ঈদ নিয়ে তাঁদের যত ভাবনা by নাঈমা আমিন
বছর ঘুরে ঈদ আসে। আর এই ঈদের আনন্দ শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পরিবারের সবার মধ্যে ভাগ করে দিতে ব্যস্ত যখন সবাই, তখন তৈরি পোশাক কারখানার নারীশ্রমিকেরা কী ভাবছেন ঈদকে ঘিরে? তাঁদের অনেকে হয়তো ঈদের আনন্দে যেতে পারছেন না তাঁদের পরিবার-পরিজন-স্বজনদের কাছে, কিন্তু তাই বলে তাঁদের ঈদের আনন্দ থেমে নেই। ঈদকে সামনে রেখে তাঁদের নিজেদের মধ্যেও রয়েছে খুশি ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তুতি।
‘এই প্রথম নিজের কামানো টাকা দিয়া মা আর বোনরে কাপড় কিইন্যা দিতে পারমু। এইডা ভাইব্যা খুব ভালো লাগছে নিজের কাছে। এ মাসের বেতন পাইয়্যাই কিছু টাকা ঈদের খরচার জন্য মায়ের কাছে পাঠাইয়া দিছি। রমজান মাসে ওভারটাইম করতে পারলে আরও কিছু টাকা পাওয়া যাইত কিন্তু এবার রমজান মাসে ওভারটাইম করতে দেই নায় গার্মেন্টস থেকে। আমার তো কোনো ভাই নাই, বাপও নাই। মা আর ছোট একটা বোন ফরিদপুরে থাকে। প্রতিবার ঈদে নিজের মনে খুব সাধ হইতো মা-বোনরে ভালো কাপড় কিইন্যা দিতে, ভালোমন্দ খাওন রান্না করতে। কিন্তু সেই ক্ষমতা ছিল না এত দিন। পরে আমার খালায় ঢাকায় আইন্যা আমারে গার্মেন্টসে সুইংয়ের কাম পাওয়াইয়া দিছে প্রায় পাঁচ মাস। এই কাম কইর্যা বেতন পাই দুই হাজার ৫০০ টাকা আর গত মাসে ঈদ উপলক্ষে বেশি টাকা কামানোর লাইগ্যা ওভারটাইমও করছি। তবে মায়ের মনডা একটু খারাপ, ঈদে তো ছুটি তেমন পামু না—এর লাইগ্যা আর বাড়ি যাওন হইব না, তাই। কিন্তু আমি বাড়ি না গেলে কি আমার বোন আর মায়ের ঈদের খুশি বন্ধ থাকবে? তাই এরই মধ্যে আগের জমানো টাকা আর এ মাসের জমানো টাকা দিয়া মায়ের কাপড়, বোনডার থ্রিপিস, নিজের জন্য ঘড়ি কিনছি।’ বলছিলেন নিজের উপার্জন করা টাকায় এই প্রথম ঈদের খুশি জানানোর আনন্দে বিভোর পপি (১৮)।
ঢাকার কমলাপুরে তৈরি পোশাক কারখানায় ফিনিশিংয়ের কাজ করেন তানিয়া (২০)। ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ঈদে মা-বাপ, ভাই-বোন সবাইরে কাপড়চোপড় কিইন্যা দেবার পর যদি টাকা থাকে তাইলে নিজের জন্য কিনমু। গত বছর ঈদে ছোড ভাইডারে শার্ট, প্যান্ট আর বাপরে লুঙ্গি কিইন্যা দিছি, মা আর ছোড বোনরে কিছু কিইন্যা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু এইবার ঈদে আগে থাইকা টাকা জমাইছি। গত মাসে প্রায় দিনই রাত ১১টা পর্যন্ত ওভারটাইম করছি, তাতে বেতনের সঙ্গে বেশি টাকা পাইছি। টাকা পাইয়্যাই প্রথমে মায়ের লাইগ্যা শাড়ি কিনছি আর ছোড বোন আর ভাইয়ের কাপড়চোপড়, বাপের লাইগ্যা শার্ট কিইন্যা ফালাইছি। এহন ঈদের আগে শুধু বোনাসের টাকাটা হাতে পাইলে সেমাই, কেক, বিস্কিট, চিনি, দুধ, আঙুর, কমলা এগুলো কিইন্যা দিমু আর ঈদের খরচার জন্য ৫০০ টাকা একলগে পাঠাইয়া দিমু। কিন্তু বাড়িতে গেলে নিজে যা পামু তার বেশিই যাইতে-আইতে খরচ হইয়া যায়। এর লাইগ্যা এবার আর বাড়ি যামু না। ঈদের আগেই নিজের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করছি বাড়ির সবার জন্য, যাতে আমার বাপ-মা, ভাই-বোন ঈদটা ভালোমতো করতে পারে।’ ঈদকে ঘিরে তাঁর ভাবনাগুলো এভাবেই বলছিলেন তানিয়া।
