বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩২৭ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। এস এম মওলা, বীর প্রতীক দুঃসাহসী এক নৌকমান্ডো সহযোদ্ধা নৌকমান্ডোদের সঙ্গে এস এম মওলা (শফিকুন নূর মাওলা) সাঁতার কেটে যেতে থাকলেন সমুদ্রের গভীরে। পানির মধ্যে তাঁদের পায়ের ফিনস অনবরত ওঠানামা করছে।
এক ঘণ্টার বেশি সময় সাঁতরিয়ে তাঁরা মাথা তুলে তাকালেন লক্ষ্যস্থলের দিকে। দেখলেন লক্ষ্যস্থল তখনো অনেক দূরে। আরও আধা ঘণ্টা সবাই সমানতালে সাঁতার কাটলেন। তার পরও দূরত্ব কমল না। ক্লান্ত হয়ে গেলেন তাঁরা। সামনে কিংবা পেছনে যাওয়ার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। চরম দুঃসাহস প্রদর্শন করেও ব্যর্থ হলেন তাঁরা। এ ঘটনা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের বহির্নোঙ্গরে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তৃতীয় সপ্তাহের কোনো একদিন।
দুঃসাহসী এই অপারেশনের জন্য নৌকমান্ডোরা রেকি করেছিলেন। কিন্তু রেকিতে তাঁদের একটা বড় ভুল হয়। সেটা হলো দূরত্বের হিসাব। তাঁরা অনুমান করেছিলেন বহির্নোঙ্গরের দূরত্ব দেড়-দুই মাইলের বেশি হবে না। কিন্তু বাস্তবে এই দূরত্ব ছিল তিন-চারগুণেরও বেশি। জলপথের দূরত্ব হিসাব করার ব্যাপারে তাঁরা অভিজ্ঞ ছিলেন না। নৌকামান্ডোরা তাঁদের অজ্ঞাতেই বিরাট এই ভুল করে ফেলেন। রহস্যের এই নিষ্ঠুর মরীচিকা তাঁদের জন্য দুঃখময় এক মরণফাঁদ রচনা করে।
এস এম মাওলাসহ দুঃসাহসী নয়জন নৌকমান্ডো রাতে ভাটার সময় সমুদ্রের পানিতে নেমে লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় সাঁতরেও তাঁরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। দেড় ঘণ্টা ধরে একটানা সাঁতরানোর পর এতই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে তাঁরা সামনে বা পেছনে ফেরার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের অভিযান শেষ হয় ট্র্যাজিক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
পরে জোয়ারের প্রবল ধাক্কায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছান। তখন তাঁদের অনেকের জ্ঞান ছিল না। নয়জনের মধ্যে এস এম মওলাসহ চারজন মৃতপ্রায় অবস্থায় যেখানে ভেসে ওঠেন সেখানে ছিল সশস্ত্র প্রহরা। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের দেখে ফেলে। সেনারা তাঁদের আটক করে। তাঁদের ব্যাপক নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নির্যাতনে একজন (মোহাম্মদ হোসেন, বীর প্রতীক) মারা যান। এস এম মওলাসহ তিনজনকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। এখানেও চলে তাঁদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন। স্বাধীনতার পর তাঁরা ছাড়া পান।
এস এম মওলা ১৯৭১ সালে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে চলে যান। ভারতে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য এস এম মওলাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৯৮। তাঁর প্রকৃত নাম শফিকুন নূর মাওলা।
শফিকুন নূর মাওলা ১৯৮৪ সালে ঢাকায় এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেব গ্রামে। তবে তিনি বাস করতেন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়া গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে বর্তমানে এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম নূর মোহাম্মদ মাওলা। মা সুফিয়া বেগম। স্ত্রী জান্নাতুন নাহার মাওলা। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে ।
সূত্র: প্রথম আলোর ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি এস এম আক্কাছ উদ্দিন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১০।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
দুঃসাহসী এই অপারেশনের জন্য নৌকমান্ডোরা রেকি করেছিলেন। কিন্তু রেকিতে তাঁদের একটা বড় ভুল হয়। সেটা হলো দূরত্বের হিসাব। তাঁরা অনুমান করেছিলেন বহির্নোঙ্গরের দূরত্ব দেড়-দুই মাইলের বেশি হবে না। কিন্তু বাস্তবে এই দূরত্ব ছিল তিন-চারগুণেরও বেশি। জলপথের দূরত্ব হিসাব করার ব্যাপারে তাঁরা অভিজ্ঞ ছিলেন না। নৌকামান্ডোরা তাঁদের অজ্ঞাতেই বিরাট এই ভুল করে ফেলেন। রহস্যের এই নিষ্ঠুর মরীচিকা তাঁদের জন্য দুঃখময় এক মরণফাঁদ রচনা করে।
এস এম মাওলাসহ দুঃসাহসী নয়জন নৌকমান্ডো রাতে ভাটার সময় সমুদ্রের পানিতে নেমে লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় সাঁতরেও তাঁরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। দেড় ঘণ্টা ধরে একটানা সাঁতরানোর পর এতই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে তাঁরা সামনে বা পেছনে ফেরার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের অভিযান শেষ হয় ট্র্যাজিক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
পরে জোয়ারের প্রবল ধাক্কায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছান। তখন তাঁদের অনেকের জ্ঞান ছিল না। নয়জনের মধ্যে এস এম মওলাসহ চারজন মৃতপ্রায় অবস্থায় যেখানে ভেসে ওঠেন সেখানে ছিল সশস্ত্র প্রহরা। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের দেখে ফেলে। সেনারা তাঁদের আটক করে। তাঁদের ব্যাপক নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নির্যাতনে একজন (মোহাম্মদ হোসেন, বীর প্রতীক) মারা যান। এস এম মওলাসহ তিনজনকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। এখানেও চলে তাঁদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন। স্বাধীনতার পর তাঁরা ছাড়া পান।
এস এম মওলা ১৯৭১ সালে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে চলে যান। ভারতে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য এস এম মওলাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৯৮। তাঁর প্রকৃত নাম শফিকুন নূর মাওলা।
শফিকুন নূর মাওলা ১৯৮৪ সালে ঢাকায় এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেব গ্রামে। তবে তিনি বাস করতেন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়া গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে বর্তমানে এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম নূর মোহাম্মদ মাওলা। মা সুফিয়া বেগম। স্ত্রী জান্নাতুন নাহার মাওলা। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে ।
সূত্র: প্রথম আলোর ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি এস এম আক্কাছ উদ্দিন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১০।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments