জয়তী ও তাঁর গান by মেহেদী মাসুদ

জয়তী চক্রবর্তী গান করতে বাংলাদেশে প্রথম আসেন গত বছর, পঁচিশে বৈশাখের একটি অনুষ্ঠানে। এরপর এসেছেন ছয়বার। কথা ছিল, এবার পূজার ছুটিতে ঢাকায় আসবেন ছেলে আর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে, কিন্তু হলো না। জয়তী এসেছেন একা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি গান করেছেন জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে।


এরপর গত রোববার সন্ধ্যায় শাহজাদপুরে রবীন্দ্র-কাছারিবাড়ি মিলনায়তনে। দুটি অনুষ্ঠানই যৌথভাবে আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র।
জয়তীর সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় পাওয়া গেল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, ঢাকা ক্লাবের অতিথিশালায়। তিনি ঢাকায় এসেছেন ওই দিন সকালবেলা। মাঝে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছেন। এরপর সন্ধ্যায় বসেছেন বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীদের সঙ্গে মহড়ায়। এরই ফাঁকে কিছুক্ষণ আড্ডা হবে জয়তীর সঙ্গে।
শুরুতেই বললেন, ‘মনটা ভালো নেই। পূজার পর কয়েকটা দিন ছুটি আছে। ভেবেছিলাম, সবাই মিলে ঢাকায় আসব। কিন্তু একটা বড় দুর্ঘটনা সব পরিকল্পনা ওলট-পালট করে দেয়। গত ২৬ অক্টোবর একটা বড় আকারের কাচ ভেঙে পড়ে আমার ছেলে রুদ্রেষের ডান হাতের ওপর। এরপর ওই হাতে সাড়ে চার ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করা হয়। হাতটার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশে এই দুটি অনুষ্ঠানের জন্য অনেক আগেই কথা দিয়েছিলাম। তাই না এসে উপায় ছিল না। অসুস্থ ছেলেকে ওর বাবা, আমার মা আর শাশুড়ি মায়ের কাছে রেখে এসেছি। আমার স্বামী প্রকৌশলী।’
এবার এল জয়তীর গানের প্রসঙ্গ। বললেন, ‘গানে আমার হাতেখড়ি পাঁচ বছর বয়সে, শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি খুব যত্ন নিয়ে আমাকে শিখিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি আলাদা ভালো লাগা তৈরি হয়। ভবিষ্যতে অনেক দিন ধরে এই গান গাইব—তেমন একটা আশা জন্মায়। স্নাতক করার সময় সুভাষ চৌধুরীর কাছে ভর্তি হই। সেই সময় থেকে আর কখনো মনে হয়নি, রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া বাঁচব।’
শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়, সব ধরনের গান করেন জয়তী। বললেন, ‘আমার মনে হয়, একজন শিল্পীর সব ধরনের গান গাওয়ার স্বাধীনতা আছে। আর এটা একটা চ্যালেঞ্জও। গানের তো কোনো বিভাজন হয় না। বিভিন্ন ধরনের গান করলে কণ্ঠটা অনেক সমৃদ্ধ হয়। আমি বলছি না, এটা সব সময় করতে হবে। নিজের জন্য করা যেতে পারে। খেয়াল গান করাটাও খুব জরুরি।’
আধুনিক গান গাওয়া নিয়ে জয়তী বললেন, ‘আধুনিক বাংলা গান দিয়ে আমার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আসা। আমার প্রথম অ্যালবাম ছিল মৌলিক গান নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের অ্যালবাম করব—এটা অনেক পরে ভেবেছি। আধুনিক গানের দুটি অ্যালবাম বের হওয়ার পর আমি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম করেছি। আধুনিক গান শিখেছি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে। বিমান মুখোপাধ্যায়ের কাছে শিখেছি নজরুলসংগীত। সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খেয়াল আর পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে কণ্ঠ সাধনা করেছি। নানা ধরনের গানের প্রতি আমার আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই।’
আলাপের একপর্যায়ে ধন্যবাদ জানান তারা মিউজিক চ্যানেলকে। জয়তী বললেন, ‘তারা মিউজিক চ্যানেল আমার হাতটা না ধরলে আমি পাঁচজন থেকে ৫০ জন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতাম না। ওটা ছিল একটা বড় সুযোগ। তারা মিউজিক নতুন শিল্পীদের সামনে এগিয়ে আনছে। নতুনের সঙ্গে পুরোনোর মেলবন্ধন তৈরি করছে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা কয়েকজন ভীষণ উপকৃত হয়েছি।’
কলকাতায় এ সময়ের অনেকের গান ভালো লাগে জয়তীর। তাঁদের মধ্যে আছেন ইমন, অ্যারিনা মুখোপাধ্যায় ও রুহিনী রায় চৌধুরী। বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও অদিতি মহসীনের সঙ্গে একই মঞ্চে গান করেছেন। বললেন, তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত সব জায়গায়ই যাওয়া হয়েছে জয়তীর। এবার বাংলাদেশে এসে সুযোগ পেয়ে গেলেন শাহজাদপুরে রবীন্দ্র-কাছারিবাড়ি দেখার। বললেন, ‘রবীন্দ্র-কাছারিবাড়ির পর কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়া দেখার ভীষণ ইচ্ছা আছে। আয়োজকদের সঙ্গে এর ব্যাপারে আলাপ করব।’
জাতীয় জাদুঘর আর রবীন্দ্র-কাছারিবাড়ি মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথের গান করার পরিকল্পনা জয়তীর। আগামী ২৫ ডিসেম্বর আবার ঢাকা আসবেন তিনি। সঙ্গে থাকবেন শ্রীকান্ত আচার্য। বললেন, ওই অনুষ্ঠানে শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়, আধুনিক গান করার ইচ্ছাও আছে।

No comments

Powered by Blogger.