চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ-স্বপ্ন ও বাস্তব সমদূরত্বেই চলবে?
প্রায় এক বছর আগে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন ঝিলংজায় কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাটকীয় উন্নতি ঘটবে, দেশবাসীর এমন প্রত্যাশা জোরালো হয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করায়। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে।
এখান থেকে দেশের প্রধান পর্যটন ও মৎস্যসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মিত হলে যাত্রী নিয়ে ভাবনা নেই_ এক বছরেই ১০ লাখের বেশি যাত্রী ব্যবহার করবে এ রুট। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। কক্সবাজার এবং আশপাশের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে গোটা দেশের মানুষের যাতায়াতের দুর্ভাবনা অনেকটাই কেটে যাবে। একই সঙ্গে এ রেলপথ হয়ে উঠবে ট্রান্স-এশিয়া রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ_ ভারত থেকে বাংলাদেশের দর্শনা-বঙ্গবন্ধু সেতু-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে রেলগাড়ি চলে যাবে মিয়ানমার ও চীনসহ আরও ডজন দুই দেশে। কিন্তু বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষের কারণে স্বপ্ন আর বাস্তব যেন রেললাইনের মতোই সমান্তরাল ধারায় বয়ে চলেছে। একের সঙ্গে অপরটি চলেছে সমদূরত্ব বজায় রেখে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ব্যয়বহুল_ অন্তত প্রথম পর্যায়েই সাড়ে ১৮শ' কোটি টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা প্রকল্প দু'দফায় বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। এ কারণে প্রথম ধাপের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রায় দেড় হাজার একর জমির অধিগ্রহণ শুরুই করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে খাত এখন পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় এবং প্রাজ্ঞ ও উদ্যমী রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রয়েছেন এর দায়িত্বে। আমরা আশা করব, অর্থের জোগান নিশ্চিত করা এবং আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করায় তিনি তৎপর হবেন। জাতীয় বাজেটের সামর্থ্য সীমিত। এ কারণে শর্তযুক্ত হলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের বিকল্প নেই। তবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ যেহেতু ট্রান্স-এশিয়া আন্তর্জাতিক রেলপথের অংশ, এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। এর প্রতিশ্রুতিও ছিল। কেন তাতে বিঘ্ন ঘটল, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের কাজ শুরুর পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ নিয়ে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে তার বাস্তবায়নের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীরা এ পথের গোটা অংশে ডাবল লাইন স্থাপনের জন্য বারবার অঙ্গীকার করেছেন। অতিসম্প্রতি রেলমন্ত্রী তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় রাজধানীর সঙ্গে চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার কমিয়ে আনতে আখাউড়া-বাইপাস লাইন নির্মাণের কথা বলেছেন। দুটি গুরুত্বপূর্ণ নগরের মধ্যে রেলগাড়ি চলবে ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎশক্তিতে_ এমন আশ্বাসও মিলেছে বহুবার। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের রেলওয়ে খাত বড় ধরনের লোকসানি। এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলা কিছু পথে গাড়ি চালালে চলবে না, সেটা জানা কথা। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে আধুনিক রেলপথ গড়ে তুলতেই হবে। রেল চলাচলের সুবিধাসহ পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো এবং বিশেষভাবে মংলা সমুদ্র ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটাও তো এখন স্বপ্ন। যোগাযোগ ও রেলওয়ে দফতরের দুই নতুন মন্ত্রী এ স্বপ্ন পূরণে
কার্যকর কিছু করে দেখাবেন কি?
কার্যকর কিছু করে দেখাবেন কি?
No comments