সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ড-ডলফিনের সন্ধানে by ইনাম আহমেদ
বিকেলের অনেক আগেই মিলিয়ে গিয়েছিল উপকূল। আর এখন, এই সন্ধ্যার পর পরই মিলিয়ে গেল মাছ ধরার শেষ কাঠের নৌকাগুলো। এখন আমরা একা। চারদিকে শুধু নিকষ কালো জল। ওপরে তারার চাঁদোয়া। বিশাল ফিশিং ট্রলারের ইঞ্জিনের ভারী গুমগুম এবং জল কাটার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। চলেছি সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ডের উদ্দেশে।
এটা এক আশ্চর্য জায়গা, যেখানে সমুদ্রের তলদেশ হঠাৎ করেই অনেক গভীর হয়ে গেছে। সেখানে নাকি সোনার (Sonar) দিয়েও কিনারা করা যায় না গভীরতা। গুগল ম্যাপে তাকালে নীল সমুদ্রে একটা গভীর নীল অংশ দেখা যায় বঙ্গোপসাগরে। সেটাই হলো এই সোয়াচ।
প্রথম দিন কেটে গেল ব্রিজে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। অসংখ্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মাছ ধরে এসব ট্রলার। ফিশ ফাইন্ডার দিয়ে মাছের ঝাঁক কোথায়, তা বের করা যায়। কত গভীরে কিংবা কী জাতের মাছ, তা-ও বোঝা যায়। আবার জাল ফেলে মাছ ধরাও দেখা যায় পানির নিচে।
প্রথম দুদিন এসব দেখেই অলস সময় কাটল। শুধু যখন জাল তোলা হয়, তখন বাড়ে উত্তেজনা। কত জাতের মাছ, হাঙর ও অক্টোপাসও উঠে আসে।
কিন্তু সোয়াচ যে আর আসে না। বারবার জিপিএস দেখি। গভীরতা মাপি। ১৩ থেকে ৫২ মিটার গভীরতায় যেতেই লেগে গেল পুরো একটা দিন। আরও আধা বেলা লাগল আরও ৭ মিটার গভীরতায় যেতে।
সকালে বাংকে শুয়ে আছি। এমন সময় টের পেলাম ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। ছুটে গেলাম ব্রিজে। ক্যাপ্টেনের চেহারা হকচকিত।
‘সোনার ফেল করেছে! এখানে কোনো ঠাঁই পাওয়া যাচ্ছে না।’ আতঙ্কিত গলায় বললেন ক্যাপ্টেন।
জিপিএসে চেক করলাম আমরা। সত্যিই এখন আমরা সোয়াচে। ৬০ মিটার থেকে হঠাৎই চলে এসেছি ২ দশমিক ২ কিলোমিটার গভীরতায়। এখানে পানির রং এক ভয়ংকর কালচে সবুজ। আমরা ডেকে এসে দাঁড়ালাম। ধীরগতিতে চলছে জাহাজ। মনে হলো, এই পৃথিবীতে শুধুই আমরা আছি। স্পষ্ট দেখা যায় পৃথিবীর বক্ররেখা।
চারদিকে নজর বোলাতে থাকলাম। এখানে এসেছি তিমি আর ডলফিনের দর্শনে। হঠাৎই নজরে এল, কী যেন উড়ছে আমাদের চারপাশে। আরে! এ যে ফ্লাইং ফিশ। ঝাঁকে ঝাঁকে পানি ছেড়ে উড়াল দিচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ১০০-১৫০ ফুট। পানিতে পড়েই আবার লেজের ঝাপটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কী আশ্চর্য এক খেলা!
