কাজ শুরু হয়নি অথচ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা-পথ হারিয়েছে চার বড় প্রকল্প by আনোয়ার হোসেন
যোগাযোগ খাতের চার বড় প্রকল্পের তিনটিরই কাজ শুরু করতে পারেনি সরকার। পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ আটকে আছে, মেট্রোরেল ও উড়ালসড়ক প্রকল্প এখনো কাগজে-কলমে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করার কাজ চললেও গতি অত্যন্ত কম। বলা যায়, পথ হারিয়েছে এই চার প্রকল্প।
কাজ শুরু না হলেও প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে ১৬ হাজার ৪৮০ কোটি টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে চার মেগা প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় এখন প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। সময়মতো কাজ শুরু হচ্ছে না বলে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এই চারটিই ছিল সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর মধ্যে উড়ালসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ২০১৩ সালের মধ্যে, মেট্রোরেল ২০১৪ সালের মধ্যে এবং পদ্মা সেতু ২০১৫ সালে চালুর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও এই চার প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ রহমত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, চারটি প্রকল্পই দেশের অর্থনীতির জন্য ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে কাজ করবে। সময়মতো হয়নি বলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কেন হচ্ছে না, সেটা খুঁজে বের করে আর যেন খরচ না বাড়ে, সে চেষ্টাই করা উচিত।
ব্যয় বাড়ছে: ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা বা ১৪৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় এখন ২২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বা ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
একইভাবে মেট্রোরেল প্রকল্পেরও এক বছরের ব্যবধানে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। গত বছর মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, তাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৭০ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
চার প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা: পদ্মা সেতু নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে একটি খসড়া তৈরি করেছে সেতু বিভাগ। আগামী এক মাসের মধ্যে অবশ্য সমঝোতা সই হবে না বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকারের ঠিক করে দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠান অর্থ জোগাড় এবং নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ৩০ মাস সময়সীমা চেয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু সেতু বিভাগ বলছে, এটা ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে করার জন্য। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। পাশাপাশি অবশ্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বিশ্বব্যাংককে দেওয়া হতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রকল্পে অর্থ দেওয়া স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করার কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদার নিয়োগের ২৫ মাস পর প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রো করপোরেশন, বাংলাদেশের রেজা কনস্ট্রাকশন এবং আল আমিন-তাহের ব্রাদার্স (যৌথ) এই তিনটি কোম্পানিকে চার লেনের কাজ করতে এক হাজার ১৬৫ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব এবং প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি না পাওয়ায় কাজে গতি নেই বলে সূত্র জানায়।
বিমানবাহিনীর আপত্তি মেনেই সরকার সংসদ ভবনের পাশ ঘেঁষে মেট্রোরেলের পথ ঠিক করেছে। তার পরও কাজ শুরু করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী জাপানি সংস্থা জাইকা শর্ত দিয়েছে—মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট করপোরেশন (ডিএমটিসি) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা করতে বলেছে। এর জন্য চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এখনো এই প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি।
ঢাকা উড়াল সড়ক প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) করার জন্য গত বছর জানুয়ারি মাসে সরকার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়। গত বছর এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখনো সেই উদ্বোধন পর্যন্তই।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু এখনো কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি ঋণ জোগাড় করতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী, সরকার জমি দেওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এখনো জমি দিতে পারেনি। ফলে দুই পক্ষের সমঝোতায় ছয় মাস পর কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সূত্র জানায়, ছয় মাসেও এই সমস্যার সমাধান হবে না।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও মেট্রোরেল প্রকল্পের সমস্যার পর্যায় পার করে এসেছেন তাঁরা। এখন কাজ দেখানোর পালা। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, সময় বাড়লে তো ব্যয় বাড়বেই। তবে সবকিছুই চুলচেরা হিসাব করে হয়।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এই চারটিই ছিল সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর মধ্যে উড়ালসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ২০১৩ সালের মধ্যে, মেট্রোরেল ২০১৪ সালের মধ্যে এবং পদ্মা সেতু ২০১৫ সালে চালুর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও এই চার প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ রহমত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, চারটি প্রকল্পই দেশের অর্থনীতির জন্য ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে কাজ করবে। সময়মতো হয়নি বলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কেন হচ্ছে না, সেটা খুঁজে বের করে আর যেন খরচ না বাড়ে, সে চেষ্টাই করা উচিত।
ব্যয় বাড়ছে: ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা বা ১৪৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় এখন ২২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বা ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
একইভাবে মেট্রোরেল প্রকল্পেরও এক বছরের ব্যবধানে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। গত বছর মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, তাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৭০ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
চার প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা: পদ্মা সেতু নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে একটি খসড়া তৈরি করেছে সেতু বিভাগ। আগামী এক মাসের মধ্যে অবশ্য সমঝোতা সই হবে না বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকারের ঠিক করে দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠান অর্থ জোগাড় এবং নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ৩০ মাস সময়সীমা চেয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু সেতু বিভাগ বলছে, এটা ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে করার জন্য। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। পাশাপাশি অবশ্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বিশ্বব্যাংককে দেওয়া হতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রকল্পে অর্থ দেওয়া স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করার কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদার নিয়োগের ২৫ মাস পর প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রো করপোরেশন, বাংলাদেশের রেজা কনস্ট্রাকশন এবং আল আমিন-তাহের ব্রাদার্স (যৌথ) এই তিনটি কোম্পানিকে চার লেনের কাজ করতে এক হাজার ১৬৫ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব এবং প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি না পাওয়ায় কাজে গতি নেই বলে সূত্র জানায়।
বিমানবাহিনীর আপত্তি মেনেই সরকার সংসদ ভবনের পাশ ঘেঁষে মেট্রোরেলের পথ ঠিক করেছে। তার পরও কাজ শুরু করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী জাপানি সংস্থা জাইকা শর্ত দিয়েছে—মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট করপোরেশন (ডিএমটিসি) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা করতে বলেছে। এর জন্য চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এখনো এই প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি।
ঢাকা উড়াল সড়ক প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) করার জন্য গত বছর জানুয়ারি মাসে সরকার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়। গত বছর এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখনো সেই উদ্বোধন পর্যন্তই।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু এখনো কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি ঋণ জোগাড় করতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী, সরকার জমি দেওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এখনো জমি দিতে পারেনি। ফলে দুই পক্ষের সমঝোতায় ছয় মাস পর কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সূত্র জানায়, ছয় মাসেও এই সমস্যার সমাধান হবে না।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও মেট্রোরেল প্রকল্পের সমস্যার পর্যায় পার করে এসেছেন তাঁরা। এখন কাজ দেখানোর পালা। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, সময় বাড়লে তো ব্যয় বাড়বেই। তবে সবকিছুই চুলচেরা হিসাব করে হয়।
No comments