তিন বছর ধরে পোশাক কারখানায় প্যান্ট তৈরির মেশিনে অফ ওয়ার্ডারের কাজ করেন সালমা (২৫)। ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো বড় ভাই নাই। ছোট বোনেরও বিয়া হইয়া গ্যাছে। আর আমার বিয়া হওনের পর থেকে বাপের বাড়ি যাইতে পারি না ঈদের সময়। নিজের মা, ভাইবোনের সঙ্গে ঈদ করি না কত দিন! ঢাকায় থাকতে হয় জামাইয়ের সঙ্গে। আমার মায়েরে, ভাইবোনরে ঈদে কিছু দিই হেইড্যা আমার জামাই পছন্দ করে না। এই মাসে ছোট বোনডার বাচ্চা হইছে। ঈদে তারে কিছু না দিলে কেমন হয়। তাই এ মাসের বেতন আর ওভারটাইম মিলাইয়া যা পাইছি সেটা দিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কাপড় কিনছি। আর গোপনে সমিতিতে যে টাকা জমাইছি, সেইটা আর ঈদের বোনাস মিইল্যা এই মাসে প্রায় ছয় হাজার টাকা পামু। এই টাকা পাইয়া সাথে সাথে ছোট বোনের বাচ্চা, জামাই, মা—সবার জন্যই কাপড়চোপড় কিইন্যা আর এক হাজার টাকা গোপনে দেশের বাড়ি পাঠাইয়া দিমু। আমি না যাইতে পারলে কী হইছে, আমার মা, ভাই, বোন খুশিতে ঈদ করতে পারলে আমার আনন্দ লাগবে সবচেয়ে বেশি।’ বলছিলেন সালমা।
রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় হেলপারের কাজ করেন পারুল (২১)। এ মাসে এখনো বেতন পাননি তিনি। তাই একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। শত হলেও বছরের একটা খুশির দিন ঈদের দিন। মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই পারুলের। গ্রামে পারুলের খালা আর খালাতো ভাইবোন আছে, যাদের তিনি নিজের ভাইবোনের মতো ভালোবাসেন। একে তো আগের মাসের বেতন পাননি, তার ওপর রমজান মাসে ওভারটাইম নিষিদ্ধ তৈরি পোশাক কারখানায়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে গত মাসের বেতন আর ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পারুল বলছিলেন, ‘টাকাটা পাইয়্যা আগে খালার জন্য শাড়ি কিনমু। আর খালাতো বোনডার হাতে ঘড়ি পরার খুব ইচ্ছা। ওরে ঘড়ি কিইন্যা দিমু, ভাইডা ঢাকায় আসার সময় জুতা চাইছে, ওরে জুতা কিইন্যা দিমু আর লগে সেমাই, নুডুলস, চিনি কিইন্যা দিমু, যাতে ঈদের দিনে ভালোমন্দ কিছু রান্না কইর্যা খাইতে পারে। এরপর নিজের লাইগ্যা থ্রিপিস কিনমু। আমি যামু ঈদের পরে, কারণ ঈদের সময় যাতায়াত খরচা বেশি হয়।’
অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও সাধ্যের মধ্যে ঈদের প্রস্তুতির আয়োজন করছেন তাঁরা।
ঢাকার কমলাপুরে তৈরি পোশাক কারখানায় ফিনিশিংয়ের কাজ করেন তানিয়া (২০)। ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ঈদে মা-বাপ, ভাই-বোন সবাইরে কাপড়চোপড় কিইন্যা দেবার পর যদি টাকা থাকে তাইলে নিজের জন্য কিনমু। গত বছর ঈদে ছোড ভাইডারে শার্ট, প্যান্ট আর বাপরে লুঙ্গি কিইন্যা দিছি, মা আর ছোড বোনরে কিছু কিইন্যা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু এইবার ঈদে আগে থাইকা টাকা জমাইছি। গত মাসে প্রায় দিনই রাত ১১টা পর্যন্ত ওভারটাইম করছি, তাতে বেতনের সঙ্গে বেশি টাকা পাইছি। টাকা পাইয়্যাই প্রথমে