জাতিসংঘ পার্কে বসাই দায় by ফারজানা আকতার

পুরোনো মলিন গেট। প্রধান ফটকের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। পার্কের হাঁটাচলার রাস্তাও কর্দমাক্ত। পুকুরটিও যেন পরিত্যক্ত পলিথিন আর আবর্জনার ভাগাড়। পাড়ে বসলেই নাকে লাগে দুর্গন্ধ। এটি নগরবাসীর বিকেলের বেড়ানোর স্থান—সিটি করপোরেশন পরিচালিত জাতিসংঘ পার্ক। কবি ফজলুল কাদের সড়কসংলগ্ন পাঁচলাইশ এলকায় এর অবস্থান।


পার্কে প্রায় প্রতিদিন হাঁটতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা রফিক হাসান। তিনি বলেন, ‘আশপাশে সব দালান আর দালান। পার্কে সবুজের মাঝে একটু নির্মল বাতাসের জন্য আসি। কিন্তু সেটাও এখন হারিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে দুর্গন্ধ। সন্ধ্যা হলে মশার উৎপাতে বসা যায় না।’
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের পূর্ব পাশের সীমানা দেয়াল ভেঙে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পশ্চিম পাশের পানির ফোয়ারাটা অচল। পুকুরের পানিতে পরিত্যক্ত ঠোঙা, পলিথিন ভাসছে। পুকুর পাড়ের স্ল্যাবগুলো উঠে আছে। দর্শনার্থীদের অনেকে এসব স্ল্যাবে হোঁচট খেয়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর অনেকটা অন্ধকারে ডুবে থাকে পার্ক। বেশির ভাগ বাতি নষ্ট। অথচ পার্ক বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে আসা শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাটার খেলার জন্য কোনো জায়গা নেই। বাসার কাছে হওয়াতে সময় পেলে এখানে নিয়ে আসি। সেখানেও এখন বিপত্তি।
বসার বেঞ্চগুলোর আশপাশে ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। ভেতরের হাঁটাচলার স্থানও কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকে।’
জান যায়, পাঁচলাইশ এলাকাটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই আশপাশের রাস্তা ও পার্কের ভেতরেও হাঁটুপানি জমে যায়। এবারের টানা বৃষ্টিতে পার্কের সীমানা দেয়াল ভেঙে যায়। এদিকে দক্ষিণ পাশে অলি খাঁ-মুরাদপুর সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ওই পাশের রাস্তা ঢালু হওয়ায় একটু বৃষ্টিতে পানি ও ময়লা পুকুরে এসে পড়ে।
পার্কের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কর্মচারী হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘পার্কের ভেতরে আমরা নিয়মিত পরিষ্কার করি। কিন্তু বেড়াতে আসা লোকজনই এখানে বসে নান খাবারদাবার খেয়ে পরিবেশ নেংরা করে। এ ছাড়া পার্ক বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও লোকজন যখন-তখন পার্কে ঢুকে পড়েন। আর আশপাশের বাসিন্দা ময়লা-আবর্জনা ফেলে পার্কের সীমানাপ্রাচীরের কাছে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ায় সব সময়।’ এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনাবিদ স্থপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করেও সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। মূল সমস্যা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের। কারণ, পার্কটি নিচু। বৃষ্টি হলে পার্কে পানি জমে যায়। পার্কে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে হবে। এ জন্য সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, পার্কটি নতুন করে সাজাবে সিটি করপোরেশন। এ জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এখানে সুইমিংপুল হবে, গাছপালা আরও বাড়িয়ে পরিচ্ছন্ন করা হবে পুকুর। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পার্কটি আরও মনোরম হবে।

No comments

Powered by Blogger.