ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ বাংলাদেশকে মরুকরণের প্রকল্প
ভারতীয় পানি আগ্রাসনের সর্বগ্রাসী প্রকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বিশেষজ্ঞ মহল কতৃক চিহ্নিত হয়েছে। আজ সোমবার দেশটির সুপ্রিমকোর্টও এই পরিবেশবিনাশী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, টিপাই বাঁধ ভারতীয় সরকারের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পেরই একটা অংশ মাত্র। ভারতীয় নদী সংযোগ প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটা অঞ্চল নয় গোটা বাংলাদেশই মরুকরণের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে।
প্রকল্পের বিশাল অবয়বের কারণে অনেকে এর নাম দিয়েছে মেগা প্রজেক্ট। এ প্রকল্পের আওতায় ভারতের ৩৮টি নদ-নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ঘটানো হবে। নদ-নদীগুলোর সংযোগ সাধনে ৩০টি সংযোগ খাল কাটা হবে। পাশাপাশি ছোট-বড় ৩৪টি এবং ৭৪টি বড় জলাধার নির্মাণ করা হবে।
সংযোগ খালের মাধ্যমে গঙ্গা থেকে পানি নিয়ে যাওয়া হবে গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান, তামিলনাডু প্রভৃতি এলাকায়। এতে গঙ্গাতে যে পানি সংকট হবে তা পূরণ করা হবে ব্রহ্মপুত্রের পানি দিয়ে। এভাবে মোট ১৭৪ কিউসেক পানি খরা অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের পানির উচ্চতা গঙ্গা ও অন্যান্য নদী থেকে অনেক নিচু। তাই এখানকার পানি পাঁচটা ধাপে ১০০ মিটার উঁচুতে তুলতে হবে। এজন্য লাগবে শত শত পাওয়ার পাম্প, আর এগুলো চালু রাখার জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের ব্যয় এর অনেকগুণ বেশি হবে, তা এক পর্যায়ে ৫ শত বিলিয়ন ডলারকেও (৩৫ লক্ষ কোটি টাকার অধিক) ছাড়িয়ে যাবে। এর সঙ্গে যোগ হবে প্রকল্পের পরিচালনা ও আনুষাঙ্গিক খরচ।
নদী সংযোগ প্রকল্পের প্রথম প্রস্তাব নিয়ে আসেন ড. কেএল রাও। ১৯৮৭ সালে ভারত সরকারের গৃহীত জাতীয় পানি নীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল জাতীয় নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম ২০০২ সালের ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা দিবসে যে ভাষণ দেন তাতেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকটি বেশ গুরুত্ব পায়। ২০৪৩ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সীমা নির্ধারিত হলেও পরে তা স্থির করা হয় ২০১৬। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বাংলাদেশের কাছে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল খননের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এর ফলে অনেক নদী স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন ও প্রায় চার কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়াসহ বহুবিধ মানবিক-প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কায় বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করে। ওই সময়কার ভারতীয় প্রস্তাব বর্তমানে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে বাস্তবায়নাধীন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, নদী সংযোগ প্রকল্পের প্রস্তাবিত সংযোগ খালের প্রস্থ হবে ১০০ মিটার এবং গভীরতা ১০ মিটার। এ মাপের একটা খাল এক লাখ বা এক লাখ ৪০ হাজার কিউসেক পানি বহন করতে পারে। অথচ শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার সর্বনিম্ন গড় প্রবাহ হল ৬০ হাজার কিউসেক অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ১ লাখ ১০ হাজার কিউসেক। এ থেকে স্পষ্ট হয়, কলকাতা বন্দর বাঁচাতে গিয়ে পদ্মা যে দশা বরণ করেছে ভারতীয় শাসকদলের পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতকে শস্য-শ্যামল করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রেরও একই দশা হবে। তার শাখা নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মরে যাবে। মরুকরণ শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলেই নয়, উত্তরবঙ্গসহ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, ব্রহ্মপুত্রের পানির উপর শুধু উত্তরাঞ্চলের ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদীই নয় মধ্যাঞ্চলের (ঢাকা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি) পুরনো ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা এমনকি নিম্ন মেঘনা (চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভোলা) অববাহিকার নদীগুলোও নির্ভরশীল।
পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোতই নিম্ন মেঘনা নামে পরিচিত। আর শুষ্ক মৌসুমে এর পানি প্রবাহের ৯০ ভাগ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পরিণামে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে গেলে সারাদেশে মরুকরণের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প, পরিবহন, নদীর তীর ভাঙনসহ আরো বিভিন্ন পর্যায়ে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।
প্রকল্পের বিশাল অবয়বের কারণে অনেকে এর নাম দিয়েছে মেগা প্রজেক্ট। এ প্রকল্পের আওতায় ভারতের ৩৮টি নদ-নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ঘটানো হবে। নদ-নদীগুলোর সংযোগ সাধনে ৩০টি সংযোগ খাল কাটা হবে। পাশাপাশি ছোট-বড় ৩৪টি এবং ৭৪টি বড় জলাধার নির্মাণ করা হবে।
সংযোগ খালের মাধ্যমে গঙ্গা থেকে পানি নিয়ে যাওয়া হবে গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান, তামিলনাডু প্রভৃতি এলাকায়। এতে গঙ্গাতে যে পানি সংকট হবে তা পূরণ করা হবে ব্রহ্মপুত্রের পানি দিয়ে। এভাবে মোট ১৭৪ কিউসেক পানি খরা অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের পানির উচ্চতা গঙ্গা ও অন্যান্য নদী থেকে অনেক নিচু। তাই এখানকার পানি পাঁচটা ধাপে ১০০ মিটার উঁচুতে তুলতে হবে। এজন্য লাগবে শত শত পাওয়ার পাম্প, আর এগুলো চালু রাখার জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের ব্যয় এর অনেকগুণ বেশি হবে, তা এক পর্যায়ে ৫ শত বিলিয়ন ডলারকেও (৩৫ লক্ষ কোটি টাকার অধিক) ছাড়িয়ে যাবে। এর সঙ্গে যোগ হবে প্রকল্পের পরিচালনা ও আনুষাঙ্গিক খরচ।
নদী সংযোগ প্রকল্পের প্রথম প্রস্তাব নিয়ে আসেন ড. কেএল রাও। ১৯৮৭ সালে ভারত সরকারের গৃহীত জাতীয় পানি নীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল জাতীয় নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম ২০০২ সালের ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা দিবসে যে ভাষণ দেন তাতেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকটি বেশ গুরুত্ব পায়। ২০৪৩ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সীমা নির্ধারিত হলেও পরে তা স্থির করা হয় ২০১৬। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বাংলাদেশের কাছে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল খননের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এর ফলে অনেক নদী স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন ও প্রায় চার কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়াসহ বহুবিধ মানবিক-প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কায় বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করে। ওই সময়কার ভারতীয় প্রস্তাব বর্তমানে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে বাস্তবায়নাধীন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, নদী সংযোগ প্রকল্পের প্রস্তাবিত সংযোগ খালের প্রস্থ হবে ১০০ মিটার এবং গভীরতা ১০ মিটার। এ মাপের একটা খাল এক লাখ বা এক লাখ ৪০ হাজার কিউসেক পানি বহন করতে পারে। অথচ শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার সর্বনিম্ন গড় প্রবাহ হল ৬০ হাজার কিউসেক অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ১ লাখ ১০ হাজার কিউসেক। এ থেকে স্পষ্ট হয়, কলকাতা বন্দর বাঁচাতে গিয়ে পদ্মা যে দশা বরণ করেছে ভারতীয় শাসকদলের পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতকে শস্য-শ্যামল করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রেরও একই দশা হবে। তার শাখা নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মরে যাবে। মরুকরণ শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলেই নয়, উত্তরবঙ্গসহ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, ব্রহ্মপুত্রের পানির উপর শুধু উত্তরাঞ্চলের ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদীই নয় মধ্যাঞ্চলের (ঢাকা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি) পুরনো ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা এমনকি নিম্ন মেঘনা (চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভোলা) অববাহিকার নদীগুলোও নির্ভরশীল।
পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোতই নিম্ন মেঘনা নামে পরিচিত। আর শুষ্ক মৌসুমে এর পানি প্রবাহের ৯০ ভাগ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পরিণামে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে গেলে সারাদেশে মরুকরণের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প, পরিবহন, নদীর তীর ভাঙনসহ আরো বিভিন্ন পর্যায়ে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।
No comments