কিন্তু তিমি আর ডলফিন কোথায়? চারদিকে নজর বোলাচ্ছি আমরা। আর হঠাৎই এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ল। বহুদূর থেকে তীরবেগে ছুটে আসছে দুটো ডলফিন, মুখ দিয়ে এক আশ্চর্য শব্দ করতে করতে। ঠিক আমাদের ট্রলারের সামনে দিয়ে আড়াআড়িভাবে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
আধা ঘণ্টা পর ফিরে এল ওরা। এবার দলে আরও অনেককে নিয়ে। একঝাঁক ডলফিন আমাদের সঙ্গে খেলা শুরু করল। ওরা জাহাজের সামনে সামনে ‘বাও রাইডিং’ করছে। একঝাঁক ডলফিন লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে আমাদের চারপাশে, যেন আমাদের এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে ওদের জগতে।
আবার কখনো লেজের ওপর ভর করে পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের দিকে দুষ্টু চোখে দেখে। আর মুখ দিয়ে এক আশ্চর্য হাসির মতো তীক্ষ শব্দ করে। ওরা খেলছে আমাদের সঙ্গে। কসরত দেখাচ্ছে। আবার এরই মধ্যে একজন একটা মাছ ধরে ফেলল।
আমাদের তুমুল চিৎকারে ওরা যেন আরও উৎসাহ পেয়ে গেল। পানির তলা থেকে ডুব দিয়ে তীরবেগে শূন্যে লাফাল। কী অসম্ভব সুন্দর সেই দৃশ্য! কী অদ্ভুত সুন্দর এই প্রাণীগুলো।
একসময় চলে গেল ওরা। কিন্তু তিমি কই? আমাদের ফেরার সময় যে হয়ে এল। চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যে পেলাম না ওদের।
অবশেষে ফিরতি পথ ধরলাম আমরা। না হয় এ যাত্রায় না-ই বা দেখলাম তিমি। পরের বার দেখব। বিদায় সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ড।
প্রথম দিন কেটে গেল ব্রিজে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। অসংখ্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মাছ ধরে এসব ট্রলার। ফিশ ফাইন্ডার দিয়ে মাছের ঝাঁক কোথায়, তা বের করা যায়। কত গভীরে কিংবা কী জাতের মাছ, তা-ও বোঝা যায়। আবার জাল ফেলে মাছ ধরাও দেখা যায় পানির নিচে।
প্রথম দুদিন এসব দেখেই অলস সময় কাটল। শুধু যখন জাল তোলা হয়, তখন বাড়ে উত্তেজনা। কত জাতের মাছ, হাঙর ও অক্টোপাসও উঠে আসে।
কিন্তু সোয়াচ যে আর আসে না। বারবার জিপিএস দেখি। গভীরতা মাপি। ১৩ থেকে ৫২ মিটার গভীরতায় যেতেই লেগে গেল পুরো একটা দিন। আরও আধা বেলা লাগল আরও ৭ মিটার গভীরতায় যেতে।
সকালে বাংকে শুয়ে আছি। এমন সময় টের পেলাম ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। ছুটে গেলাম ব্রিজে। ক্যাপ্টেনের চেহারা হকচকিত।
‘সোনার ফেল করেছে! এখানে কোনো ঠাঁই পাওয়া যাচ্ছে না।’ আতঙ্কিত গলায় বললেন ক্যাপ্টেন।
জিপিএসে চেক করলাম আমরা। সত্যিই এখন আমরা সোয়াচে। ৬০ মিটার থেকে হঠাৎই চলে এসেছি ২ দশমিক ২ কিলোমিটার গভীরতায়। এখানে পানির রং এক ভয়ংকর কালচে সবুজ। আমরা ডেকে এসে দাঁড়ালাম। ধীরগতিতে চলছে জাহাজ। মনে হলো, এই পৃথিবীতে শুধুই আমরা আছি। স্পষ্ট দেখা যায় পৃথিবীর বক্ররেখা।
চারদিকে নজর বোলাতে থাকলাম। এখানে এসেছি তিমি আর ডলফিনের দর্শনে। হঠাৎই নজরে এল, কী যেন উড়ছে আমাদের চারপাশে। আরে! এ যে ফ্লাইং ফিশ। ঝাঁকে ঝাঁকে পানি ছেড়ে উড়াল দিচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ১০০-১৫০ ফুট। পানিতে পড়েই আবার লেজের ঝাপটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কী আশ্চর্য এক খেলা!
কিন্তু তিমি আর ডলফিন কোথায়? চারদিকে নজর বোলাচ্ছি আমরা। আর হঠাৎই এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ল। বহুদূর থেকে তীরবেগে ছুটে আসছে দুটো ডলফিন, মুখ দিয়ে এক আশ্চর্য শব্দ করতে করতে। ঠিক আমাদের ট্রলারের সামনে দিয়ে আড়াআড়িভাবে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
আধা ঘণ্টা পর ফিরে এল ওরা। এবার দলে আরও অনেককে নিয়ে। একঝাঁক ডলফিন আমাদের সঙ্গে খেলা শুরু করল। ওরা জাহাজের সামনে সামনে ‘বাও রাইডিং’ করছে। একঝাঁক ডলফিন লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে আমাদের চারপাশে, যেন আমাদের এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে ওদের জগতে।
আবার কখনো লেজের ওপর ভর করে পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের দিকে দুষ্টু চোখে দেখে। আর মুখ দিয়ে এক আশ্চর্য হাসির মতো তীক্ষ শব্দ করে। ওরা খেলছে আমাদের সঙ্গে। কসরত দেখাচ্ছে। আবার এরই মধ্যে একজন একটা মাছ ধরে ফেলল।
আমাদের তুমুল চিৎকারে ওরা যেন আরও উৎসাহ পেয়ে গেল। পানির তলা থেকে ডুব দিয়ে তীরবেগে শূন্যে লাফাল। কী অসম্ভব সুন্দর সেই দৃশ্য! কী অদ্ভুত সুন্দর এই প্রাণীগুলো।
একসময় চলে গেল ওরা। কিন্তু তিমি কই? আমাদের ফেরার সময় যে হয়ে এল। চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যে পেলাম না ওদের।
অবশেষে ফিরতি পথ ধরলাম আমরা। না হয় এ যাত্রায় না-ই বা দেখলাম তিমি। পরের বার দেখব। বিদায় সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ড।
No comments