দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলেন বারাক ওবামা by তানিম ইশতিয়াক

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সহজেই জয়লাভ করলেন বারাক ওবামা। দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলেন দেশ পরিচালনার ও বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার। মার্কিন ভোটাররা রমনির উগ্রপন্থি অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতির সহনশীলতার পথকে উন্মুক্ত করেছে।


মার্কিন জনগণ ওবামার ওপর অনেক ভরসা করেছিল। পরিবর্তনের কথা বলেই তিনি প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। নির্বাচনের আগে আগে তার লেখা 'অডাসিটি অব হোপ' গ্রন্থটি তরুণদের মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছিল। পরিবর্তন যে খুব বেশি করতে পেরেছেন তা বলা যাবে না। তার সে সময়ের সমর্থকদের অনেকেই ওবামার প্রতি সন্তুষ্ট নয়। তবে এর বিপরীতে রিপাবলিকানের মিট রমনির প্রতিও আশ্বস্ত হতে পারেনি। তাই বলা যায়, এ জয় যতটা না ওবামার সাফল্যে তার চেয়ে বিকল্পের অভাবে। মিট রমনির করপোরেট মনোভাব, তার নীতি ও কর্মসূচিতে উগ্র ভাব জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। মধ্যপ্রাচ্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা, ভবিষ্যৎবান্ধব প্রযুক্তি, জ্বালানি শক্তির ব্যবহার, ইরানের পরমাণু প্রকল্প, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনদানের ব্যাপারে রমনি একেবারে রাখঢাকহীন। গায়ের জোর দেখানো ভাবভঙ্গি। অন্যদিকে নির্বাচনের আগমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির আঘাতের পর ওবামার তৎপরতা এবং তরুণদের আকৃষ্ট করতে ওবামার বক্তৃতা তাকে দ্বিতীয়বার এ সুযোগ এনে দিয়েছে। নির্বাচনের কঠিন বৈতরণী পার হতে পারলেও ওবামাকে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। নির্বাচন-পূর্ব বিতর্কে আমেরিকার কিছু ভেতরের খবর বেরিয়ে এসেছে। বেকারত্ব, ঋণগ্রস্ততা, স্বাস্থ্য সুবিধার সংকট, বৈষম্য, যুদ্ধব্যয়_ এসব প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। সেখানে এখন প্রায় তিন কোটি মানুষ কখনও না কখনও অনাহারে থাকে। ৪ দশমিক ৭ কোটি মানুষ চিকিৎসা বীমার বাইরে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তো আছেই।
এমতাবস্থায় তার সামনে সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে দেশের নাজুক অর্থনীতি সঠিক পথে নিয়ে আসা, ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা। তবে এর পদ্ধতি নিয়ে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারে। বিজয় ভাষণে ওবামা তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, 'আমরা আমেরিকানরা সবাই এক পরিবার, আমরা একসঙ্গে বাঁচব, একসঙ্গে মরব।' অঙ্গীকার করেছেন আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার, সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার। বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, 'রাজনৈতিক ভিন্নমত সত্ত্বেও আমাদের উদ্দেশ্য একই।' অভ্যন্তরীণ নীতি-রাজনীতির বাইরে বিশ্বশান্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ওবামার পলিসির ওপর। আফগান, পাকিস্তানসহ ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য তার বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির আশায় বিশ্ব। বুশের মতো যুদ্ধভার বহন করার মতো অবস্থায় আজকের শান্তিকামী বিশ্ব নেই। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববাসী যে রমনির তুলনায় ওবামাকে নীরব সমর্থন করেছে, তা গত মাসখানেকের আলোচনা-সমালোচনায় স্পষ্ট। দেখা যাক ওবামা কতটা কী করতে পারেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার প্রতিদান পেতে অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। শুভ কামনা ওবামার জন্য।
তানিম ইশতিয়াক : শিক্ষার্থী রাষ্ট্র্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.