ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস-নিয়মানুবর্তিতাই যার মূল ওষুধ by জাহাঙ্গীর হোসেন

তেল ছাড়া রেলগাড়ি নামের যন্ত্রটি চলে না। আমাদের দেহও তো এক ধরনের যন্ত্র। আর এই যন্ত্রের তেল হচ্ছে গ্লুকোজ নামের একটি পদার্থ। রেলগাড়ির তেল জ্বালাতে যেমন অক্সিজেনের প্রয়োজন, তেমনি আমাদের দেহের গ্লুকোজকে কাজে লাগাতে হলে ইনসুলিন নামের একটি পদার্থের প্রয়োজন।


ইনসুলিনের কাজ হলো রক্ত থেকে গ্লুকোজের কণাগুলোকে টেনে এনে দেহের কোষে দেওয়া। এই ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় থেকে। যখন অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দেহ ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারে তখনই রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর এর ফলে দেহে তৈরি হয় নানা অসামঞ্জস্য। এর নাম ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো- ঘন ঘন প্রস্রাব, অধিক দুর্বলতা, তৃষ্ণা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, দেহের ওজন দ্রুত হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখা ও ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া। ডায়াবেটিস সম্পর্কে আপনার যদি পরিষ্কার একটি ধারণা থাকে, তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কী করা উচিত আর কী নয়। ভেবে দেখুন আপনি যে খাদ্য গ্রহণ করছেন তা থেকে তৈরি হচ্ছে গ্লুকোজ। আর এই গ্লুকোজের সবটুকু আপনার দেহে ব্যবহার হচ্ছে না, অর্থাৎ আপনার রক্তে মিশে থাকছে অতিরিক্ত গ্লুকোজ। আপনার রক্ত হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন। এই ঘন রক্ত চিকন চিকন রক্তনালির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে বাধা খাচ্ছে। আর এই অবস্থায় যদি আপনি খাদ্যগ্রহণে সংযমী না হন তাহলে রক্তে বাড়তে থাকবে আরো গ্লুকোজ। রক্ত হবে আরো ঘন। এই ঘন রক্ত চিকন রক্তনালিতে আটকা পড়ে বন্ধ করে দেবে চলাচলের পথ। যে পথে রক্ত পৌঁছাবে না সে পথে পেঁৗছবে না কোনো অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া কোষ বাঁচে না। তার মানে কতগুলো টিস্যুর নির্ঘাৎ মৃত্যু। এমন করে করে অঙ্গহানির পথে এগোবে শরীরযন্ত্র। এমনকি, ভেবে দেখুন- আমাদের দেহের ছাকনযন্ত্র হচ্ছে কিডনি। অতিরিক্ত গ্লুকোজ মেশা ঘন রক্ত ছাকতে গিয়ে ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যাবে এই যন্ত্রটিও! শুধু তাই নয়, একে একে সব অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে অসম্ভব দ্রুতগতিতে। তাহলে করণীয় কি কিছুই নেই? আছে। নিয়মানুবর্তীতাই হচ্ছে ডায়াবেটিসের একমাত্র চিকিৎসা। ডাক্তার আপনার পরীক্ষা করে বলে দেবেন কতটুকু কী খাদ্য আপনি খেতে পারবেন। এর মানে হলো, এর বেশি খাদ্য খেলে তা থেকে তৈরি গ্লুকোজ আপনার রক্তে অতিরিক্ত ঘনত্ব বাড়াবে। সবচেয়ে বড় কথাটিই বলা হয়নি। আপনি ভেবে দেখুন, গাঢ় চিনির দ্রবণে একটু পানি ঢেলে দিলেন। তাহলে কি হবে? ঘনত্ব কমবে। তাই নয় কি? অতএব প্রচুর পানি পান করতে হবে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১/২২৫ নম্বর ঘোষণায় ডায়াবেটিসকে দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা মানবদেহে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে শনাক্ত করা হয় মিসরে। এর নাম দেওয়া হয় 'অতি দ্রুত মূত্র শেষ'। অনেকটা একই সময়ে ভারতে এই রোগ শনাক্ত হয়। যার নাম রাখা হয় মধুমেহ অর্থাৎ মধুমূত্র। ডায়াবেটিস রোগীর মূত্রে পিপড়া ভিড় জমায় বলেই এই নামকরণ। যা হোক, ডায়াবেটিস অনেকটাই উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া রোগ। তাই রোগ হয়ে গেলে তো কিছু করার নেই। যা করার আছে তা হলো নিয়ম মেনে চলা।
জাহাঙ্গীর হোসেন

No comments

Powered by Blogger.