আদালত অবমাননার অভিযোগ- সাজেদা ও মতিয়ার বিষয়ে আদেশ ১৩ নভেম্বর

জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার পৃথক দুটি অভিযোগের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল বুধবার এ-সংক্রান্ত দুটি আবেদনের শুনানি শেষে এই দিন ধার্য করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুজন সদস্য হলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও মো. শাহিনুর ইসলাম।


প্রথমে সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি হয়। তাঁর আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, “আসামিপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে এ অভিযোগ করেছে। সাজেদা চৌধুরী একজন জননেতা হিসেবে মানুষের অভিমত তুলে ধরেছেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে বলেছেন, “মানুষের কাছে যখন যাই তখন মানুষ বলে”। এটা তাঁর নিজের কথা নয়, মানুষের কথা। বিচার, বিচারক ও সাক্ষীদের নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।’
এর বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আইন প্রণেতা। তিনি কীভাবে চলমান বিচার কার্যক্রম নিয়ে এমন মন্তব্য করেন? তিনি আসামিদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।’
গত ৫ আগস্ট আসামিপক্ষ সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে। অভিযোগে বলা হয়, ২৭ জুলাই এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘একাত্তরে রাজাকারেরা আইন মেনে নির্যাতন করেনি। বসে বসে আইন কপচালে হবে না। আগেই দু-একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন কপচানি বন্ধ হবে।’
মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরীর পুরো বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। তিনি নিজের মত দেননি, বলেছিলেন, “নির্যাতিত মানুষেরা বলতে শুরু করেছেন”। কিন্তু প্রতিবেদনে এ কথা লেখা হয়নি। পত্রিকায় আংশিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, এর ওপর ভিত্তি করে করা আবেদন আমলে নেওয়া ঠিক হবে না।
পাল্টা যুক্তি দিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, সব মানুষের ওপর দিয়ে চালানো হচ্ছে। নয়া দিগন্ত পত্রিকার যে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষ জমা দিয়েছে, সেটি সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) বরাত দিয়ে ছাপানো হয়েছে। বাসসের প্রতিবেদন অনেক বেশি আস্থাশীল।
২৯ আগস্ট মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগে আসামিপক্ষ বলেছে, ৭ আগস্ট শেরপুরে মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সাফাই সাক্ষ্য দিতে যাবে, তাদের চিহ্নিত করে এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
আযাদের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য ২৬ নভেম্বর: একই ট্রাইব্যুনাল গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন পুনর্নির্ধারণ করেন। ওই দিন আসামিপক্ষের সাক্ষীদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘বাচ্চু রাজাকার’ নামে পরিচিত আযাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য ছিল। ৪ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ গঠন করা হয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন চলছে: জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল তৃতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী। সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৩টি অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবারও যুক্তি উপস্থাপন চলবে।

No comments

Powered by Blogger.