হুমায়ূনের জন্য ভালোবাসা by আজিজুল পারভেজ ও নওশাদ জামিল
তিনি সামনেই, এর পরও কী তীব্র তাঁর শূন্যতা। প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখতে উপচে পড়া ভিড় শহীদ মিনারে। শুধু মানুষ আর মানুষ। কারো হাতে ফুল, কারো শুধু চোখের জল- সবার হৃদয়ে একই রকম ভালোবাসা।
সেই ভালোবাসার হাহাকার নিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানালেন হুমায়ূন আহমেদকে। জাতীয় ঈদগাহে জননন্দিত এই লেখকের জানাজায়ও নামে লাখো মানুষের ঢল।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর সব পথ গিয়ে যেন মিলে যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়। সবারই অধীর অপেক্ষা কখন আসবেন লেখক। মিনারের বেদির উল্টো দিকে গগনশিরীষের ছোট-বড় বেশ কিছু গাছ। মাথার ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চারদিকে। নিচে ছায়াময়, মায়াময় আবহ। গাছগুলোর নিচেই কালো কাপড়ে ঢাকা অস্থায়ী মঞ্চ। সময়ের একটু আগেই হুমায়ূন আহমেদের কফিন বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এনে রাখা হয় সেই শ্যামল ছায়ায়।
কফিন ছুঁয়ে, শেষ দেখা শেষে কাঁদলেন মা, ভাইবোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যারা। চোখের জলে ভাসলেন বন্ধু-স্বজনরা। শোকে বিহ্বল হলেন সুধীজন থেকে সর্বসাধারণ। প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে, কফিনে একটি ফুল রাখতে দূর-দূরান্ত থেকেও কত না মানুষ ছুটে এসেছিলেন। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর বুকচেরা কান্নার মিশেলে ভারি হয়ে ওঠে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
কফিনের কিছু অংশ ছিল খোলা। মুদিত নয়ন রাজপুত্রের মুখটি দেখা যাচ্ছিল শুধু। সেই দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি। চোখ মুছতে মুছতে সরে গেছেন সামনে থেকে।
গতকাল সকাল ১০টা ২২ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। কফিনবাহী গাড়িটি আসার আগেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিজগৎ ছাড়াও নানা পেশার লাখো মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে। রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সেবিকা, ব্যবসায়ী, পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে বাবার হাত ধরে আসা স্কুলপড়ুয়া শিশুটি- কে নেই! সবার বেদনামাখা মুখ। খররোদে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ধীরপায়ে সবাই এগিয়ে যান শহীদ মিনারের দিকে। শ্রদ্ধা জানান প্রিয় লেখককে। মৃত্যুকে ছুঁয়ে যেন নতুন জীবন লাভ করলেন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র, জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জোটের স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে। শহীদ মিনারের পূর্ব দিক দিয়ে ঢুকে মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পশ্চিম দিক দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের বেষ্টনী দিয়ে পথ তৈরি করে দেওয়া হয়।
শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে দোয়েল চত্বর, শিববাড়ী মোড়, জগন্নাথ হল ক্রসিং এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে পুলিশ। শ্রদ্ধা জানাতে দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রুমানা চত্বর এলাকা দিয়ে ঢুকে জগন্নাথ হল ক্রসিং এবং শিববাড়ী ক্রসিং দিয়ে বের হতে হয়।
সাড়ে ১০টায় শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন : পূর্বঘোষণা অনুসারে সকাল ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা থাকলেও বিমানবন্দর থেকে মরদেহ দ্রুত চলে আসায় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় আধা ঘণ্টা আগে। শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শুরু হয় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফখরুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল ও প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় সংসদের উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ফুল দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এরপর নেমে আসে শোকার্ত মানুষের ঢল। একপর্যায়ে মানুষের দীর্ঘ এই স্রোত দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে কার্জন হল, অন্যদিকে শিববাড়ী মোড় পেরিয়ে টিএসসিতে গড়ায়। শোকার্ত মানুষের হাহাকারে ভারি হয়ে উঠেছিল শহীদ মিনার এলাকার আকাশ। সেই শোকেই কিনা নেমে এলো হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় মুহূর্ত 'শ্রাবণ মেঘের দিন'। কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় হুমায়ূন-ভক্তদের। বৃষ্টির ফোঁটা আর চোখের জল তখন যেন মিলেমিশে একাকার। কিন্তু বৃষ্টি থামাতে পারেনি জনতার ঢল। আরো তীব্র বেগে তাঁরা ছুটে যান প্রিয় মানুষের কাছে, শহীদ মিনারে। গোটা এলাকা হয়ে যায় লোকে লোকারণ্য। এই ভিড়ে লক্ষণীয় ছিল তরুণদের আধিক্য। ছিল স্কুল-কলেজের পোশাক পরা শিক্ষার্থীদের আগমন।
শহীদ মিনারে স্বজনরা : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। মা আয়েশা ফয়েজ, ছেলে নুহাশ, মেয়ে শীলা ও নোভা, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবসহ ঘনিষ্ঠজনরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে আরো ছিলেন লেখকের ঘনিষ্ঠজনরা। সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনসহ লেখকের ঘনিষ্ঠজনরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চারদিকে মাতম : প্রিয় লেখককে হারিয়ে ভক্তকুল শোকার্ত। সেই শোক মিছিল ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে হুমায়ূন আহমেদের কফিন।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রথমে একজন একজন করে আসতে দিলেও পরে ভিড়ের চাপে মানুষ আসতে থাকে দলে দলে। ভিড় এত বেশি ছিল যে ভক্তদের অনেকে কফিনের কাছেও যেতে পারেননি। দূর থেকে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককেই। শোকার্ত মানুষের দলে যোগ দেন রাজনীতিবিদরাও। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, জাতীয় পার্টি নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ হুমায়ূন আহমেদের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, খায়রুল কবীর খোকন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমীর সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সচ্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, রাজনীতিবিদ আ স ম আবদুর রব, জাসদের পক্ষে সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও নারী নেত্রী শিরিন আক্তার, বুয়েট উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জাতীয় জাদুঘরের প্রত্ন বোর্ডের সভাপতি এম আজিজুর রহমান আজিজ, সাবেক উপাচার্য মনিরুজ্জামান মিঞা, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক মনসুর মুসা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাংবাদিক আবেদ খান, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, সতীশ চন্দ্র রায়, আক্তারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, প্রথম আলোর পক্ষে আনিসুল হক ও সাজ্জাদ শরীফ, ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মির্জা আবদুল জলিল, বাউল শিল্পী আবদুল কুদ্দুস বয়াতী, তারানা হালিম এমপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত, আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি রফিক আজাদ, নাসির আহমেদ, নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রশিদ হায়দার, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, তথ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ, টিভি অভিনেতা আতাউর রহমান, কাওসার চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, তুষার আহমেদ, মিতা নূর, ফারুক আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, আবুল বারক আলভী, জামাল আহমেদ, মুনিরুজ্জামান, প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপু, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মহাপরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, ড. ফজলুল আলম, শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুসহ আরো অনেকে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত আইজি এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ।
সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে অন্যপ্রকাশ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা পদাতিক, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, জাগৃতি, অন্বেষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, ল ইয়ার্স রাইটার্স ফোরাম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাদা দল, এটিএন বাংলা, সংবাদ, বৈশাখী টেলিভিশন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা সমিতি, নেত্রকোনা সমিতি, খেলাঘর, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সেলিম আল দীন স্মৃতি পরিষদ, গ্যালারি চিত্রক, জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ, ঢাকা কলেজ, ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম প্রভৃতি।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয় দুপুর ২টায়। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন হুমায়ূনের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রয়াত লেখকের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি। শোকার্ত জনতাকে তিনি বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ আমার ভাই। কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম তিনি শুধু আমাদের পরিবারেরই নন বরং সবারই ভাই, সবার সন্তান।' ভিড়ের কারণে যাঁরা লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি তাঁদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ নাটক-উপন্যাস দিয়ে আনন্দ দিয়েছেন, সেই নির্মল আনন্দ পেয়ে থাকলে তাঁর জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন বেহেশতে ভালো থাকেন। যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তিনি অনুভব করেছেন।
শেষে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। তাঁর বক্তব্য দিয়ে শেষ হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। তিনি বলেন, 'শহীদ মিনারে এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে শিল্পী-সাহিত্যিক কিভাবে একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। আজ হুমায়ূন আহমেদ জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মানুষের মনের কথা তিনি তুলে এনেছিলেন। আমরা তাঁর সেই সাহিত্য, দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যত দিন বাঙালি জাতি থাকবে, বাংলা সাহিত্য থাকবে, তত দিনই তিনি বেঁচে থাকবেন।'
বাংলাদেশ টেলিভিশন, চ্যানেল আই, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর, সময়, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, এনটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন শহীদ মিনার থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। শহীদ মিনারে খোলা হয় চারটি শোক বই।
জাতীয় ঈদগাহে জানাজা
দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে আসা হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ সেখানে তাঁর জানাজায় অংশ নেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন জানাজার নামাজে ইমামতি করেন। জানাজার আগে বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। তিনি বলেন, 'বাবার কারণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে প্লিজ মাফ করে দেবেন। কোনো পাওনা থাকলে আমার সঙ্গে অথবা আমার চাচা জাফর ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।'
