ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-শীর্ষ ছোঁয়া ছয় by রাকিব মোজাহিদ
স্বাভাবিক নিয়মেই সারা দিন ক্লাস শেষে যানজট পেরিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতে হতো তাঁকে। ক্লান্তি কাটিয়ে সন্ধ্যায় যখন পড়তে বসতেন, বিদ্যুৎ চলে গেল। সব আয়োজন মাটি। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটত। তাই বাসার মায়া ছেড়ে উঠলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। লক্ষ্য একটাই—পড়তে হবে, জানতে হবে। শুরু হলো জোরসে পড়াশোনা। সফলতাও এল।
প্রথম বর্ষে প্রথম হলেন; তাও আবার শতকরা ৭২ নম্বর নিয়ে। বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শফিউল ইসলামের কথা।
কীভাবে এল এই ফল জানতে চাইলে শফিউল জানান, ‘পড়তেই যেহেতু চেয়েছিলাম, তাই পুরো সময় উৎসর্গ করেছিলাম পড়াশোনার জন্য।’
এ তো গেল শফিউলের কথা। আর বাকি যাঁরা ২০০৮ ও ২০০৯-এ স্নাতক সম্পন্ন করে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে বলার আগে জানিয়ে দিই কাদের দেওয়া হচ্ছে এই অ্যাওয়ার্ড।
যে শিক্ষার্থী কোনো মানোন্নয়ন পরীক্ষা ছাড়া ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, সেই সঙ্গে ৮০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন, অর্থাৎ সবচেয়ে নিয়মিত ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন এই অ্যাওয়ার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ায়েজ খান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বি এস সাইফ আনসারী ও নাজির সালেহীন ফলিত পদার্থ এবং ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সুরজিৎ সিনহা ও উমর ফারুক। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন।
প্রথম সেমিস্টারে প্রথম হওয়াটা কাকতালীয় ছিল সাইফ আনসারীর জন্য। বললেন, ‘প্রথম সেমিস্টারের যেদিন ফলাফল ঘোষণা হয়, সেদিন ক্লাসে স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আচ্ছা, বলো তো, তোমাদের মধ্যে কে এই সেমিস্টারে প্রথম হতে পারে?” যারা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, এমনকি দশম হয়েছে, তাদের সবার নামই বলছিল সবাই, শুধু আমার নামটা বাদে। পরে স্যার বললেন, “নাম তো অনেকের বললে, কিন্তু যে প্রথম হয়েছে, তার নামটা শুধু বলোনি। সে হলো সাইফ আনসারী।” ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু এত ভালো ফল প্রত্যাশিত ছিল না।’ কেমন করে হতো পড়াশোনা জানতে চাইলে বলেন, ‘ইন্টারনেটে প্রচুর গেমস খেলতাম। প্রথমদিকে মোটেও এত তোড়জোড়ে পড়াশোনা হতো না। তবে যেটুকু করতাম, বেশির ভাগই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়ার চেষ্টা করতাম। ফলে যেটা হতো, পরীক্ষার খাতায় অনেক আপডেট ইনফরমেশন লিখতে পারতাম। এতে অনেক সহজেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব হতো।’ একটি বিষয়ে সুরজিৎ বলেন, ‘আমি তখন জগন্নাথ হলে থাকতাম। ফলে পড়াশোনার সুযোগ ছিল কম, তবে প্রথম থেকে একটা গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছিলাম। তাই ভালো করার রাস্তাটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।’ বিষয়টা গাণিতিক, তাই অনেক সহজ ছিল নাজির সালেহীর জন্য। ফার্স্ব ডিভিশন লিগে খেলা এই দাবাড়ু বলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্সে তো লজিক্যাল বিষয় বেশি পড়তে হয়, আর আমার এসব বিষয় পড়তেই ভালো লাগে। এই ভালো লাগা থেকেই ভালো ফল।’
ভালো লাগার কথা উঠতেই শফিউল বলেন, ‘কেমিস্ট্রি তো একটা মজার বিষয় নয়। তাই নিজেকে অতটা উৎসর্গ করতে পারিনি। যতটা না আপনাদের স্বপ্ন নিয়ে পাতায় ছাপা “ব্রেন অব কোরিয়া” এনামুল নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।’ এর সঙ্গে যুক্ত করে ওয়ায়েজ বলেন, ‘কেউ কেউ জন্মগতভাবে মেধাবী আবার কেউ পরিশ্রম করে এই মেধা অর্জন করেন। এ ক্ষেত্রে বুয়েটে যাঁরা পড়েন তাঁরা যেমন মেধাবী, সেই সঙ্গে তাঁদের পরিশ্রমীও করে তোলা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ থেকে পড়তে হয়। ফলে নিজেকে করা উৎসর্গ বলুন আর যা-ই বলুন, যেন সেটা আসতে হয় নিজের ভেতর থেকে।
উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কেমন চলছে? এ প্রশ্নের জবাবে উমর ফারুক জানান, এমএসের পাশাপাশি গবেষণার কাজ চলছে, যাতে মানসম্মত জার্নাল প্রকাশ করতে পারি। যেটা দেশের বাইরে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পতে সাহায্য করবে।
No comments