মধ্যপ্রাচ্য-সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কোন পথে? by ইম্মানুয়েল ওয়ালারস্টাইন
বাশার আল-আসাদ বিশ্বের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁকে নিন্দা করে স্বৈরশাসক বলা হচ্ছে। প্রায় সবাই তাঁকে রক্তপিপাসু হিসেবে চিত্রিত করছে। এমনকি যেসব দেশের সরকার তাঁকে অস্বীকার করতে চায় না, তাদেরও দেখা যাচ্ছে তাঁকে বলতে সমঝে চলতে ও বিরোধীদের সঙ্গে ছাড় দিয়ে হলেও একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে।
তাহলে কীভাবে এত সব নিন্দা-মন্দ ও পরামর্শ উপেক্ষা করে তিনি সিরিয়ার ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমে অবিরতভাবে সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগ চালিয়ে যাচ্ছেন? কেন তাঁকে উৎখাতে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না? এর উত্তর পেতে প্রথমে তাঁর শক্তিমত্তার একটা পরিমাপ নিতে হবে। প্রথমত, তাঁর সেনাবাহিনী শক্তিশালী এবং এখন পর্যন্ত মামুলি কিছু ঘটনা বাদ দিলে তারা তাঁর পক্ষেই আছে। দ্বিতীয়ত, এখনো দেশের অর্ধেক মানুষ তাঁকে সমর্থন করছে; এ কারণেই সিরিয়ার পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের মতো মনে হচ্ছে।
মূল মূল সরকারি পদ এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব সেখানে আলাভিদের হাতে, যারা শিয়াদেরই একটি শাখা। আলাভিরা জনসংখ্যার বিচারে সংখ্যালঘু, এ কারণেই বিরোধী সুন্নিদের উত্থান নিয়ে তারা ভীত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু, যেমন—খ্রিষ্টান, দ্রুজ ও কুর্দিরাও সুন্নি সরকার গঠনের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন। চূড়ান্তভাবে বিশাল বণিক বুর্জোয়া শ্রেণীও এখন পর্যন্ত আসাদ ও বাথ শাসনের বিরুদ্ধে যায়নি।
কিন্তু এটাই কি আসাদের টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট? যদি এগুলোই সব হতো, তাহলে আমার সন্দেহ, আসাদ বেশি দিন টিকতে পারতেন না। অর্থনৈতিকভাবে সরকার দারুণভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সরকার-বিরোধী সিরীয় মুক্তিসেনা অস্ত্র পাচ্ছে প্রতিবেশী ইরাকি সুন্নিদের কাছ থেকে; সম্ভবত কাতারের মাধ্যমেও তারা অস্ত্র পাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ও সব ধরনের রাজনীতিবিদেরাও সমবেতভাবে সুর করে আসাদের নিন্দা করে যাচ্ছেন।
তা সত্ত্বেও আমি মনে করি না, এক বা দুই বছরের মধ্যে আসাদের পতন হতে যাচ্ছে বা পুরো শাসনব্যবস্থা আমূল বদলে যাচ্ছে। কারণটা এই, যারা তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব, তারা আসলে চায় না যে আসাদ বিদায় নিন। একে একে দেখা যাক।
সৌদি আরব: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘সহিংসতার অবসান হতে হবে এবং সিরীয় সরকারকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।’ শুনতে খুবই জোরদার শোনাচ্ছে বটে, যদি না আপনি তাঁর শেষ কথাটি শোনেন। তিনি এরপর বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাটিকেও বাতিল করতে হবে।’ ঘটনা হলো, সৌদি আরব আসাদবিরোধী হিসেবে নাম করতে চাইলেও আসাদের পরবর্তী সরকারের বিষয়টি নিয়ে ভীত। তারা জানে, আসাদ-উত্তর সিরিয়ায় (সম্ভবত নৈরাজ্য নেমে আসবে) আল-কায়েদা ঘাঁটি গেড়ে বসবে এবং তাদের পয়লা লক্ষ্য হলো সৌদি সরকারকে উচ্ছেদ করা। এ জন্যই সৌদিরা ‘কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ’ চায় না।
