সমকালীন চিন্তা-'কে সেই তৃতীয়, যে চলে তোমাদের সাথে?' by মীজানূর রহমান শেলী

বিশ্বখ্যাত কবি টি.এস এলিয়ট লিখেছিলেন : 'যিড় রং ঃযব ঃযরৎফ যিড় ধিষশং নবংরফব ুড়ঁ?' 'কে সেই তৃতীয় জন, যে চলে তোমাদের সাথে?' কবির রহস্যময় ভাষ্যে ওই তৃতীয় জন প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যবর্তী কোনো আরেক প্রিয়জনের পদচারণার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে কিনা তা হলফ করে বলা যায় না। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে এই জিজ্ঞাসার রয়েছে এক রাজনৈতিক দ্যোতনা।


গণতান্ত্রিক রাজনীতির নানাবিধ ঘাটতি গত প্রায় আড়াই দশক ধরেই জনজীবনকে ব্যতিব্যস্ত এমনকি বিপর্যস্ত করে রেখেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। ১৯৯০-এর দশকের গোড়াতে সংসদীয় গণতন্ত্রে পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে সঙ্গে যে মূলত দ্বিদলীয় ব্যবস্থা চালু হয়, তা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উন্নয়নে ও অর্থনৈতিক প্রগতির প্রক্রিয়াতে কাঙ্ক্ষিত গতি সঞ্চার করতে পারেনি। এ ব্যবস্থা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্মত অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাপকভাবে এবং বারংবার উচ্চারিত হয়। ২০০৭-০৮ সালে সেনা-সমর্থিত প্রলম্বিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিষয়টি রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজে চিন্তা ও আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। কিন্তু অরাজনৈতিক ওই সরকারের রাজনৈতিক সক্ষমতার ঘাটতির কারণে সেই কর্তৃপক্ষ দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে মঞ্চ থেকে অপসৃত হয়। ফলে রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের এ বিষয়ে আগ্রহ ও উৎসাহে ভাটা পড়ে। এখন আবার দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে প্রবল মতভেদ, বিবাদ এবং বিসংবাদ দেখা দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অস্থিরতা ও অনিশ্চিতি সৃষ্টি হওয়ায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার আলোচনায় সংশ্লিষ্টরা মুখর
হয়ে উঠছেন।
প্রশ্ন হলো, এই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন কেন? কেমন করেইবা বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজনীতিতে এমন একটি নয়া প্রবাহ সৃষ্টি করা সম্ভব, অথবা আদৌ সম্ভব কিনা? বস্তুত, যখন কোনো সমাজের চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান রাজনৈতিক শক্তিগুলো অপারগ ও অক্ষম বলে বিবেচিত হয়, তখনি সে সমাজে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির চাহিদা প্রবল হয় এবং তার জন্য দাবিও জোরদার হয়ে ওঠে। যে কোনো রাষ্ট্রেই রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সামাজিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলাদেশে প্রায় তিন দশক ধরেই দুটি রাজনৈতিক দল_ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দুই ভিন্ন সামাজিক শক্তির প্রবহমান স্রোতধারার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও ১৯৭৯ সাল থেকে বিশেষত, ১৯৯১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯০-এর দশকে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনরুত্থানের পর থেকে এই দুই প্রতাপশালী রাজনৈতিক শক্তি বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মূলত দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় পরিণত করে। এই দুই দলই নিজেদের কেন্দ্রীয় ঝোঁকসম্পন্ন উদারনৈতিক রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে অভিহিত করে। দুই দলেরই সমর্থক-সমর্থনের মূল শক্তি হচ্ছে সমাজের নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্য-মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণী। ১৯৯০-এর দশকের প্রথমদিকে সমাজতন্ত্র দুর্বল বা বিলুপ্ত হলে পর আওয়ামী লীগ তার অর্থনৈতিক আদর্শ সমাজতন্ত্র থেকে পরিবর্তন করে সমাজকল্যাণধর্মী হিসেবে রূপ দেয়। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি তার আনুগত্য অটল থাকে।
পক্ষান্তরে, বিএনপিও গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অটুট বিশ্বাস ঘোষণা করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ ছাড়াও দৃশ্যত, অসাম্প্র্রদায়িকতার নীতির প্রতি বিশ্বাস রেখেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে ইসলামের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেয়।
