যিনি সাজান যিনি পরান-তিনি কেমন ঈদ কাটান?-সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: তৌহিদা শিরোপা

ঈদের দিনেই যেন নিজেরজন্য সময় পাই —কানিজ আলমাস খান ঈদের দিন একান্তই নিজের মতো করে কাটান তিনি। সারা বছরের ব্যস্ততা থেকে একটু যেন নিজের জন্য সময় পান। ফলে পুরো দিনটাকে খুব উপভোগ করেন। মানুষটি হলেন পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। তাঁর ঈদ মূলত শুরু হয় চাঁদরাত থেকেই।


‘রোজার শুরু থেকেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শেষের সাত দিন। প্রচণ্ড চাপ থাকে পারসোনা পরিবারে। সেসব সামলিয়ে ঈদের আগে রাতে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। এরপর সোজা রান্নাঘরে। কিছু রান্না আগের দিনেই সেরে ফেলি। তা না হলে ঈদের দিন বেশ চাপ পড়ে যায়। কোনো রান্নার হয়তো প্রাথমিক প্রণালি তৈরি করে রাখি। আর ঈদের দিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ি। যদিও মনে হয় আরেকটু বিশ্রাম নেই।’ বলেন কানিজ আলমাস খান।
‘সাংসারিক দিন কাটাই ঈদের দিন। সকালে বাকি রান্না শেষ করি। এরপর শুরু হয় গৃহসজ্জা। ঘর সাজাতে-গোছাতে পছন্দ করি। বসার ঘর, খাবার টেবিল মনের মতো করে সাজিয়ে থাকি। অতিথিরা আসতে থাকে। তাদের আপ্যায়ন করি। এরই এক ফাঁকে হয়তো নিজে তৈরি হয়ে নেই। আমার স্বামী ও মেয়ে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ে। ওদের জন্য কেনাকাটা আমি করি। নিজের জন্য কখনো কিছু কেনা হয় না। এবার অবশ্য মেয়ে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে। ভেবেছি এই ঈদে মেয়ের দেওয়া শাড়িটিই পরব। সবাই নিজেকে ঈদের দিন অন্যভাবে সাজাতে চায়। কিন্তু সারা বছর এত সাজগোজের ভেতর থাকতে হয় যে এই দিন খুব সাধারণ থাকি। আমার মেয়েটাও সাধারণ থাকতে পছন্দ করে। হয়তো আমাকে বলে চোখটাকে একটু সাজিয়ে দাও। অতটুকুনই আবদার। শ্বশুরবাড়ি-মায়ের বাড়ি থেকে আত্মীয়রা বেড়াতে আসে। সন্ধ্যার পরে একটু ঘুরতে বের হই। মায়ের বাসায় যাই। রাতের খাবার সেখানেই খাওয়া হয়। ছেলেবেলার ঈদগুলোর কথা বেশি মনে পড়ে। সে সময় ছেলেদের সেলুনে গিয়ে চুল কাটিয়ে আনত আমাকে। একটু বড় হওয়ার পর বোনদের সঙ্গে বিউটি পার্লারে গিয়ে চুল কাটিয়েছি। তবে সব ঈদেই একটা বিষয় উপভোগ করি—ঈদের সালামি। ছেলেবেলায়ও পেতাম, এখনো পাই। তবে সালামি দেওয়া হয় তার থেকে অনেক বেশি। খুব ভালো লাগে। কেননা পাওয়ার থেকে দেওয়ার আনন্দটা অনেক বেশি। ঈদের দিন কখনো দেশের বাইরে কাটানো হয় না। বেড়ানোর কোনো পরিকল্পনা থাকলে ঈদের পরে করা হয়। এই দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতেই ভালো লাগে।’

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো হয়
—মাহিন খান
‘ঈদের আমেজটা রোজার আগেই শুরু হয় আমার কাছে। নতুন নতুন নকশা, উপকরণ বা কাটিং নিয়ে ভাবনা; সেসব তৈরি—এমন নানা ব্যস্ততা থাকে মাসজুড়ে। তবে ক্রেতাদের বেশি আনাগোনা হয় ঈদের আগের রাতে। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করেন তাঁরা। ফলে আমাদের ওপরও চাপ পড়ে। মায়াসিরের পুরো দল এসব সামলায় প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। তাই ঈদের দিন শরীরে বেশ ক্লান্তি ভর করে।’ মায়াসিরের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খানের কাছে ঈদ তাই ভিন্ন আবেদন নিয়ে আসে এখনো। ‘ঈদের দিন ক্লান্ত থাকলেও সকালেই ঘুম থেকে উঠি। ঘরের সব ঠিক আছে কি না তদারক করি। সকালের নাশতা পরিবারের পছন্দমতো আয়োজন করি। আমার ছেলে তার বাবার সঙ্গে নামাজে যায়। এদিকে আমার মেয়েও ঈদের দিনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। সন্তানদের জন্য রোজার শুরু থেকেই কেনাকাটা করতে থাকি। আমার ডিজাইন করা পোশাক পরে মেয়ে। পছন্দ না হলে হয়তো পাল্টিয়ে নেয়। আর আমার স্বামীর দেওয়া শাড়িটাই সাধারণত ঈদের দিন পরা হয়।’—বলেন মাহিন খান।
স্বামী-ছেলে নামাজ থেকে ফিরলে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের অনেক কাছের মানুষ আছেন, যাঁদের সঙ্গে সারা বছর ব্যস্ততার কারণে দেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। ঈদের দিনটিকেই তাই বেছে নেন শুধু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে। মাহিন খান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, জীবনে বড় হতে হলে মানুষের আশীর্বাদ লাগে। পারিবারিক বন্ধনগুলোকে মজবুত করার সুযোগ করে দেয়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতিই আসল কথা। দুপুরে বাসায় খাবার খাওয়া হয় না। ঘুরতে ঘুরতে যেকোনো আত্মীয়ের বাসায় খেয়ে নিই। আর কোথাও বেশিক্ষণ সময় কাটানো হয় না। এতজনের সঙ্গে দেখা করতে হয়। তবে রাতে সবাইকে নিয়ে খুব কাছের মানুষের সঙ্গে একটা পুনর্মিলনীর আয়োজন করি। কখনো আমার বাসায়, কখনো অন্য কারও বাসায়। আড্ডা, খাওয়া— ঈদের দিনটা এভাবেই কেটে যায়। কিন্তু ছোটবেলার ঈদ অন্য রকম ছিল। বাটা থেকে স্যান্ডেল কিনতাম। সেটা বিছানায় নিয়ে বারবার দেখতাম। দর্জিবাড়ি গিয়ে পোশাক বানানো। সেসব দিনের কথা মনে পড়ে। আর চাঁদরাতে গাছ থেকে মেহেদির পাতা ছিঁড়ে মিহি করে বেঁটে নিতাম। আমার দাদি গোল গোল নকশা করে হাতে পরিয়ে দিতেন। সেই আনন্দটা এখন পাই না। আনন্দের ধরন বদলে গেছে। মায়াসিরের পোশাক পরা কাউকে ঈদের দিন দেখলাম—ব্যস, নিমেষে মনটা ভালো হয়ে যায়। আর সন্তানের খুশির মধ্যেই নিজের ঈদের আনন্দ খুঁজে পাই।’

No comments

Powered by Blogger.