রাজনীতির মাঠে বিরোধী অবস্থান থাকলেও জানাজায় একই কাতারে পাশাপাশি দাঁড়ান সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আবদুল মতিন খসরু, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে জানাজায় শরিক হন। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেনও জানাজায় অংশ নেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর সব পথ গিয়ে যেন মিলে যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়। সবারই অধীর অপেক্ষা কখন আসবেন লেখক। মিনারের বেদির উল্টো দিকে গগনশিরীষের ছোট-বড় বেশ কিছু গাছ। মাথার ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চারদিকে। নিচে ছায়াময়, মায়াময় আবহ। গাছগুলোর নিচেই কালো কাপড়ে ঢাকা অস্থায়ী মঞ্চ। সময়ের একটু আগেই হুমায়ূন আহমেদের কফিন বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এনে রাখা হয় সেই শ্যামল ছায়ায়।
কফিন ছুঁয়ে, শেষ দেখা শেষে কাঁদলেন মা, ভাইবোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যারা। চোখের জলে ভাসলেন বন্ধু-স্বজনরা। শোকে বিহ্বল হলেন সুধীজন থেকে সর্বসাধারণ। প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে, কফিনে একটি ফুল রাখতে দূর-দূরান্ত থেকেও কত না মানুষ ছুটে এসেছিলেন। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর বুকচেরা কান্নার মিশেলে ভারি হয়ে ওঠে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
কফিনের কিছু অংশ ছিল খোলা। মুদিত নয়ন রাজপুত্রের মুখটি দেখা যাচ্ছিল শুধু। সেই দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি। চোখ মুছতে মুছতে সরে গেছেন সামনে থেকে।
গতকাল সকাল ১০টা ২২ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। কফিনবাহী গাড়িটি আসার আগেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিজগৎ ছাড়াও নানা পেশার লাখো মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে। রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সেবিকা, ব্যবসায়ী, পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে বাবার হাত ধরে আসা স্কুলপড়ুয়া শিশুটি- কে নেই! সবার বেদনামাখা মুখ। খররোদে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ধীরপায়ে সবাই এগিয়ে যান শহীদ মিনারের দিকে। শ্রদ্ধা জানান প্রিয় লেখককে। মৃত্যুকে ছুঁয়ে যেন নতুন জীবন লাভ করলেন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র, জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জোটের স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে। শহীদ মিনারের পূর্ব দিক দিয়ে ঢুকে মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পশ্চিম দিক দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের বেষ্টনী দিয়ে পথ তৈরি করে দেওয়া হয়।
শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে দোয়েল চত্বর, শিববাড়ী মোড়, জগন্নাথ হল ক্রসিং এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে পুলিশ। শ্রদ্ধা জানাতে দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রুমানা চত্বর এলাকা দিয়ে ঢুকে জগন্নাথ হল ক্রসিং এবং শিববাড়ী ক্রসিং দিয়ে বের হতে হয়।
সাড়ে ১০টায় শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন : পূর্বঘোষণা অনুসারে সকাল ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা থাকলেও বিমানবন্দর থেকে মরদেহ দ্রুত চলে আসায় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় আধা ঘণ্টা আগে। শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শুরু হয় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফখরুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল ও প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় সংসদের উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ফুল দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এরপর নেমে আসে শোকার্ত মানুষের ঢল। একপর্যায়ে মানুষের দীর্ঘ এই স্রোত দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে কার্জন হল, অন্যদিকে শিববাড়ী মোড় পেরিয়ে টিএসসিতে গড়ায়। শোকার্ত মানুষের হাহাকারে ভারি হয়ে উঠেছিল শহীদ মিনার এলাকার আকাশ। সেই শোকেই কিনা নেমে এলো হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় মুহূর্ত 'শ্রাবণ মেঘের দিন'। কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় হুমায়ূন-ভক্তদের। বৃষ্টির ফোঁটা আর চোখের জল তখন যেন মিলেমিশে একাকার। কিন্তু বৃষ্টি থামাতে পারেনি জনতার ঢল। আরো তীব্র বেগে তাঁরা ছুটে যান প্রিয় মানুষের কাছে, শহীদ মিনারে। গোটা এলাকা হয়ে যায় লোকে লোকারণ্য। এই ভিড়ে লক্ষণীয় ছিল তরুণদের আধিক্য। ছিল স্কুল-কলেজের পোশাক পরা শিক্ষার্থীদের আগমন।
শহীদ মিনারে স্বজনরা : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। মা আয়েশা ফয়েজ, ছেলে নুহাশ, মেয়ে শীলা ও নোভা, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবসহ ঘনিষ্ঠজনরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে আরো ছিলেন লেখকের ঘনিষ্ঠজনরা। সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনসহ লেখকের ঘনিষ্ঠজনরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চারদিকে মাতম : প্রিয় লেখককে হারিয়ে ভক্তকুল শোকার্ত। সেই শোক মিছিল ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে হুমায়ূন আহমেদের কফিন।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রথমে একজন একজন করে আসতে দিলেও পরে ভিড়ের চাপে মানুষ আসতে থাকে দলে দলে। ভিড় এত বেশি ছিল যে ভক্তদের অনেকে কফিনের কাছেও যেতে পারেননি। দূর থেকে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককেই। শোকার্ত মানুষের দলে যোগ দেন রাজনীতিবিদরাও। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, জাতীয় পার্টি নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ হুমায়ূন আহমেদের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, খায়রুল কবীর খোকন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমীর সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সচ্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, রাজনীতিবিদ আ স ম আবদুর রব, জাসদের পক্ষে সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও নারী নেত্রী শিরিন আক্তার, বুয়েট উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জাতীয় জাদুঘরের প্রত্ন বোর্ডের সভাপতি এম আজিজুর রহমান আজিজ, সাবেক উপাচার্য মনিরুজ্জামান মিঞা, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক মনসুর মুসা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাংবাদিক আবেদ খান, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, সতীশ চন্দ্র রায়, আক্তারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, প্রথম আলোর পক্ষে আনিসুল হক ও সাজ্জাদ শরীফ, ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মির্জা আবদুল জলিল, বাউল শিল্পী আবদুল কুদ্দুস বয়াতী, তারানা হালিম এমপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত, আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি রফিক আজাদ, নাসির আহমেদ, নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রশিদ হায়দার, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, তথ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ, টিভি অভিনেতা আতাউর রহমান, কাওসার চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, তুষার আহমেদ, মিতা নূর, ফারুক আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, আবুল বারক আলভী, জামাল আহমেদ, মুনিরুজ্জামান, প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপু, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মহাপরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, ড. ফজলুল আলম, শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুসহ আরো অনেকে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত আইজি এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ।
সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে অন্যপ্রকাশ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা পদাতিক, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, জাগৃতি, অন্বেষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, ল ইয়ার্স রাইটার্স ফোরাম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাদা দল, এটিএন বাংলা, সংবাদ, বৈশাখী টেলিভিশন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা সমিতি, নেত্রকোনা সমিতি, খেলাঘর, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সেলিম আল দীন স্মৃতি পরিষদ, গ্যালারি চিত্রক, জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ, ঢাকা কলেজ, ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম প্রভৃতি।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয় দুপুর ২টায়। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন হুমায়ূনের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রয়াত লেখকের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি। শোকার্ত জনতাকে তিনি বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ আমার ভাই। কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম তিনি শুধু আমাদের পরিবারেরই নন বরং সবারই ভাই, সবার সন্তান।' ভিড়ের কারণে যাঁরা লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি তাঁদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ নাটক-উপন্যাস দিয়ে আনন্দ দিয়েছেন, সেই নির্মল আনন্দ পেয়ে থাকলে তাঁর জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন বেহেশতে ভালো থাকেন। যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তিনি অনুভব করেছেন।
শেষে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। তাঁর বক্তব্য দিয়ে শেষ হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। তিনি বলেন, 'শহীদ মিনারে এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে শিল্পী-সাহিত্যিক কিভাবে একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। আজ হুমায়ূন আহমেদ জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মানুষের মনের কথা তিনি তুলে এনেছিলেন। আমরা তাঁর সেই সাহিত্য, দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যত দিন বাঙালি জাতি থাকবে, বাংলা সাহিত্য থাকবে, তত দিনই তিনি বেঁচে থাকবেন।'
বাংলাদেশ টেলিভিশন, চ্যানেল আই, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর, সময়, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, এনটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন শহীদ মিনার থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। শহীদ মিনারে খোলা হয় চারটি শোক বই।
জাতীয় ঈদগাহে জানাজা
দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে আসা হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ সেখানে তাঁর জানাজায় অংশ নেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন জানাজার নামাজে ইমামতি করেন। জানাজার আগে বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। তিনি বলেন, 'বাবার কারণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে প্লিজ মাফ করে দেবেন। কোনো পাওনা থাকলে আমার সঙ্গে অথবা আমার চাচা জাফর ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।'
রাজনীতির মাঠে বিরোধী অবস্থান থাকলেও জানাজায় একই কাতারে পাশাপাশি দাঁড়ান সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আবদুল মতিন খসরু, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে জানাজায় শরিক হন। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেনও জানাজায় অংশ নেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়।
No comments