১৯৯০-এর দশকের প্রথম থেকেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়। একই সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রণনেতা শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের পত্নী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন আনতে সফল হন। দুটি দলই সময়বিশেষ সমমনা ও সমর্থক দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় এবং পালাক্রমে দু'দু'বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়।
তাই প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা বস্তুত দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত যা মনে হয়, অন্তরালের বাস্তবতা তা নয়। যে চারটি নির্বাচিত সরকার ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করে; তাদের ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টই দেখা যায়, এরা সবাই এবং প্রত্যেকেই প্রবল প্রতাপশালী ও শক্তিমান নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগের ঐতিহ্যই অনুসরণ করে চলে। কাঠামো সংসদীয়-ক্যাবিনেট পদ্ধতির হলেও এ ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নকারী জাতীয় সংসদ তুলনামূলকভাবে অকার্যকর হতে থাকে। এই ধরনের সরকারের আওতায় প্রশাসন প্রক্রিয়া দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু রূপ নেয়। জনপ্রশাসন, নিম্ন আদালত ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকারসহ যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে, সেগুলো দারুণ এক অবক্ষয়ী প্রক্রিয়ার শিকার হয়ে তাদের বলিষ্ঠতা ও জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে এক অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনীতিকীকরণের পরিকল্পিত কার্যক্রম। ১৯৮০-এর দশক থেকে যে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়, তা '৯০-এর দশকের শেষাশেষি আরও ব্যাপক হয় এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে মারাত্মক মাত্রা লাভ করে। অন্যদিকে সমাজের সর্বক্ষেত্রে বিশেষত উচ্চতর রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক জীবনে দুর্নীতি রক্তবীজের ঝাড়ের মতো বিস্তার লাভ করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অলমন্ড এবং ভার্বা যাকে নাগরিক সংস্কৃতি বা সিভিক কালচার বলে বর্ণনা করেন, আমাদের সমাজে তা বুঝি কম মাত্রায় উপস্থিত। মূল জাতীয় বিষয়গুলোতে মতৈক্যের অভাব, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মতভেদ ও বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতিকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে। অন্যদিকে গণতন্ত্রের অন্য অনেক মূলনীতির বিষয়কে অবহেলা ও উপেক্ষা করার প্রবণতা পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলে। এই উপাদানগুলো হচ্ছে_ ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ বিষয়ে সহনশীলতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ নিরসন।
এসবের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি কাঙ্ক্ষিত খাতে প্রবাহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে বৃহত্তর সমাজ হয়েছে উদ্বিগ্ন। তথাকথিত ১/১১-পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই অপারগতার পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি নতুন আদলে সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রলম্বিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তৃতীয় শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা আরও জোরেশোরে আলোচিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, ক্ষমতার পৃথক্করণ ও ভারসাম্য স্থাপন, জনপ্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কারের বিষয়টিও আলোচিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের বিষয়টি কেন্দ্রীয় গুরুত্ব পায় এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের সংস্কারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রায়ন এবং একনায়কসুলভ নেতৃত্বের অবসানের কথা বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়। কথিত আছে যে, এই সরকারের পরোক্ষ উৎসাহ এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তৃতীয় বা বিকল্প রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তব রাজনৈতিক কারণে ওই সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সরে দাঁড়ানোর পর এই প্রয়াসগুলো ঝিমিয়ে পড়ে।