ইসরায়েল: ইসরায়েল বরাবর ইরান নিয়ে বিকারগ্রস্ত এবং বাথপন্থী-সিরিয়া ইরানের বন্ধুশক্তি। কিন্তু সবকিছুর শেষে সিরিয়া তুলনামূলক শান্ত আরব প্রতিবেশী, ইসরায়েলিদের জন্য একটা স্থিতিশীলতার দ্বীপ। হ্যাঁ, সিরিয়া হিজবুল্লাহকে সাহায্য করে, কিন্তু হিজবুল্লাহও এখন মোটামুটি শান্ত। তাহলে কেন ইসরায়েলিরা আসাদ-উত্তর অশান্ত সিরিয়া দেখতে চাইবে? কে তখন ক্ষমতা নেবে, আর যারা নেবে তারা যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে জনপ্রিয় হতে চাইবে না, তার ভরসা কী? এবং আসাদের পতন হলে এখনকার শান্ত লেবাননও জ্বলে উঠতে পারে, তাতে আরও শক্তিশালী হবে হিজবুল্লাহ। আসাদের পতনে ইসরায়েলের ক্ষতি যতটা, লাভ ততটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভালো কৌশলই নিয়েছে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। ১১ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্ট-এ ‘হানাহানি বাড়ছে বটে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় লাভজনক পন্থা দেখছে না’। লেখাটিতে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিরিয়ায় ‘সামরিক হস্তক্ষেপের কোনো সাধ নেই’ । কিন্তু নব্য রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী চার্লস কৌথহ্যামাররা যুদ্ধ চান। ভণিতা ছাড়াই তিনি বলেছেন, ‘এটা কেবল মুক্তির প্রশ্ন নয়, এটা আসলে ইরানের ক্ষমতাকে পর্যুদস্ত করার প্রশ্ন।’
কিন্তু কেবল এ জন্যই ওবামা ও তাঁর উপদেষ্টারা সিরিয়া বিষয়ে বেকায়দায় পড়েননি। লিবিয়ায় আক্রমণ চালানোর জন্য তাঁরা চাপে পড়েছিলেন। সেখানে তাঁদের বেশি প্রাণ হারাতে না হলেও কার্যত তেমন কোনো ভূরাজনৈতিক সুবিধা কি তাঁরা পেয়েছেন? নতুন লিবীয় সরকার—আদতেই একে যদি সরকার বলা যায়—কি কোনো বিচারে আগের থেকে ভালো? নাকি এটা আসলে একটা দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার শুরু? যেমনটা হয়েছে ইরাকে?
তাই রাশিয়া যখন জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক প্রস্তাবে ভেটো দিল, আমি তখন কল্পনায় ওয়াশিংটনের তরফে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়তে দেখলাম। সিরিয়ার সঙ্গে বিরোধ বাড়ানো এবং লিবীয় ধরনের অভিযান চালানোর চাপ সরে গেল। এভাবে সিরিয়ায় যুদ্ধ না চালানোর জন্য ওবামাকে রিপাবলিকানদের তরফে যে গঞ্জনা সইতে হচ্ছিল, রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা থেকে রেহাই মিলল। আর জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজান রাইসও রাশিয়াকে সব নষ্টের গোড়া বলে দায়মুক্তি পেলেন।
ফ্রান্স: ফ্রান্স সর্বদাই সিরিয়ায় তাদের এক সময়ের জোরদার অবস্থান নিয়ে স্মৃতিকাতর। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায়ই চিৎকার আর নিন্দা করেন। কিন্তু সেনা পাঠানো? ইয়ার্কি নাকি? সামনেই ফরাসি নির্বাচন এবং সেনা পাঠানো মোটেই জনপ্রিয়তা পাবে না। বিশেষত, সিরিয়া যেহেতু লিবিয়ার মতো পিঠা ভাগ করার বিষয় নয়।
তুরস্ক: গত এক দশকে তুরস্ক আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে মন দিয়েছে। নিজ সীমান্তে গৃহযুদ্ধমূলক পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্ক খুশি নয়। কোনো না কোনো ধরনের রাজনৈতিক আপসই তার পছন্দ। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তুরস্ক দলদ্রোহী সেনাদের সমর্থন দিতে বা অস্ত্র জোগাতে রাজি নয়।’ সব পক্ষের বন্ধুত্বের প্রয়োজন তুরস্কের আছে। তা ছাড়া তুরস্কের নিজস্ব কুর্দি সমস্যা আছে। এ ব্যাপারে সিরিয়া আগে তাদের সহায়তা না করলেও এখন আগ্রহী হতে পারে।
