ছাতিম ফুলের সুবাস by আহামেদ মুনির

কার্তিকের বিকেল স্বল্পায়ু। রোদ পড়ে আসতে না আসতেই শুরু হয় সন্ধ্যার আয়োজন। হালকা আরামদায়ক ঠান্ডা হাওয়ার কারণে কার্তিকের সন্ধ্যা বড়ই মনোরম। কোথাও কোথাও এই হাওয়া আবার সুরভিত। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ছাতিমগাছ যেন শিশি উপুড় করে সন্ধ্যার বাতাসে গন্ধ ঢেলে দিচ্ছে রোজ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ও মাদকতাময় হয়ে ওঠে এই গন্ধ।


সন্ধ্যায় ও রাতে নগরবাসী পথে চলতে-ফিরতে এখন এই গন্ধ পাচ্ছেন। দৃষ্টিসীমার চেয়ে খানিকটা উঁচু বলে বিভিন্ন সড়ক বিভাজকের ওপর (আইল্যান্ড) দাঁড়িয়ে থাকা গন্ধ বিলানো ছাতিমের ফুল সহজে চোখে পড়ে না। কেবল আশপাশের কোনো দালানে উঠলে দেখা যায় সারা গাছ ছেয়ে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা ফুল। হেমন্তের পাতা ঝরানো শুষ্ক পরিবেশকে কিছুটা হলেও প্রাণের আবেগ দিয়েছে ছাতিম ফুল। নগরের জামালখান, কাজির দেউড়ি, পাহাড়তলী, গোলপাহাড়, জাকির হোসেন সড়কসহ বেশ কিছু এলাকায় ছাতিমগাছ দেখতে পাওয়া যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শান্তা ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় বের হলেই নাকে এসে লাগে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ। মনটা যেন সুদূরে হারিয়ে যায়।’ ছোট গল্প লেখেন জাহেদ মোতালেব। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে অনেক ছাতিমগাছ আছে। এখন গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরা। গাড়িতে বা হেঁটে যাওয়ার সময় যখনই দেখি, মনে মনে গন্ধ নেই। মনটা ছাতিমফুলের মতো সাদাটে ঘিয়ে রঙের হয়ে যায়। প্রশান্তি চলে আসে।’ ঘন কালো কাণ্ডের এই গাছের সাতটি পাতা একসঙ্গে সংযুক্ত থাকে বলে এর আরেক নাম সপ্তপর্ণী। গ্রামবাংলাসহ দেশের সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। সাধারণত ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম এলস্টনিয়া স্কলারিস (alstonia scholaris)। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ ছাতিমের নরম কাঠ থেকে পেনসিল ও স্লেট তৈরি হয়। ছাতিমগাছের আরও নানা ধরনের উপকারিতার কথা জানা যায়। ছাতিমের ছাল জ্বরের উপশম করে ও রক্তচাপ কমায়। এ ছাড়া পেটের পীড়ার জন্যও ছাতিমগাছের ছাল উপকারী। কবি সমর সেন লিখেছিলেন, ‘ধুসর সন্ধ্যায় বাইরে আসি/ বাতাসে ফুলের গন্ধ, বাতাসে ফুলের গন্ধ আর কিসের হাহাকার...।’ কবিতায় ফুলের নামটি উল্লেখ নেই। হেমন্তের এই ধূসর সন্ধ্যায় বাতাসে এখন তীব্র ফুলের গন্ধ। আর সমর সেনের কবিতার পঙিক্তটিও যেন তাই খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়। কালো পিচঢালা সড়কের ওপর ঝরে পড়া ক্রিমসাদা ছাতিমের পাপড়ি যেন জানিয়ে দেয় এভাবেই ঝরে যাবে সব। ক্ষণকালের এই সৌরভ আর কদিন পরেই হারিয়ে যাবে শীতের ঠান্ডা নিশ্বাসের নিচে।

No comments

Powered by Blogger.