'জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে' by আনোয়ারা সৈয়দ হক
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রেসক্লাবে আয়োজিত একটি সমাবেশে সম্প্রতি বলেছেন, দেশে বর্তমান সরকারের নারীনীতি বাস্তবায়িত হলে 'জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে'। কারণ নারীনীতিতে পিতৃপরিচয় নয়, মাতৃপরিচয়ের কথা বলা হয়েছে।
আমিনী বহু দিন ধরে দেশের নারীদের নিয়ে নানা রকম মাথাব্যথায় পীড়িত হয়ে আছেন। বিশেষ করে নারীর সতীত্ব নিয়ে নিয়ে বড় উদ্বিগ্ন হয়েছেন। নারীর অধিকার যেটা ইসলামে স্বীকৃত, সেটাও তিনি পারলে নাকচ করে দেন। আগে নারীরা অশিক্ষিত ছিল, এখন শিক্ষাপ্রাপ্ত হচ্ছে। নিজের ঘর-সংসার এবং মা-বাবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছে। সমাজের যে দায়িত্ব ছেলেদের পালন করার কথা, সেটাও তারা আজকাল নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। নারীরা স্বাধীন ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে, যে ধরনের ব্যবসা আমাদের নবীর স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা.) তাঁর জীবদ্দশায় প্রায় এক হাজার পাঁচ শ বছর আগে করে গেছেন। যে নারী জাতিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বারবার মায়ের সম্মান দান এবং ভক্তির কথা বলে গেছেন, সেই নারী জাতির প্রতি মুফতি আমিনীর এ রকম বিশ্বাস এবং আস্থা দেখে আমাদের দেশের নারীরা মোটেই আশ্চর্য হননি। কারণ নারীর প্রতি বিশ্বাস এবং ভক্তি মানুষের ছেলেবেলা থেকে, যখন সে মাতৃক্রোড়ে, তখন থেকেই জন্ম নেয়। মিস্টার আমিনীর ছেলেবেলায় নিশ্চয়ই এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তিনি নারীকে স্বৈরিণীর ভূমিকায় দেখেছেন এবং সেই ভূমিকার কথা তাঁর মন থেকে এখনো মুছে যায়নি।
মিস্টার আমিনী হয়তো এ কথা জানেন না, নারীকে বোরখার আড়ালে ঢেকে রাখলেও এবং তাঁর পায়ে শিকল পরালেও সে ইচ্ছা করলে প্রতিবছর জারজ সন্তান পয়দা করতে সক্ষম। এমনকি এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায় যে পৃথিবীর কোনো পুরুষই আজ পর্যন্ত জানেন না তাঁদের প্রকৃত জনক বা বাবা কে! একমাত্র মায়েরাই জানেন তাঁদের সন্তানের প্রকৃত জনক কে। তবুও সেই মায়ের চরণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার করে ভালোবাসা এবং ভক্তি নিবেদনের কথা বলে গেছেন। কারণ ইসলামের মূল কথা হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবী এক চুলও নড়তে পারে না, সামনে এগোতে পারে না। ছেলেবেলা থেকে মিস্টার আমিনীর সেই বিশ্বাসেই কোথাও চোট খেয়ে গেছেন, সেই অবরুদ্ধ মানসিক জটিলতা থেকে তিনি আর বেরোতে পারছেন না। এখন এই বয়সে এসে আমি দিব্যচোখে দেখছি, ভবিষ্যতে এসব তথাকথিত পীরের সঙ্গেই দেশের নারীদের টক্কর বাধবে। নারীরা আমিনীর মতো মানুষের চোখের সামনে দিয়ে তর তর করে এগিয়ে যাবেন সামনে আর আমিনীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পিকেটিং করবেন নারীরা যাতে ঘর থেকে বেরোতে না পারে। কারণ আমিনীর মতো মানুষরা মনে করেন, নারীর জারজ সন্তান উৎপাদন বন্ধ করতে হলে নারীকে বন্দি করে রাখতে হবে ঘরের চার দেয়ালের ভেতর। তাই মিস্টার আমিনীর বিশেষ অবগতির জন্য জানাই, নারীর অধিকাংশ অবৈধ সন্তান জন্ম হয় ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই, ঘরের বাইরে নয়। এ খবর বারবার বিভিন্ন সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে। আমি যখন এ দেশের বিভিন্ন ব্রথেলে গিয়ে নারীদের জিজ্ঞেস করেছি, কেন সে মুসলিম গৃহস্থ ঘরের মেয়ে হয়েও বেশ্যালয়ে এসে হাজির হয়েছে? অধিকাংশ মেয়েই বলেছে, তারা তাদের নিকটাত্মীয়স্বজনের দ্বারা উৎপীড়িত হয়েই ঘর ছেড়েছে। সুতরাং মিস্টার আমিনীদের মতো মানুষকে বুঝতে হবে, মায়ের পরিচয়ই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়। এখানে মিস্টার আমিনীর মতো মানুষের কোনো কথা বলা সাজে না। বরং এ দেশের নারীরা এ কথা অবশ্যই বলতে পারে, মিস্টার আমিনী এত বছর ধরে যে রাজনীতি করছেন সেটি একটি জারজ রাজনীতি, কারণ বাঙালি হয়ে, গরিব বাংলা মায়ের ঘরে জন্ম নিয়ে, মাতৃভূমিতে উৎপাদিত সবুজ শস্যে পালিত হয়ে, হৃষ্টপুষ্ট হয়ে তিনি যে রাজনীতির পসরা খুলে বসেছেন_এ দেশে সেটি হলো পাকিস্তানের ঔরসে জন্ম নেওয়া এক রাজনীতি_যার সঙ্গে আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। আউল-বাউল, পীর-ফকির, মুর্শিদ, ভিখিরি, বেদে, সাপুড়েদের এই দেশ মায়ের সম্মান চিরকাল বজায় রেখে চলবে। সেখানে আমিনীর মতো মানুষের কোনো রোল নেই। কোনো মাতৃভূমিই আর যা-ই হোক, জারজ সন্তান চায় না। বর্তমান সরকার নারীদের সম্মানের আসনে তোলার চেষ্টা করে যে অবৈধ প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে_সে জন্য এই দেশের আট কোটি নারী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও মনোবিজ্ঞানী
মিস্টার আমিনী হয়তো এ কথা জানেন না, নারীকে বোরখার আড়ালে ঢেকে রাখলেও এবং তাঁর পায়ে শিকল পরালেও সে ইচ্ছা করলে প্রতিবছর জারজ সন্তান পয়দা করতে সক্ষম। এমনকি এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায় যে পৃথিবীর কোনো পুরুষই আজ পর্যন্ত জানেন না তাঁদের প্রকৃত জনক বা বাবা কে! একমাত্র মায়েরাই জানেন তাঁদের সন্তানের প্রকৃত জনক কে। তবুও সেই মায়ের চরণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার করে ভালোবাসা এবং ভক্তি নিবেদনের কথা বলে গেছেন। কারণ ইসলামের মূল কথা হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবী এক চুলও নড়তে পারে না, সামনে এগোতে পারে না। ছেলেবেলা থেকে মিস্টার আমিনীর সেই বিশ্বাসেই কোথাও চোট খেয়ে গেছেন, সেই অবরুদ্ধ মানসিক জটিলতা থেকে তিনি আর বেরোতে পারছেন না। এখন এই বয়সে এসে আমি দিব্যচোখে দেখছি, ভবিষ্যতে এসব তথাকথিত পীরের সঙ্গেই দেশের নারীদের টক্কর বাধবে। নারীরা আমিনীর মতো মানুষের চোখের সামনে দিয়ে তর তর করে এগিয়ে যাবেন সামনে আর আমিনীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পিকেটিং করবেন নারীরা যাতে ঘর থেকে বেরোতে না পারে। কারণ আমিনীর মতো মানুষরা মনে করেন, নারীর জারজ সন্তান উৎপাদন বন্ধ করতে হলে নারীকে বন্দি করে রাখতে হবে ঘরের চার দেয়ালের ভেতর। তাই মিস্টার আমিনীর বিশেষ অবগতির জন্য জানাই, নারীর অধিকাংশ অবৈধ সন্তান জন্ম হয় ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই, ঘরের বাইরে নয়। এ খবর বারবার বিভিন্ন সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে। আমি যখন এ দেশের বিভিন্ন ব্রথেলে গিয়ে নারীদের জিজ্ঞেস করেছি, কেন সে মুসলিম গৃহস্থ ঘরের মেয়ে হয়েও বেশ্যালয়ে এসে হাজির হয়েছে? অধিকাংশ মেয়েই বলেছে, তারা তাদের নিকটাত্মীয়স্বজনের দ্বারা উৎপীড়িত হয়েই ঘর ছেড়েছে। সুতরাং মিস্টার আমিনীদের মতো মানুষকে বুঝতে হবে, মায়ের পরিচয়ই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়। এখানে মিস্টার আমিনীর মতো মানুষের কোনো কথা বলা সাজে না। বরং এ দেশের নারীরা এ কথা অবশ্যই বলতে পারে, মিস্টার আমিনী এত বছর ধরে যে রাজনীতি করছেন সেটি একটি জারজ রাজনীতি, কারণ বাঙালি হয়ে, গরিব বাংলা মায়ের ঘরে জন্ম নিয়ে, মাতৃভূমিতে উৎপাদিত সবুজ শস্যে পালিত হয়ে, হৃষ্টপুষ্ট হয়ে তিনি যে রাজনীতির পসরা খুলে বসেছেন_এ দেশে সেটি হলো পাকিস্তানের ঔরসে জন্ম নেওয়া এক রাজনীতি_যার সঙ্গে আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। আউল-বাউল, পীর-ফকির, মুর্শিদ, ভিখিরি, বেদে, সাপুড়েদের এই দেশ মায়ের সম্মান চিরকাল বজায় রেখে চলবে। সেখানে আমিনীর মতো মানুষের কোনো রোল নেই। কোনো মাতৃভূমিই আর যা-ই হোক, জারজ সন্তান চায় না। বর্তমান সরকার নারীদের সম্মানের আসনে তোলার চেষ্টা করে যে অবৈধ প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে_সে জন্য এই দেশের আট কোটি নারী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও মনোবিজ্ঞানী
No comments