নিজেদের গণতন্ত্রায়নে বড় দুটি রাজনৈতিক দল সফল হলে পর তৃতীয় শক্তির প্রয়োজনীয়তা থাকবে না_ এ কথা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু তারা যদি এমনটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলেও কি তৃতীয় শক্তির সফল আবির্ভাব সহজে সম্ভব হবে? বিদ্যমান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সমাজের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি ও প্রবাহগুলো প্রতিফলন ও রূপায়ণ করে। বাংলাদেশের দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেত্রীর রয়েছে উচ্চতম পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার। কিন্তু সেটুকুই তাদের সবকিছু নয়। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে তারা দু'জনই যে প্রবল রাজনৈতিক সংগ্রাম ও প্রক্রিয়ায় সফল ও বাস্তব অংশ নিয়েছেন তা তাদের করেছে মোহিনী 'পযধৎরংসধঃরপ নেতৃত্বগুণের অধিকারী'। এই দুই নেত্রী, আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা এবং বিএনপির খালেদা জিয়া তাদের আদর্শিক এবং রাজনৈতিক অনুসারীদের সন্তোষ অর্জনে ব্যর্থ হননি। তারা নিজ নিজ সংগঠনের ভাবাদর্শ অটুট রাখতে বিফল হননি।
তাদের ব্যর্থতা অন্যখানে। তারা নিজ নিজ দলের মধ্যে এবং বাইরে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও চর্চায় অনেকখানি বিফল হয়েছেন। ক্ষমতাসীন থাকাকালে তারা যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও চর্চায় অনেকখানি অপারগ রয়েছেন; এটাও তাদের ব্যর্থতার আর এক মাত্রা। কিন্তু এসব ব্যর্থতা এখন পর্যন্ত কোনো এক বিকল্প শক্তির সফল আত্মপ্রকাশের পরিবেশ রচনা করতে পারেনি বলেই মনে হয়।
এ কথা যে সত্য, তা প্রলম্বিত তদারকি সরকারের সময় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের নয়া দল গঠন প্রচেষ্টার পরিপূর্ণ ব্যর্থতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্য যারা অপরিচিত এবং তাদের জন্য অচেনা এ পথে অগ্রসর হয়েছেন বা হচ্ছেন; তাদের প্রয়াসের সফলতা সম্পর্কে এখনও রয়েছে বিপুল অনিশ্চিতি এবং গভীর সংশয়।
বিদ্যমান প্রধান রাজনৈতিক দল দুটির কর্মকাণ্ডে অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সফল উদ্ভবের জন্য তা যথেষ্ট নয়। এই নেতির সুযোগ নিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশের জন্য ইতিবাচক কিছু উপাদান প্রয়োজন। আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মোহিনী এবং যোগ্য ও সক্ষম নেতৃত্ব। এ ছাড়া আরও দরকার কার্যকর সংগঠন গড়ে তোলা এবং সেই সংগঠনের পক্ষে জনসমর্থন জোগাড় করার দক্ষতা ও ক্ষমতা।
আজকের বাংলাদেশে এসব শর্ত পূরণ করে নতুন ও শক্তিশালী তৃতীয় রাজনৈতিক দল বা মোর্চা গড়ে তোলা সহজ নয়। এ জন্য শুধু সক্ষম, সৎ এবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বই যথেষ্ট নয়; তার সঙ্গে দরকার সেই দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিশ্রমী প্রচেষ্টা, যা ওই শক্তিকে বিদ্যমান বড় দলগুলোর সফল প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করতে পারে। এই মুহূর্তে যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা অথবা তাদের নিষ্ঠাবান সহচর-অনুসারীদের এক মঞ্চে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অভাবের কারণেই বারবার তৃতীয় ও বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে পড়ছে।
তাহলে কি বাংলাদেশে বিদ্যমান সাংঘর্ষিক দ্বিদলীয় ব্যবস্থা আরও বহু দিন দেশ ও জনগণকে পণবন্দি করে রাখবে? নাকি আগের অনেকবারের মতো অরাজনৈতিক শক্তি ও কোনো কোনো গোষ্ঠী ও ব্যক্তির সমাহারে গড়ে ওঠা মোর্চা নতুনরূপে আবির্ভূত হবে? এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ভবিষ্যৎই দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো যদি দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ এখন থেকেই নেওয়া শুরু করেন, তাহলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি রোধ করা অসম্ভব হবে না। এই জাতীয় পদক্ষেপের জন্য যা প্রয়োজন, তা হলো ব্যাপক ও টেকসই সহনশীলতার মাধ্যমে দুই বড় দলের একাত্ম ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ড। কিন্তু সহনশীলতার যে ঘাটতি আমাদের রাজনীতিকে অস্থির ও স্থিতিহীন করে রেখেছে, তা কি নিজ উদ্যোগে প্রতাপশালী রাজনীতিবিদরা পূরণ করতে পারবেন? এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে তাদেরই কাছে। তারা দ্রুত উদ্যোগী হবেন_ এটাই জনসাধারণের আশা ও আকুতি। নেতৃবর্গকে মনে রাখতে হবে_ 'সময় গেলে সাধন হবে না।'

ড. মীজানূর রহমান শেলী : সমাজবিজ্ঞানী সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ বাংলাদেশ (সিডিআরবি)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং 'এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স'-এর সম্পাদক
 

No comments

Powered by Blogger.