেবিল চামচ, গোল মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ ও তেল ৮ টেবিল চামচ।
প্রণালি: ১০টি সেদ্ধ করা সসেজকে লম্বালম্বি করে দুই ভাগ করুন। পনির ১০ টুকরা করুন। সসেজ এবং পনির আলাদা পাত্রে রেখে উভয় পাত্রেই তাবাস্কো সস ও লাল মরিচ ভাঙা, গোল মরিচ গুঁড়া, লেবুর রস দিয়ে মেখে দুই-তিন ঘণ্টা রাখুন। পাউরুটির একেকটি টুকরা অল্প পানিতে চুবিয়ে পানি নিংড়ে নিন। এবার তার মাঝে সসেজের দুটো টুকরা দিন। তার ফাঁকে পনির দিন। এবার তা গোল করে রোল তৈরি করুন। ১০টি রোল তৈরি করে ননস্টিক গ্রিল প্যানে ৪ টেবিল চামচ করে তেল দিয়ে পাঁচটি করে রোল দিয়ে ভেজে নিন।

টুনা-চিংড়ি স্যান্ডউইচ
উপকরণ: স্যান্ডউইচ ব্রেড ১০টি, মাঝারি চিংড়ি ১ কাপ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, লাল মরিচ ভাঙা ১ চা-চামচ, লবঙ্গ টেলে ফাঁকি করা ১ টেবিল চামচ, টুনা ১ ক্যান, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ৪ টেবিল চামচ, মেয়নেজ ১ টেবিল চামচ, মাস্টার্ড পেস্ট ১ কাপ, পানির ঝুরি ১ কাপ, মাখন ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: বাটিতে টুনা, ধনেপাতা কুচি, লেবুর রস, মাস্টার্ড পেস্ট, ৪ টেবিল চামচ মেয়নেজ ও ২ টেবিল চামচ পনির ঝুরি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল স্যান্ডউইচ তৈরির টুনা পেস্ট। একটি নন-স্টিক ফ্রাইপ্যানে ১ টেবিল চামচ মাখন নিয়ে রসুন বাটা দিয়ে নেড়ে চিংড়িগুলোগুলো ছেড়ে কিছুক্ষণ নেড়ে আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচে পাঁচ-সাত মিনিট ভাজুন। ৪ টেবিল চামচ মেয়নেজ রুটিতে লাগিয়ে ট্রেতে সাজিয়ে রাখুন। সেখান থেকে ৫টি রুটিতে টুনা পেস্ট লাগিয়ে তার ওপর কয়েকটি করে ভাজা চিংড়ি ছড়িয়ে দিন। ওপর থেকে প্রতিটি রুটিতে এক চিমটি করে লবঙ্গ ও মরিচ ভাঙা ছিটান। রুটিগুলোর ওপরে পানির ঝুরি দিয়ে একেকটি রুটির ওপর মেয়নেজ লাগানো বাকি রুটির টুকরাগুলো বসিয়ে হালকা চেপে দিন। চুলায় গ্রিল প্যান অল্প আঁচে বসিয়ে সামান্য করে মাখন দিয়ে স্যান্ডউইচগুলো চেপে চেপে গ্রিল করুন। স্যান্ডউইচ ডিশে বা ট্রেতে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

পাউরুটির শাহি মিষ্টি
উপকরণ: দুধ (দেড় লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে) সোয়া কাপ, ময়দা আধা কাপ, পাউরুটি তিন-চার টুকরা, সুজি সিকি কাপ, মাওয়া আধা কাপ, এলাচি গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, চিনি সিকি কাপ, দুধের সর আধা কাপ, জাফরান আধা চা-চামচ, বাদাম/পেস্তা ১ টেবিল চামচ, গোলাপ জল ২ চা-চামচ, ঘি ৪ টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য।
শিরার জন্য: চিনি ৩ কাপ, পানি ৩ কাপ একত্রে মিশিয়ে চুলায় দিন। চিনি গলে কয়েকবার ফুটে উঠলে সিকি চামচ জফরান ও গোলাপজল দিয়ে নামিয়ে রাখুন। শিরাটা পাতলা হবে।
প্রণালি: বাটিতে ঘন দুধের সঙ্গে আধা চা-চামচ জাফরান মিশিয়ে তিন টুকরা পাউরুটি ছিঁড়ে ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা খানেক। অন্য পাত্রে ময়দার সঙ্গে সুজি, এলাচি গুঁড়া (আধা চা-চামচ) ও চিনি মিশিয়ে পাউরুটির সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। তারপর তাতে দুধের সর, সিকি কাপ মাওয়া, আধা টেবিল চামচ বাদাম পেস্তা দিয়ে আরও একবার ব্লেন্ড করে মিষ্টি তৈরির জন্য মসৃণ গোলা তৈরি করুন। যে বাটিতে মিষ্টি রাখবেন, সেটাতে অর্ধেক শিরা ঢেলে রাখুন। কড়াই বা ফ্রাইপ্যানে ডুবোতেলে মিষ্টি ভাজার আন্দাজে তেল ও চার টেবিল চামচ ঘি গরম করে এক চামচ করে গোলা নিয়ে মিষ্টি সোনালি রং করে ভেজে নিন। তেল ছেঁকে মিষ্টি রাখার বাটিতে শিরায় ছেড়ে দিন। ওপর থেকে মাওয়া, বাদাম পেস্তা ও এলাচি গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। তিন ঘণ্টা বা চার ঘণ্টা পর পরিবেশন করুন।

পুঁই চিংড়ির পাকোড়া
উপকরণ: লবণ (সিকি চামচ) ও হলুদ (সিকি চামচ) দিয়ে মেখে দুই টেবিল চামচ সরিষার তেল দিয়ে ভেজে রাখা চিংড়ি। সরিষার তেল ২৫০ গ্রাম, পুঁইশাকের বড় বড় পাতা (ভাপিয়ে নেওয়া) ২০-২৫টি। লবণ আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ৪টি, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, চালের গুঁড়া আধা কাপ, পানি ১ কাপ, শুকনা মরিচ ভাঙা ১ চা-চামচ, লেবুর রস দেড় টেবিল চামচ, পেঁয়াজ টুকরা (বড়) ১টি, পোস্তদানা সিকি কাপ বা পরিমাণমতো।
প্রণালি: চিংড়িপাটায় মিহি করে বেটে নিন। ফ্রাইপ্যানে দুই টেবিল চামচ সরিষার তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজুন। বাদামি রং হয়ে এলে বাটা চিংড়ি মাছ, সিকি চামচ লবণ, কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে নেড়ে আধা টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে ভাজুন। আধা কাপ পানিতে চালের গুঁড়া ২-৩ ঘণ্টা আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখুন। একটি প্লেটে পোস্তদানা ছড়িয়ে রাখুন। চালের গুঁড়ার সঙ্গে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বাকি লবণ, এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও মরিচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঘন ব্যাটার তৈরি করুন। একেকটি পুঁইপাতায় সামান্য চিংড়ি পেস্টের পুর ভরে তা চার ভাঁজ করে মুড়িয়ে নিন। অন্যদিকে ফ্রাইপ্যানে সরষের তেল গরম করুন। পুরভরা পাতা ব্যাটারে চুবিয়ে পোস্তাদানায় গড়িয়ে ডুবোতেলে ভাজুন।

No comments

Powered by Blogger.