মায়ের লাইগ্যা শাড়ি কিনছি আর ছোড বোন আর ভাইয়ের কাপড়চোপড়, বাপের লাইগ্যা শার্ট কিইন্যা ফালাইছি। এহন ঈদের আগে শুধু বোনাসের টাকাটা হাতে পাইলে সেমাই, কেক, বিস্কিট, চিনি, দুধ, আঙুর, কমলা এগুলো কিইন্যা দিমু আর ঈদের খরচার জন্য ৫০০ টাকা একলগে পাঠাইয়া দিমু। কিন্তু বাড়িতে গেলে নিজে যা পামু তার বেশিই যাইতে-আইতে খরচ হইয়া যায়। এর লাইগ্যা এবার আর বাড়ি যামু না। ঈদের আগেই নিজের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করছি বাড়ির সবার জন্য, যাতে আমার বাপ-মা, ভাই-বোন ঈদটা ভালোমতো করতে পারে।’ ঈদকে ঘিরে তাঁর ভাবনাগুলো এভাবেই বলছিলেন তানিয়া।
তিন বছর ধরে পোশাক কারখানায় প্যান্ট তৈরির মেশিনে অফ ওয়ার্ডারের কাজ করেন সালমা (২৫)। ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো বড় ভাই নাই। ছোট বোনেরও বিয়া হইয়া গ্যাছে। আর আমার বিয়া হওনের পর থেকে বাপের বাড়ি যাইতে পারি না ঈদের সময়। নিজের মা, ভাইবোনের সঙ্গে ঈদ করি না কত দিন! ঢাকায় থাকতে হয় জামাইয়ের সঙ্গে। আমার মায়েরে, ভাইবোনরে ঈদে কিছু দিই হেইড্যা আমার জামাই পছন্দ করে না। এই মাসে ছোট বোনডার বাচ্চা হইছে। ঈদে তারে কিছু না দিলে কেমন হয়। তাই এ মাসের বেতন আর ওভারটাইম মিলাইয়া যা পাইছি সেটা দিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কাপড় কিনছি। আর গোপনে সমিতিতে যে টাকা জমাইছি, সেইটা আর ঈদের বোনাস মিইল্যা এই মাসে প্রায় ছয় হাজার টাকা পামু। এই টাকা পাইয়া সাথে সাথে ছোট বোনের বাচ্চা, জামাই, মা—সবার জন্যই কাপড়চোপড় কিইন্যা আর এক হাজার টাকা গোপনে দেশের বাড়ি পাঠাইয়া দিমু। আমি না যাইতে পারলে কী হইছে, আমার মা, ভাই, বোন খুশিতে ঈদ করতে পারলে আমার আনন্দ লাগবে সবচেয়ে বেশি।’ বলছিলেন সালমা।
রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় হেলপারের কাজ করেন পারুল (২১)। এ মাসে এখনো বেতন পাননি তিনি। তাই একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। শত হলেও বছরের একটা খুশির দিন ঈদের দিন। মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই পারুলের। গ্রামে পারুলের খালা আর খালাতো ভাইবোন আছে, যাদের তিনি নিজের ভাইবোনের মতো ভালোবাসেন। একে তো আগের মাসের বেতন পাননি, তার ওপর রমজান মাসে ওভারটাইম নিষিদ্ধ তৈরি পোশাক কারখানায়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে গত মাসের বেতন আর ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পারুল বলছিলেন, ‘টাকাটা পাইয়্যা আগে খালার জন্য শাড়ি কিনমু। আর খালাতো বোনডার হাতে ঘড়ি পরার খুব ইচ্ছা। ওরে ঘড়ি কিইন্যা দিমু, ভাইডা ঢাকায় আসার সময় জুতা চাইছে, ওরে জুতা কিইন্যা দিমু আর লগে সেমাই, নুডুলস, চিনি কিইন্যা দিমু, যাতে ঈদের দিনে ভালোমন্দ কিছু রান্না কইর্যা খাইতে পারে। এরপর নিজের লাইগ্যা থ্রিপিস কিনমু। আমি যামু ঈদের পরে, কারণ ঈদের সময় যাতায়াত খরচা বেশি হয়।’
অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও সাধ্যের মধ্যে ঈদের প্রস্তুতির আয়োজন করছেন তাঁরা।
No comments