অতএব, কে তাহলে সিরিয়ায় অভিযান চালাতে চায়? সম্ভবত কাতার। কিন্তু কাতার যতই ধনী হোক, সে কোনো সামরিক খেলোয়াড় নয়। তাহলে দাঁড়াল এই, যতই উচ্চবাচ্য করা হোক না কেন, গৃহযুদ্ধ যতই মর্মান্তিক হোক না কেন, কেউই সত্যিকারভাবে চায় না যে আসাদের বিদায় ঘটুক। সুতরাং, সব সম্ভাবনার বিচারে বলা যায়, আসাদ থাকছেন।
এজেন্সি গ্লোবাল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফারুক ওয়াসিফ
ইম্মানুয়েল ওয়ালারস্টাইন: যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো; বিশ্বব্যবস্থা বিষয়ের তাত্ত্বিক।
মূল মূল সরকারি পদ এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব সেখানে আলাভিদের হাতে, যারা শিয়াদেরই একটি শাখা। আলাভিরা জনসংখ্যার বিচারে সংখ্যালঘু, এ কারণেই বিরোধী সুন্নিদের উত্থান নিয়ে তারা ভীত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু, যেমন—খ্রিষ্টান, দ্রুজ ও কুর্দিরাও সুন্নি সরকার গঠনের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন। চূড়ান্তভাবে বিশাল বণিক বুর্জোয়া শ্রেণীও এখন পর্যন্ত আসাদ ও বাথ শাসনের বিরুদ্ধে যায়নি।
কিন্তু এটাই কি আসাদের টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট? যদি এগুলোই সব হতো, তাহলে আমার সন্দেহ, আসাদ বেশি দিন টিকতে পারতেন না। অর্থনৈতিকভাবে সরকার দারুণভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সরকার-বিরোধী সিরীয় মুক্তিসেনা অস্ত্র পাচ্ছে প্রতিবেশী ইরাকি সুন্নিদের কাছ থেকে; সম্ভবত কাতারের মাধ্যমেও তারা অস্ত্র পাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ও সব ধরনের রাজনীতিবিদেরাও সমবেতভাবে সুর করে আসাদের নিন্দা করে যাচ্ছেন।
তা সত্ত্বেও আমি মনে করি না, এক বা দুই বছরের মধ্যে আসাদের পতন হতে যাচ্ছে বা পুরো শাসনব্যবস্থা আমূল বদলে যাচ্ছে। কারণটা এই, যারা তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব, তারা আসলে চায় না যে আসাদ বিদায় নিন। একে একে দেখা যাক।
সৌদি আরব: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘সহিংসতার অবসান হতে হবে এবং সিরীয় সরকারকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।’ শুনতে খুবই জোরদার শোনাচ্ছে বটে, যদি না আপনি তাঁর শেষ কথাটি শোনেন। তিনি এরপর বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাটিকেও বাতিল করতে হবে।’ ঘটনা হলো, সৌদি আরব আসাদবিরোধী হিসেবে নাম করতে চাইলেও আসাদের পরবর্তী সরকারের বিষয়টি নিয়ে ভীত। তারা জানে, আসাদ-উত্তর সিরিয়ায় (সম্ভবত নৈরাজ্য নেমে আসবে) আল-কায়েদা ঘাঁটি গেড়ে বসবে এবং তাদের পয়লা লক্ষ্য হলো সৌদি সরকারকে উচ্ছেদ করা। এ জন্যই সৌদিরা ‘কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ’ চায় না।
ইসরায়েল: ইসরায়েল বরাবর ইরান নিয়ে বিকারগ্রস্ত এবং বাথপন্থী-সিরিয়া ইরানের বন্ধুশক্তি। কিন্তু সবকিছুর শেষে সিরিয়া তুলনামূলক শান্ত আরব প্রতিবেশী, ইসরায়েলিদের জন্য একটা স্থিতিশীলতার দ্বীপ। হ্যাঁ, সিরিয়া হিজবুল্লাহকে সাহায্য করে, কিন্তু হিজবুল্লাহও এখন মোটামুটি শান্ত। তাহলে কেন ইসরায়েলিরা আসাদ-উত্তর অশান্ত সিরিয়া দেখতে চাইবে? কে তখন ক্ষমতা নেবে, আর যারা নেবে তারা যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে জনপ্রিয় হতে চাইবে না, তার ভরসা কী? এবং আসাদের পতন হলে এখনকার শান্ত লেবাননও জ্বলে উঠতে পারে, তাতে আরও শক্তিশালী হবে হিজবুল্লাহ। আসাদের পতনে ইসরায়েলের ক্ষতি