ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কের জন্য

[বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ভারত সফর শেষে স্বদেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ বন্ধ করা, তিস্তার পানি বণ্টন, অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পাঠানো এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে দেশে আনার বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। তার দৃষ্টিতে সফর সফল হয়েছে।


বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়া কী ভাবছে? ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক 'দি টাইমস অব ইন্ডিয়া' সোমবার এ ব্যাপারে মন্তব্য প্রকাশ করেছে।]
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার দৃঢ়তার সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নয়াদিলি্লতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন দিনের বৈঠক শেষে তারা দু'দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক গতিবেগ সৃষ্টিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর উন্নত হতে থাকে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী উগ্রবাদী শক্তিগুলোকে দমনাভিযান চালানোর মাধ্যমে দু'দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা ক্ষেত্রই কেবল প্রসারিত হয়নি, এর সঙ্গে উভয়পক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলারে পেঁৗছে। তবে এখনও পানি বণ্টন ও সীমান্তে গুলিবর্ষণের মতো ঘটনা দু'দেশের সম্পর্কে অস্বস্তির কারণ হয়ে রয়েছে। নয়াদিলি্ল যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত করার ব্যাপারে ঢাকাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা অভিনন্দনযোগ্য। তবে অবশ্যই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন দেওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুর মতো বিষয় নিষ্পত্তির মাধ্যমে এসব আশ্বাসকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে।
বলা হয়ে থাকে যে, উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিরাট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করতে পারে। অপরদিকে, ভারতের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পাঁচ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের শতাধিক কোম্পানির বাংলাদেশে দৃশ্যমান উপস্থিতি রয়েছে এবং আরও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ। তবে বাংলাদেশে 'সিয়েট'-এর প্রথম টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানা এবং সাহারা ইন্ডিয়ার ৮০ হাজার কোটি রুপির নতুন ঢাকা প্রকল্প মানুষে মানুষে বৃহত্তর যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে গতি সঞ্চারের প্রয়োজন রয়েছে। অধিকন্তু বাণিজ্যিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিথিল ভিসা প্রটোকল এখন সময়ের দাবি। এই সুবর্ণ মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ঢাকা ও নয়াদিলি্লর দু'দেশের বন্ধুত্বকে অপরিবর্তনীয় করে তোলা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.