যতটা, লাভ ততটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভালো কৌশলই নিয়েছে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। ১১ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্ট-এ ‘হানাহানি বাড়ছে বটে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় লাভজনক পন্থা দেখছে না’। লেখাটিতে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিরিয়ায় ‘সামরিক হস্তক্ষেপের কোনো সাধ নেই’ । কিন্তু নব্য রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী চার্লস কৌথহ্যামাররা যুদ্ধ চান। ভণিতা ছাড়াই তিনি বলেছেন, ‘এটা কেবল মুক্তির প্রশ্ন নয়, এটা আসলে ইরানের ক্ষমতাকে পর্যুদস্ত করার প্রশ্ন।’
কিন্তু কেবল এ জন্যই ওবামা ও তাঁর উপদেষ্টারা সিরিয়া বিষয়ে বেকায়দায় পড়েননি। লিবিয়ায় আক্রমণ চালানোর জন্য তাঁরা চাপে পড়েছিলেন। সেখানে তাঁদের বেশি প্রাণ হারাতে না হলেও কার্যত তেমন কোনো ভূরাজনৈতিক সুবিধা কি তাঁরা পেয়েছেন? নতুন লিবীয় সরকার—আদতেই একে যদি সরকার বলা যায়—কি কোনো বিচারে আগের থেকে ভালো? নাকি এটা আসলে একটা দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার শুরু? যেমনটা হয়েছে ইরাকে?
তাই রাশিয়া যখন জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক প্রস্তাবে ভেটো দিল, আমি তখন কল্পনায় ওয়াশিংটনের তরফে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়তে দেখলাম। সিরিয়ার সঙ্গে বিরোধ বাড়ানো এবং লিবীয় ধরনের অভিযান চালানোর চাপ সরে গেল। এভাবে সিরিয়ায় যুদ্ধ না চালানোর জন্য ওবামাকে রিপাবলিকানদের তরফে যে গঞ্জনা সইতে হচ্ছিল, রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা থেকে রেহাই মিলল। আর জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজান রাইসও রাশিয়াকে সব নষ্টের গোড়া বলে দায়মুক্তি পেলেন।
ফ্রান্স: ফ্রান্স সর্বদাই সিরিয়ায় তাদের এক সময়ের জোরদার অবস্থান নিয়ে স্মৃতিকাতর। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায়ই চিৎকার আর নিন্দা করেন। কিন্তু সেনা পাঠানো? ইয়ার্কি নাকি? সামনেই ফরাসি নির্বাচন এবং সেনা পাঠানো মোটেই জনপ্রিয়তা পাবে না। বিশেষত, সিরিয়া যেহেতু লিবিয়ার মতো পিঠা ভাগ করার বিষয় নয়।
তুরস্ক: গত এক দশকে তুরস্ক আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে মন দিয়েছে। নিজ সীমান্তে গৃহযুদ্ধমূলক পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্ক খুশি নয়। কোনো না কোনো ধরনের রাজনৈতিক আপসই তার পছন্দ। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তুরস্ক দলদ্রোহী সেনাদের সমর্থন দিতে বা অস্ত্র জোগাতে রাজি নয়।’ সব পক্ষের বন্ধুত্বের প্রয়োজন তুরস্কের আছে। তা ছাড়া তুরস্কের নিজস্ব কুর্দি সমস্যা আছে। এ ব্যাপারে সিরিয়া আগে তাদের সহায়তা না করলেও এখন আগ্রহী হতে পারে।
অতএব, কে তাহলে সিরিয়ায় অভিযান চালাতে চায়? সম্ভবত কাতার। কিন্তু কাতার যতই ধনী হোক, সে কোনো সামরিক খেলোয়াড় নয়। তাহলে দাঁড়াল এই, যতই উচ্চবাচ্য করা হোক না কেন, গৃহযুদ্ধ যতই মর্মান্তিক হোক না কেন, কেউই সত্যিকারভাবে চায় না যে আসাদের বিদায় ঘটুক। সুতরাং, সব সম্ভাবনার বিচারে বলা যায়, আসাদ থাকছেন।
এজেন্সি গ্লোবাল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফারুক ওয়াসিফ
ইম্মানুয়েল ওয়ালারস্টাইন: যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো; বিশ্বব্যবস্থা বিষয়ের তাত্ত্বিক।
No comments